somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি

১৬ ই মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রমনীকান্ত, পেশায় চৌকিদার। রাতভর হুইসেল দিয়ে দিয়ে চোর পাহারা দেওয়া তার কাজ। কিন্তু তার মনে আছে বিশেষ শখ। কবি হবে; কবিতা লিখবে; ভরা মজলিশে স্বরোচিত কবিতা পড়বে; সবাই বলবে সাব্বাস রমনী! কবিতা লিখেছ বটে! আনন্দে রমনীর চোখ ঝলমল করে ওঠে। যে করেই হোক কবি তাকে হতেই হবে।
শুরু হলো মার্কেট সার্ভে। কোথায় গেলে কবি হবার সহজতম পন্থা মেলে। খুঁজতে খুঁজতে মিলল “কবি বাসর”- প্রগতিশীল কবিদের আসর! এখানে নিয়মিত কবিতা পাঠ চলে। কবিতা লেখা-আলোচনা-আবৃত্তিতে এখানের সদস্যরা সব্যসাচী। সাত-পাঁচ ভেবে সময় নষ্ট না করে ভর্তি হয়ে গেল রমনী। কবি তো সে হয়েই গেছে। উৎফুল্ল মনে নাচতে নাচতে বাড়ি এসে স্ত্রীকে ডেকে বললেন- এই শুনছ, আজ থেকে আমাকে কবি বলে ডাকবে। আর যা আছে হালকা-ভারী কিছু দাও, খেয়ে বেরিয়ে পড়ি। ক্লাসটা করেই ডিউটিতে যাব। স্ত্রী মনে মনে ভাবে- মিনসেরে আবার কোন ভীমরতিতে ধরল।
আড্ডায় নতুন কবিকে সাদরে গ্রহণ করা হলো। রমনীর তো চক্ষুচড়কগাছ; এভাবে নতুনকে বরণ করা যায়! চৌকিদারী চিন্তায় ভেবেই আত§হারা রমনী। যাহোক, পরিচিতি পর্ব শেষে একটা ছোটোখাটো ক্লাস নিলেন কবি বাসরের এক সিনিয়র কবি। নিয়ম অনুসারে দেওয়া হলো টাস্ক। খুব জটিল কোন টাস্ক নয়। জাস্ট দু-চার লাইনের সংক্ষিপ্ত কবিতা আকারের কিছু লেখা আরকি। কবি রমনী লিখলেন-
কি সুন্দর জোছনা রাতি
আকাশে উড়িছে একপাল
বুনো হাতি।
কবিতার বহর দেখে বর্ষীয়ান কবিদের গা গরম হলো! কিন্তু যেহেতু নতুন কবি তাই সাত খুন মাফ; বরং বাহবা মিলল। এভাবে চলতে থাকে রমনীর কবি প্রতিভার চর্চা। রমনীকান্ত থেকে হলেন কান্ত; কবি কান্ত! বাইরের কেউ জানুক আর না জানুক বৌ তো জানে যে রমনী নামজাদা কবি। আহ্লাদিত হয়। মনে তার ভীষণ শিহরণ।
কবি বাসরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অন্তর্কলহ। নেতৃত্বের দ্বন্ধ¦ আর যাকে তাকে সদস্য করা এবং পরিচালনা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরেই দ্বন্ধ চলে আসছে। কিন্তু রমনীর জন্য ঘটল মনিকাঞ্চন যোগ। সিনিয়র কবিরা বাসর ছেড়ে চলে গেলেন। গড়লেন নতুন আড্ডা। কবি বাসরের সম্বল বলতে রয়ে গেলেন রমনীর মতো কতকগুলো হাতুড়ে কবি। সবার মধ্যে আবার সে বয়সে বড়; তো তাকেই করা হোল দলের নেতা। আহ্লাদে আটখানা রমনী কবি বাসরকে ঢেলে সাজালেন। নেতা কবির কৃপায় অন্যান্য চৌকিদার এবং কিছু কিছু ছিঁচকে চোরদেরও স্থান মিলল কবি বাসরে। নিয়মিত আড্ডা জমে। সবাই এখন কবিতা লেখে; পাঠ করে, মন্তব্য করে। মহা আনন্দে চলতে লাগল কবিদের দিন।
এভাবে দিনের পর মাস, মাসের পর বছর কেটে গেল। কবিতা চর্চার নামে ঢুকে গেল নানাবিধ অপচর্চা। সবাই কবিতার পূজারী না হয়ে ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন শিবের চ্যালা। কিছু কিছু চ্যালা মহোদয় দেখলেন বাসর থেকে নেবার কিছু নাই। তাই তারা বসলেন নেতা কবির সাথে। ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব এলো। কিন্তু ওসবের প্রতি নেতা কবি আস্তা পেলেন না। তো সব বাদ।
ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল। সদস্যরা ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নামলনা বটে, মনে মনে জোট বাঁধল যে করেই হোক রমনীর নেতাগিরি ছুটাতে হবে। বসল মিটিং। বলা হলো এডহক কমিটি দিয়ে আর কতদিন চলবে। নতুন কমিটি গঠন করা হোক। আরেক কবি প্রস্তাব করলেন- নতুনদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তাদের থেকে একজরকে নেতা করা হোক। সবার মতামত নিয়ে শেষে কবি সাহেব লম্বাচওড়া এক ওয়াজ করলেন। ওয়াজের ধাক্কায় অনেকের বিশেষ করে চ্যালাচামু-ারা সমস্বরে দাবী তুলল- কান্তদা ছাড়া কিভাবে চলবে এই বাসর। এই গুরুভার তাই রমনীর ওপরই রয়ে গেল। মনোঃকষ্টে সংস্কারপন্থীরা অন্যপথ ধরলেন। দলে ভেড়াতে লাগলেন অন্যদের। কিন্তু শিবের চ্যালা কবিগণ কবিতার মাথামু-ু না বুঝলেও এটা বোঝে যে রমনীর পেছনে থাকলে আর কিছু হোক বা না হোক শিবের প্রসাদ নিয়মিত পাওয়া যাবে। তাই জোরেসোরে রমনীর সাফাই গেয়ে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিল।
কবি সাহেব এবার নতুন পন্থা নিলেন। চৌকিদারীতে সময় কমিয়ে কবি বাসরে আরো সময় বাড়িয়ে দিল। সমমনাদের জোড়ার করতে সে দিনের অনেকটা সময় ব্যয় করে। একে একে আড্ডা ভরে গেল শিবের চ্যালায়। সংস্কারপন্থীরা অনেক ভেবে দেখল- ব্যক্তিত্ব বলে অন্তত একটা বিষয় আছে। কবিতা চর্চার জন্য আর যাই হোক- ব্যক্তিত্বকে তো জলাঞ্জলী দিতে পারি না। হাল ছেড়ে দিল ওরা।
মহা আনন্দে চলতে লাগল কবি বাসরের দিন চলা। দিনকে দিন আরো উন্নতি সাধিত হলো কবি বাসরের। নিন্দুকের মুখে পড়ল ছাই। এখন ওরা বড়ো বড়ো অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সেখানে চলে আসে দূর দূরান্ত হতে আ-ধূ-নি-ক, প্রগতিশীল কবি গণ...
রমনীকান্ত আজ শুধু কবি নন। নেতা কবি। আনন্দে আত§হারা নেতা কবি এখন ঝোলাঘাড়ে-খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে ঘুরে বেড়ায়। হাজার হোক কবি বলে কথা। আ-ধূ-নি-ক কবি!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×