ফাঁকা একটি স্থানে হাঁটু গেঁড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে এক নারীকে। পুরো শরীর একটি সাদা চাদর দিয়ে বাঁধা। একটু পরেই তালেবান এক জঙ্গি বন্দুক হাতে এগিয়ে গেলেন। একে একে ১৩টি গুলি করলেন। তীব্র যন্ত্রণায় কুচকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন ওই নারী। এভাবেই ব্যভিচারের অভিযোগে আফগানিস্তানে নাজিবা নামের এক নারীকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো। উৎসুক জনতা তখন হর্ষধ্বনি দিয়ে এ জন্য উত্সাহ জোগালেন।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পার্শ্ববর্তী পারওয়ার প্রদেশে এ নারকীয় ঘটনাটি ঘটে। ওই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিওচিত্রও ধারণ করা হয়।
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ওই নারীকে শাল দিয়ে বেঁধে ধুলোবালির মধ্যে হাঁটু গেঁড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পাশেই গ্রামবাসী দাঁড়িয়ে এ ঘটনা দেখছে। কিছুক্ষণ পরে পাগড়ি পরা এক ব্যক্তি ওই নারীর কাছে গিয়ে স্বয়ংক্রিয় একটি বন্দুক দিয়ে মাথায় ১৩টি গুলি করেন। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই নারী। পরে তাঁর মরদেহ পাশে ফেলে রাখা হয়। এ সময় আশপাশের শ দেড়েক লোক উল্লাস প্রকাশ করে। অনেকে বলে ওঠেন, ‘দীর্ঘজীবী হও আফগান মুজাহিদরা!’
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, বন্দুকধারী ব্যক্তি ওই নারীর কাছাকাছি হওয়ামাত্র আরেক ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘আল্লাহ আমাদের ব্যভিচার থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। কেননা, এটা ভুল পথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাঁকে ক্ষমা করতে পারি না। কারণ, ব্যভিচারের শাস্তি হবে এটা আল্লাহরই নির্দেশ।’
প্রাদেশিক গভর্নর বাসির সালাঙ্গি বলেন, গত শনিবার ভিডিও রেকর্ডটি তাঁদের হাতে আসে। তবে ঘটনাটি ঘটেছে এক সপ্তাহ আগে। প্রদেশের শিনওয়ারি জেলার কিমচক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর ওই এলাকায় সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির খোঁজ করা হচ্ছে। তবে ওই হত্যাকারীসহ তালেবানরা ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
ঘটনাটি আফগান কর্মকর্তাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ১১ বছর আগে সেই শাসনামলে নারীদের ওপর নির্যাতনের কথা মনে করে তাঁরা উদ্বিগ্ন। সালাঙ্গি রয়টার্সকে বলেন, ‘ভিডিওটি দেখামাত্র আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে...ওই নারী অপরাধ করেননি...অপরাধ করেছে তালেবান।’ এ ব্যাপারে তালেবানের পক্ষ থেকে কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাসির সালাঙ্গির মুখপাত্র রোশনা খালিদ বলেন, ২২ বছর বয়সী নাজিবা কোনো অপরাধ করেননি। তালেবান এক সদস্যের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু আরেক তালেবান কমান্ডার তাঁর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন নাজিবাকে। এর ঠিক এক ঘণ্টা পরেই তালেবানরা সিদ্ধান্ত নেয় যে নাজিবা অপরাধী এবং তাঁর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। তাই জনসমক্ষে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা বলছে, গুলি করা ওই ব্যক্তি নাজিবার স্বামী। কিন্তু রোশনা খালিদ বলছেন, তিনি আসলে নাজিবার স্বামীর আত্মীয়।
আফগান সরকার এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা অনৈসলামিক এবং অমানবিক ঘটনা।’ অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন সরকার।
তালেবানের পতনের পর থেকে আফগান নারীরা শিক্ষা, ভোট ও কাজের অধিকার ফিরে পেতে শুরু করেছেন। কিন্তু এক লাখ ৩০ হাজার বিদেশি সেনা এবং তিন লাখ আফগান সেনা ও পুলিশের উপস্থিতিতেও তালেবান মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করায় উদ্বেগটা বেড়েই চলেছে।
View this link