
হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি; রীতিনীতি আর আচার-আচরণের মধ্যে বিশেষ একটি স্থান দখল করে থাকলেও বিজ্ঞানের উৎকর্ষের কারণে খড়ম এখন বিলুপ্তপ্রায়। গ্রামাঞ্চলেও কালেভদ্রে এখন খড়মের দেখা মেলে! বয়স্ক কেউ কেউ খড়ম ছাড়া অন্য জুতো-স্যান্ডেল ব্যবহার করে স্বস্তি পান না। ওই সব মানুষের জন্য এবং এই প্রজন্মের কাছে খড়মের পরিচয় তুলে ধরতে; খড়মকে জনপ্রিয় করতে, খড়ম বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন আবদুল মতলেব। খড়ম বিক্রির জন্য তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হাটবাজারে বিক্রি করছেন খড়ম। তিনি জানান, এই প্রজন্মের অনেকে খড়ম দেখার জন্য ভিড়ও করে। কেউ কেউ কেনেন। আবার বয়স্কদের অনেকেই খড়ম হাতে নিয়ে পুরনো দিনের স্মৃতি হাতড়ে ফিরছেন। আবদুল মতলেবের (৩৮) বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা গ্রামে। যশোর কালেক্টরেট চত্বরে সোমবার খড়মের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন আবদুল মতলেব। তিনি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের আটগিলারি গ্রামের গোলাম মোস্তফা খড়মের কারিগর। তিনি শত শত জোড়া খড়ম তৈরি করেন। কাঁঠাল কাঠ আর গাড়ির টায়ার দিয়ে খড়ম তৈরি করা হয়। প্রতি জোড়া খড়ম মোস্তফার কাছ থেকে মতলেব ১৫ টাকায় কিনে নিয়ে আসেন। আর দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে সেই খড়ম বিক্রি করেন প্রতি জোড়া ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়। মতলেব বলেন, 'রাজশাহী, পাবনা, ঝিনাইদহ ঘুরে এখন যশোরে খড়ম বিক্রি করছি। প্রতিদিন গড়ে ১২০ জোড়া খড়ম বিক্রি হয়।' তিনি আরো জানান, এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার চলে খড়ম বিক্রির টাকাতেই। খড়ম কেনার সময় কথা হয় যশোর সদরের সুতিঘাটা গ্রামের আতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'খড়মের গল্প শুনেছি। কিন্তু কোনো দিন খড়ম পায়ে দেওয়া তো দূরের কথা, চোখেও দেখিনি। এ কারণেই খড়ম কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।' খড়ম কেনার সময় আরো কথা হয় চাঁচড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আমির আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, 'স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে আমি খড়ম পায়ে দিয়েছি। ব্রিটিশের সময় আমার বাপ-দাদা খড়ম পায়ে দিয়েছেন। অতীতে পীর আউলিয়ারা খড়ম পায়ে দিয়ে নদী পার হয়েছেন এমন গল্পও শুনেছি। নতুন প্রজন্মের সন্তানদের খড়ম সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। খড়ম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দাম কম, টেকেও বেশি।'

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




