আরিফ বড় সুখে আছে। ওর বাচ্চা হয়েছে। এসেছিলো। আমি তখন আমার ঘরে। মামণি বুয়ার কাপড় ধোয়ার তদারকিতে ব্যস্ত। তাই আমরা একা ।
ওর বাচ্চাটা বেবি হোলস্টারে জড়ানো। কোলে নিতে চাইলে বললো, " একবার খুললে আর বাঁধতে পারবো না, তার চেয়ে আমার হাতেই দেখো।" আমি মাথা ঝুঁকে চুমু খাই দেবশিশুর গালে। মাথা উঠাতে পারি না!
আরিফ ডানহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে কঠিন আলিঙ্গনে। ওর গাল আমার গালে। ওর ঠোঁট আমার চুলের সমাধিতে খুঁজছে জীবনের আস্বাদ। বন্ধ চোখেই টের পাই, আগুনে অশ্রু ঝরে পড়ছে আমার বুকের উপর। " ফারিয়া, এই বাচ্চাটা আমাদের হতে পারত!" কোন ফোটাটা আমার আর কোনটা আরিফের , পার্থক্য করতে পারি না!
ফয়সল, বাঁচাও। আল্লাহর দোহাই লাগে, আমাকে হয় মেরে ফেলো, খুন করো, না হলে বাঁচাও!
ভয়াবহ দিন গেল একটা । রাগে, দুঃখে , শোকে পাগল হয়ে উঠি আমি। মৃত্যু চাই একটা , অবসান চাই আমার।
আই ওয়াক অন, অন দিস ভ্যালি অফ ডেথ! আরিফ তো আমাকে মেরেই ফেলেছে! আমার লাশটাকে ফয়সল কবর দিতে পারত ওর নিজের বুকে। নাহ! সেখানেও স্থান হলো না, প্রভু? আমি কি এতই হতভাগ্য?
ফয়সলকে বুঝতে পারিনি। ওর দোষ নয়। যে এস, এম,এস গুলো আরিফকে পাঠাতে পারিনি ওর সংসার, ওর সন্তান, ওর লক্ষীমন্ত বউটার মুখ চেয়ে- যে কথা গুলো আরিফকে বলতে পারিনি, পাগলামির চূড়ান্ত করে , সে গুলোকে পাঠিয়েছি ফয়সলকে! কেন? জানি না।
কষ্ট কোন যুক্তি মানে না। দুঃখ পেলে আমি সিগারেট পোড়াতে পারি না! হুইস্কি টানতে পারি না। কোকেন-হেরোইনে ডুবতে পারি না। সেই জন্যই কি ধ্বংস করে দিলাম ফয়সলের সাথে আমার বন্ধুত্বকে? কিন্তু সেটা তো আমি চাইনি! তাহলে কেন করলাম? কেন? কেন? নিজেকে ধ্বংস করার এই খেলা আমি কেন খেলছি?
আগুন তো লেগেছে আমার বুকে! অথচ পুড়ে গেলো নির্দোষ ফয়সল। কষ্ট পেলে মানুষ তার সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে দামী, সবচেয়ে পবিত্র সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়!
শুক্রবার আরিফকে দেখার পর থেকে আমার ২য় মৃত্যু শুরু হয়েছে। ভাগ্যকে আমি মানতে চাই না কখনো। বার বার তার বিপরীতে কাজ করি আর পুড়ে যায় যত সুন্দর! আমার ভিতর এখন পরস্পর বিরোধী দুটো সত্ত্বা কাজ করছে!
একটা গড়ছে ফারিয়াকে দুনিয়ার মাপকাঠিতে সফল দেখানোর জন্য।
আরেকটা সত্ত্বা খুব যত্ন করে আমাকে প্রস্তুত করছে মৃত্যুর জন্য।
আমি এমন কাউকে ভালবাসতে চাই না যার জন্য আমার আবার বাঁচতে ইচ্ছা হবে। বড় যত্ন করে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাই নিজেকে মৃত্যুর দিকে! সফল মানুষের মুখোশটা এত নিঁখুত ভাবে পরে থাকি যে বাবা -মাও ধোকা খেয়ে যায়। এত দিনের দীর্ঘ একটা পরিকল্পনা স্রেফ একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে বলে ভেস্তে যাবে?
পাগল? আমি তাই হতে দেব নাকি!!! ফয়সলকে তাই কৌশলে বিদায় করে দিল ফারিয়ার দ্বিতীয় সত্ত্বা! আরিফ বড় সুখে আছে। আমি বেঁচে থাকলে যদি কোন দুর্বল মুহূর্তে আমার অভিশাপ লাগে আরিফের সংসারে? আরিফ এখনও আমাকে ভালবাসে। আমি পারবো না এই ভয়ংকর সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বেঁচে থাকতে। পালাতে হবে। যে ভাবেই হোক!!
না না করেও পারলাম না। ফয়সলের সাথে যে অন্যায় আচরন করেছি, তার কোন ক্ষমা হয় না! তিনকে পাঁচ আর পাঁচকে তিন বানিয়ে মিথ্যে দিয়ে আড়াল করেছি সবটুকু। ভুল বুঝাবুঝি? সবই নাটক। তোমাকে আসলে ভালো লাগে।প্রচন্ড ভালো লাগে। বছরের পর বছর যেই মেয়েটার ছবি মোবাইলে সেভ করে রেখেছ, হীরক খন্ডের মত একটা অপরিবর্তনীয় প্রেম আমার বুকেও সমাধি হয়ে আছে।
তোমার আমার কষ্টে এত মিল? ঘর ফাটিয়ে হাসতে ইচ্ছা করছে। আজকে থেকে যুগ আগে আরিফ না এসে, সাগর কন্যা না এসে, যদি তুমি আমি কাছাকাছি আসতাম? আমরা দু'জন কি হতাম জগতের সবচে'পারফেক্ট কাপল?
না মনে হয়। আল্লাহ কখনো পারফেক্ট সুখ দেয় না। কোথাও না কোথাও থাকে আকাশ সমান শূণ্যতা, মহাসাগরের সমান গভীর ক্ষত!!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



