সকাল নয়টায় বেরসিক মোবাইলটা ভয়ানক চ্যাচামেচি শুরু করে দিলো । ঘুম আমার কে এম হাসানের মতো বিব্রত হয়ে দু'চোখে পায়চারি করতে শুরু করলে আমি বাধ্য হলাম ফোনটা ধরতে । বন্ধ চোখে নাম্বারটা তো দেখিনি , ধরার পর শুনি " ময়ূরকন্ঠী রাতের নীলে . . " শোনাচ্ছে কেউ ! কোন কথা নাই । আমি মহাবিরক্ত ! একটু পর আবার । এবার ৪/৫ বছরের একটা ছেলে , পাশে বড় কারো শেখানো কথা গুলো বলছে । বাহ! কৈশোরকালের উৎপাত জৈবন কালে আবার শুরু হইলো । ধুর!
দুপুরে আকিকার দাওয়াত ! আমার খালাত ভাইয়ের মেয়ে , অনেক কষ্ট এবং সাধনার ধন! ভাই থাকে লন্ডনে । ভাবি যখন মাত্র ২৫ বছর বয়সে ২য় সন্তানের মা হতে গিয়ে শুনলেন তার ডিম্বাশয় দুটো শুকিয়ে গেছে , যেটা সাধারনত মেনোপজ এর পরে, ৫০/৬০ বছর বয়সে ঘটে , এবং তিনি আর কোনদিনই মা হতে পারবেন না, খুব সহজ ছিল না , সেটা মেনে নেওয়া!
মেয়েদের শরীরে একটি জরায়ু , দুটি ডিম্বাশয় নিয়ে বাচচা জন্মদানের তন্ত্র তৈরী হয়। প্রতিমাসে দুটি ডিম্বাশয়ের যে কোন একটি থেকে একটি ডিম্বকোষ পূর্ণতা লাভ করে ডিম্বনালীতে এসে অপেক্ষা করে একটি শুক্রানুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট বা ভ্রুন সৃষ্টির জন্য । ডিম্বাশয়ের কোষ গুলো যদি শুকিয়ে যায় , বা বৃদ্ধ হয়ে পড়ে , তাহলে আর সফল ভাবে গর্ভধারন সম্ভব না । বাকি সবই যদি ঠিক থাকে , মেয়েটির প্রজনন তন্ত্র এবং পুরুষটির ও , তাহলে গর্ভধারনের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে "ডোনার" ডিম্বাশয়ের । মানে হলো কোন সুস্থ দেহের নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম নিয়ে কৃত্রিম ভাবে নিষিক্ত করে [ টেস্ট টিউব বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বলে] সেই জাইগোটটিকে স্থাপন করা হয় সন্তানকামী মায়ের জরায়ুতে ।
ভাবীর নিজের ডিম্বাশয় যেহেতু কাজ করছে না, আমি প্রস্তাব দিলাম, আমার থেকে নেওয়ার। ঘটনা অবশ্য সোজা নয় । গোনাডোট্রপিন নামক হরমোন নিতে হবে শরীরে মাসের পর মাস। স্বাভাবিক ভাবে মাসে একটা ডিম হয়, কিন্তু কৃত্রিম নিষিক্ত করনে লাগে কয়েকটা ডিম। তাই হরমোন দিয়ে অতিরিক্ত কয়েকটা ডিম একসংগে এক অর্থে ফোটানো হয়, নেওয়ার জন্য।
ফ্যাকড়াটা হলো , যেহেতু জোর করে ফোটানো , তাই এর বিপদজনক সাইড ইফেক্ট আছে । ডিম্বাশয়ে অস্বাভাবিক গ্রোথ হয়ে সিস্ট বা টিউমার হওয়া , মাসিক বা মেন্সট্রুয়েশনে ওলোট পালোট হয়ে পরে বাচ্চা হওয়ার সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি। যেহেতু আমি বিয়ে করিনি, আমার এখনো কোন বাচচা হয়নি, ভাবী আমাকে এই রিস্ক নিতে দিলেন না কিছুতেই । আমার বিবাহিত বোন দিতে চাইলো, কিন্তু, ও লন্ডন গিয়ে মাসের পর মাস থাকতে পারবে না। শেষে আমি আবার বললাম, যা থাকে কপালে, পি এইচ ডি করতে লন্ডন আসতে পারি, তোমরা রেডি থেকো । আমি রিস্ক ফিস্ক যা নেবার নিয়েই করবো !
আশ্চর্য ঘটনা হলো , আমি লন্ডন যাওয়ার তোড়জোড় করছি, এর মাঝে খবর পেলাম, ভাবী প্রেগন্যান্ট ! বহু চিকিৎসা, বহু ত্যাগ, বহু সাধনার সম্পদ , সেই সন্তানের আজ আকিকা! আমি খুবই খুশি।
ঢাকা
২০০৬
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



