somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠাভ্যাসের নস্টালজিয়া...কিম্বা নস্টালজিক পাঠাভ্যাস

২৭ শে নভেম্বর, ২০০৬ রাত ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন আগে আমি বলছিলাম কোন গাইডবই দিয়া আমার জীবন চালাইতে আমি অনিচ্ছুক। আমার এই অনিচ্ছার ভিত্তি ছিলো আমার চারপাশের প্রকৃতি। আমার চারপাশের সবকিছু পালটায়, চারপাশের অন্যান্য উপকরণের বা প্রাণের দ্্বান্দ্বিক সাপেক্ষে। যখন এই সিদ্ধান্ত নিছিলাম তখন আমি দ্্বন্দ্ব বুঝতাম না, কিন্তু তা'ও একটা পরিবর্তনের সুক্ষ খেলা আমার বোধে এসে নাড়া দিতো। আমি সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া নিতাম...আজো নেই...সকল ইন্দ্রিয়ের সম্মিলনে। আর তাই নিজের জীবনটারেও দ্্বান্দ্বিকতায় ভাবি! কোন উপরের সুপারিশে সময়ের চলন থাকেনা।

আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যাই, বই পড়ি, আড্ডা দেই, সাঈদ স্যারের গল্প শুনি, মুগ্ধ হই। লাইব্রেরীতে অনেক বইয়ের মাঝে সময় কাটানোর অনুভূতিটা অনেক অন্যরম। অনেক নির্ভরতা। তো সেইখানেই আমার পরিচয় প্রথম দ্্বন্দ্বের সাথে, ভাবের সাথে...বস্তুর সাথে। আমি প্রথম পড়ছিলাম রাহুল সাংকৃত্যায়ন। তখন অনেক কিছুই বুঝিনাই কিন্তু আমার যে অবিশ্বাসী চেতনা, তার সাথে কিরম জানি বোধের মিল ছিলো...আর তাই মনে হইলো আরো খানিক বুঝি...বস্তুর ধর্ম নিয়া যদি আরেকটু উপলব্ধি পাই...

তারপর আবার যে কে সেই...সব পড়ি। মাসুদ রানা, কিশোর থ্রিলার, সেবা ওয়েস্টার্ন, হেনরী মিলার (!)...রবি ঠাকুর, জীবনানন্দ...বঙ্কিম, শরৎ চন্দ্র...রোল্যান্ড ডাল, হ্যারিয়েট বীচার, শেকপীয়ারের এব্রিজ ভার্সন গুলি...চার্বাক দর্শন...এইরম কতো বই! মনে করতে গিয়া দেখি অনেক কিছুই মনে নাই। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার শেষে আমি হঠাৎ পরিচিত হইলাম মহল্লার এক বড় ভাইয়ের সাথে। তপন বড়ুয়া। সে একটা লিটল ম্যাগাজিন বাইর করতো। গান্ডীব। এই ম্যাগাজিনে তখন লিখতো সাজ্জাদ শরীফ, শান্তনু চৌধুরী, কাজল শাহনেওয়াজ, ব্রাত্য রাইসু...আর প্রিয় কবি শোয়েব সাদাব...আমি তপনদার সাথে পিজি হাসপাতালের পেছনে একটা বট গাছের তলায় আর শাহবাগের সিলভানায় সপ্তাহে দুই একদিন যাইতাম। তারা কতো বইয়ের কথা কইতো! আমি তার অধিকাংশই পড়ি নাই। মেজাজ যাইতো খারাপ হইয়া! আমি ঐসব বইয়ের নাম মনে রাইখা জমানো টাকা আর মায়রে জোরাজোরি কইরা পাওয়া টাকা দিয়া কিনতাম বই, তপন দা কিছু দিতেন। সেইখানেই আমি শুনি পিটার বিকসেল, মিলান কুন্ডেরা, বোর্হেস, বালজাক, মার্কেজের নাম...রাম বসু, উৎপল কুমার বসু, বিনয় মজুমদারের কবিতা পড়তেন তারা। আমি মুগ্ধ হইয়া শুনতাম। মনে হইতো যদি এরম লিখতে পারতাম!

কলেজ পাশ দেওনের পর আবার একটা অবসরের সময়। তখন আবার শাহবাগ যাওনের শুরু। আড্ডা কথন একটু পালটাইছে। আজিজ মার্কেটের কঙ্কালটা তখন তৈরী হইছে কেবল। নীচের তলায় একটা দোকান পাঠক সমাবেশ। আমি যাই সেইখানে। আদিত্যরে চিনতাম আগের থেইকা। আরো পরিচয় হইলো তাজুল, শামীম কবির, জুয়েল মাজহার, আশিক মোস্তফা, নভেরা, বায়েজীদ মাহবুব, ব্রাত্য রাইসু এগো লগে। এইটা নব্বই সালের প্রথম ভাগ। এগো লগে পরিচয়ের পর আমরা তখনকার জনপ্রিয় প্রপঞ্চ উত্তরাধুনিকতা লইয়া গ্যাজাইতাম। টেরী ঈগলটন, লিওটার্ড, সুসান সনট্যাগ, রোলা বার্থগো লইয়া অনেক বাতচিত করতাম। বাতচিত করতে গিয়া বিজু'র ঐখানেই বই নিয়া পইড়া ফেলতাম। পরিচয় হইছিলো মাশরুর আরেফীনের সাথে। তারও বই সংগ্রহ অনেক ভালো ছিলো। কিন্তু উত্তরাধুনিকতা লইয়া পড়তে গিয়া আমার হঠাৎ একসময় মনে হইলো মডার্নিজমের কিছু চিরায়ত পড়নটা দরকার। আর তাই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চিরায়ত গুলি আবার পড়তে শুরু করলাম। ভলতেয়ার, রুশো, ড্যানিয়েল ডিফো, লুই ক্যারোল...। সাথে আমার ছোট ফুফা যিনি একদা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারী করছেন, তিনি কইলেন মার্ক্সিজম পড়ো। তার থেইকা তিনটা বই পাইছিলাম আমি, বাটর্্রান্ড রাসেলের হিস্টোরী অফ ওয়েস্টার্ন ফিলোসফি, আফানাসিয়েভ-এর মার্ক্সিস্ট ফিলোসফি, আর মার্ক্স-এঙ্গেলসের একটা ভলিউম যেইটাতে মেনিফেস্টো, ফু্যয়ারবাখ থিসিস, ডায়ালেক্টিক অফ নেচার আর স্টেট, ফ্যামিলি এন্ড অরিজিন অফ প্রাইভেট প্রোপার্টি-এর মতোন বই গুলি সংকলিত ছিলো। রাশিয়ান প্রকাশনায় ইংরেজী পড়াটা আমার কাছে বাংলার চাইতে সহজ মনে হইতো বইলা আমি রীতিমতো উত্তেজিত ছিলাম ঐ বইগুলি পাইয়া।

আফানাসিয়েভ আমার জীবনে একদম দেবদূতের মতোন আসলেন। তার হাত ধইরাই আমি প্রথম দ্্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের পাঠশালায় আসি। এতো সুন্দর কইরা এতো জটিল একটা দর্শনরে বুঝাইয়া দেওন যায় সেইটা আমি হয়তো কোনদিন জানতেও পারতাম না, আফানাসিয়েভ না থাকলে। সেই বই পইড়া আমি একটা দর্শন আসলে কেমনে মানব ইতিহাসরে ব্যখ্যা করে সেইটা বুঝতে শিখছিলাম। সব তত্ত্বরে উদাহরণ হাজির কইরা অনেক সহজ কইরা দিছেন উনি। তো দ্্বন্দ্ব মূলক বস্তুবাদের বিষয় আসলে আমি একটু আবেগী হইয়া পড়ি এই কারনে।

দ্্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের প্রধান তিন সূত্রের কথা আফানাসিয়েভ কইছিলেন একদম সোভিয়েত বিপ্লবের ইতিহাস বিশ্লেষণ কইরা। 1. পরিমানগত পরিবর্তনের সাথে গুণগত পরিবর্তন আবার ভাইস ভার্সা।2. বিপরীতের ঐক্য আর 3, নেগেশন অফ নেগেশন। এই তিন সূত্রেই নিহিত বস্তুর সকল পরিবর্তন। আমি হয়তো এই বিষয়ে খুব শিগগিরী এই বিষয়ে বিসদ লিখতে পারুম কোন কালে, সেই আশা রাখি। ইদানিং আসলেই টাইম পাইতাছি কম। আর সাথে উৎসাহেরও ঘাটতি পরছে। আর ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নিয়া হুদাই জামায়াতি বাগাড়ম্বর দেইখা আরো বিরক্ত লাগতেছে। ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যখ্যা পড়লে ধর্মকেন্দ্রীক রাষ্ট্র খুব নতুন জিনিস না বইলাই মনে হইবো। আর তারা অনেক মতবাদরে পরাজিত আর বাতেল কইতাছে দেইখাও আমার হাসি পাইতেছে। ঐসব ধর্মকেন্দ্রীক রাষ্ট্রের কথা আমি নিশ্চিত তাগো মনে আছে। সেইসবের পরিণতি কি হইছিলো, কেন হইছিলো তা'ও যদি একটু শোনাইতেন উনারা, তা'ও ভালো লাগতো। হয়তো আমার বুঝনের ভুল কাটতো...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×