দেশের রাজনৈতিক অবস্থার যদি একটা গ্রাফ আঁকন যাইতো এই সময়ে সেইটা দেখতে নিশ্চিত কোন পর্বতমালার হরাইজন্টাল ছবির মতো হইতো...এইরম ইসিজি রিপোর্ট টাইপ ছবির প্রতি আমার সেই বাল্যকাল থেইকাই কেরম আকর্ষণ কাজ করে। কিন্তু বর্তমান সময়ের এই চিত্র নিয়া কি আমি খুব আমোদিত!? নিজেরে প্রশ্ন করি...বড্ডই কনফিউসড। এই দেশের রাজনীতির হাওয়া জলেই বড় হইছি...মানুষের যা যা জানি সব এই দেশের...অন্য সংস্কৃতিরে তার মতোই জানি যতোটা সে 'অন্য' থাকে...একটা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তার জীবন যাত্রা, যাপন, প্রণালী দিয়াই চলে। এই সত্য জানি বইলা...ভালোবাসা-দুঃখ-ক্ষোভ সব নিয়াই এই দেশের রাজনৈতিক মানসিকতা নিয়া ভাবি।
সাম্প্রতিক সময়ে শহরের একদল মানুষের প্রতিক্রিয়ায় আমি হঠাৎ চমকিত হই...আওয়ামি লীগ যখন খেলাফত আন্দোলনের সাথে 5 দফা চুক্তি করে, এই অঞ্চলের তাবৎ মধ্যবিত্তরে আমি আহাজারি করতে দেখি...তাদের হতাশায় ভাইঙ্গা পরা দেখি। চুক্তিতে নাকি বলা হইছে দেশে ইসলামী শরীয়া আর সুন্নাহর সমস্যা হইতে পারে এইরম আইন প্রণয়ন করন যাইবো না, কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি আর আর ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে হইবো, ক্বাদিয়ানিগো মতোন আরো যেইসব পরবর্তী ইসলামী সম্প্রদায় আছে তাগো নিষিদ্ধ করতে হইবো আর সার্টিফাইড ফতোয়াবাজ তৈরী করনের লাইসেনস দিবো আওয়ামি লীগ...যদি তারা ক্ষমতায় আসবার পারে। আমি আমার চারপাশের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষগো এমনকি কাঁদতেও দেখি...এ কী!
আসলেই কি আওয়ামি লীগ মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতির সাথে প্রতারণা করে? মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি আসলে কি ছিলো? এই দেশের ইসলামী মনোভাবসম্পন্ন মানুষের মুক্তিযুদ্ধ নিয়া আসলে কিরম ভাবনা? তারা আসলে এই দেশের মুক্তির প্রয়োজনীয়তা আর পরবর্তীতে যেই রাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়া কিরম ভাবছিলো? আমি যেইরম জানি তাতে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় মূল শত্রুর মূল অস্ত্র ছিলো ধর্মরাষ্ট্রের সংহতি রক্ষার তাগীদ। তার বিরুদ্ধে একটা জাতি যুদ্ধ করছে হুদাই বঞ্চনার ক্ষোভে? পাকিস্তানীরা বেশি সম্পত্তির ভাগ ভোগ করে এই ঈর্ষায়? আমি জানি না ইসলামী ইতিহাসবেত্তারা কি ভাবেন...কারণ তাগো খুব বেশি লেখালেখি নাই...মাওলানা আব্দুল মতিনের একটা বিশ্লেষণ ছাড়া আর কিছু পাই নাই...অন্যান্য ব্লগারগো কাছ থেইকা সাহায্য পাইলে ভালো হইতো।
কিন্তু আওয়ামি প্রতারণা নিয়া আমি তা'ও অনেক দুঃখ পাইনা কেন? চাইরপাশের অনেক মানুষের হতাশায় কেন আমার কোন প্রতিক্রিয়া হয় না? আবারো প্রশ্ন করি নিজেরে...এইবার দেখি উত্তর রেডী...আমি আওয়ামি গো থেইকা আসলে কোন কিছুই প্রত্যাশা করি না। তারা যখন গোলাম আযমের সাথে দেখা কইরা নির্বাচন পূববর্তী দোয়া নিয়া বৈতরনি পাড় হয়, তারা যখন দলে রাজাকারগো অন্তর্ভূক্ত করে, তারা যখন পতিত স্বৈরাচাররে নির্বাচনী সহযোগী বানায়...তারা যখন ফতোয়াবাজিরে সাংবিধানিক করনের উদ্যোগ নেয়...আমার কাছে মনে হয় এইসবতো স্বাভাবিক!! আওয়ামি লীগ কি কেবল আন্দোলন করবার দল! তাগো ক্ষমতামূখীন স্বভাব কি এক্কেরেই নাই! শেখ মুজিব এই দেশের ক্ষণজন্মা যেই কয়জন রাজনৈতিক চরিত্র ছিলো তাগো মধ্যে এক নম্বর হইবেন এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত। আওয়ামি লীগ তো তার ভাবধারায় চলে চিরকাল...তিনি আসলে কিরম ভাবে এই দলের গতিপথ তৈরী করছিলেন?
স্বাধীনতার আগে শেখ মুজিবের ছয় দফা দাবী ছিলো পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রথম ক্ষমতাকেন্দ্রীক আন্দোলন। এই ছয় দফা কি এই দেশের মুক্তির সনদ? নাকি ক্ষমতায় কার অংশীদারিত্ব বেশি থাকবো সেইটার আমল নামা? শেখ মুজিব তখন এই ভাবেও সমাধান সম্ভব তা ভাবতেন বইলাই আওয়ামি লীগ 6 দফারে সমাধান ভাবছে...মার্কিন নীতির সমর্থক আওয়ামি প্রধান শেখ মুজিব কিন্তু প্রয়োজনরে আবার অস্বীকার করতে পারেন না...তিনি পক্ষ পালটান, তিনি তাগীদ পালটান, তাড়না পালটান...এই দেশের মুক্তির পথ হিসাবে সামনে চইলা আসে স্বাধীনতা আন্দোলন। আবার যেই লোক নিজে ধর্ম নিরপেক্ষতারে মূলনীতি বলেন সংবিধান প্রণয়নে...সেই লোক চইলা যান মধ্যপ্রাচ্যে, উদ্দেশ্য দেশটারে মুসলিম সাটিফাইড করন। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ইসলামী গবেষণা করনের কথা ভাবেন...এই সব কিছু ক্ষমতাকেন্দ্রীক ভাবনা। একটা বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলের যেই চিন্তা থাকে ক্ষমতারে কেন্দ্র কইরা তার সবটাই তিনি দেখান তার ছোট্ট বাংলাদেশী সময়ে। যেহেতু মতাদর্শের পুরাটা জুইড়াই থাকে প্রয়োজনবাদ তাই জনতারে হাতে রাখনের কৌশল! তিনি জানতেন ধর্ম কেমনে ম্যানিউপুলেশনের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়...তার পথ বন্ধ করনের চেষ্টা তিনি করেন। কিন্তু রাজনীতিতে অনেক সময়েই প্রতিরোধে কাজ হয় না...প্রতিষেধক, প্রতিশোধ লাগে!
যাউগ্গা আওয়ামিরা যখন আবার একইরম ভাবে 70'এ প্রণীত হওয়া দলীয় মূলনীতি পালটাইয়া নিজেদের বাজার অর্থনীতি মূখী করে...তারা 72'এর সংবিধান থেইকা নিজেরাই অনেকদূর সইরা আসে। এতো সব কথা কইলাম আওয়ামি লীগের নির্বাচনমূখী বাস্তবতা বুঝাইতে। তারা খেলাফত মজলিশের সাথে চূক্তি করুক, তারা রাজাকাররে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করনের সুযোগ দেক, কিচ্ছু যায় আসেনা...আমার মনে হয় এইটাই একটা নির্বাচনমূখী দলের আদর্শ হইতে হয়...শেখ হাসিনারে হত্যার ষড়যন্ত্র কইরাও নৌকা প্রতীকে ভর করনের রাস্তা কইরা দেয় এই নির্বাচনমূখী মানসিকতা।
আমার এতো বড় পোস্ট আসলে একটা ছোট কথা কওনের ভূমিকা...দেশের এই যে অদ্ভুত রাজনৈতিক সংকট...এই সব হইলো নির্বাচনমূখী রাজনীতির অসারতার প্রমাণ...প্রয়োজন আসলে পরিবর্তনের...আমি নিজেরে পরিবর্তনের স্রোতে রাখতে পারি নাই...কিন্তু কেউ যদি সঠিকতার ডাক দেয় তারে ফিরাবার পারুম!!!????
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




