somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাইরী ১১০

১৯ শে মে, ২০১০ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুদিন কোন সোজাসাপ্টা বাক্য লেখি নাই। আজকে বাড়িতে বইসা যখন রুটি-রুজির লেখা লিখতেছিলাম, তখন মনে হইলো আমি পাল্টাইতেছি বহুত! গতো কয় মাসে আমি অনুভূতিরে যতোটা আড়াল করছি...আমার ফেলে আসা জীবনের প্রায় ৩৮ বছরের সমস্তটা বিবেচনা করলেও তার সমান হইবো না। মন খুইলা প্রকাশের কাঠামোটাই যেনো আমার জীবন থেইকা বিস্মৃত হইছে প্রায়। আমি ছয় মাস আগেও এমন নন-হিউমারাস ছিলাম না...এখন আমি আড্ডায় কোন মজার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু কওনের লেইগা বেশ খানিক্ষণ ভাবি। ভাবতে ভাবতে সময় পার হইয়া যায়, আমার মজার কথার গুরুত্ব থাকে না কোনো। আবেগময় বাক্যে বিজ্ঞাপনি হেডলাইন লিখতে গেলে বুঝি আমার জীবন থেইকা মেলোড্রামাগুলি কোথায় যেনো হারাইয়া গেছে। শব্দের যেই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ...তার জায়গা দখল করছে নিঃশব্দেরা।

লেখার টাইমে তা'ও শব্দেরা ভাবনার সাথে সাথে দৃশ্যমান হয়, কিন্তু কথা কওনের সময় আমি হাত-পা নাড়ি, বাংলার পরিবর্তে ইংরেজী শব্দে সাজাইতে হয় চিন্তার মূর্তিরে। ইংরেজীটাও যদি ভালো পারতাম! তাইলে অন্ততঃ ভাইবা নিতে পারতাম একটা অঞ্চলের মানুষরেতো প্রতিনিধিত্ব করতেছি। নিজের দূর্বলতারে ঢাকনের লেইগা বাংলা আর ইংরেজী শব্দের মিশ্রনে গোজামিল দেই...আমার লেখনীর একটা বৈশিষ্ঠ্য হিসাবে হয়তো বিষয়টা আগের থেইকাই ছিলো...কিন্তু এখন সেই বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতায় ঘটনাটা ঘটে না। বরং এখন স্বতঃপ্রনোদিতভাবেই আমি বাক্যরে ভারী করি শব্দের ঘনঘটায়।

ভারী বাক্যগুলিতে ছদ্মবেশ চড়াই...মাত্রার গাথুনিতে ফেলি...তারা যেই কাঠামোটা পায় সেইটারে অনেকে কবিতা হিসাবে গণ্য করে। অনেকে জিগায় এইটা কি মূক্তগদ্যের কাঠামো কী না...আমি তখন কইতে পারি না কিছুতেই, নিজের দূর্বলতারে প্রকাশ করনের তাকদ আমার থাকে না। আদর্শ মধ্যবিত্তের মতোন আমি নিজেরে লুকাইয়া ফেলতে চাই, নিজেরে রহস্যের ঘেরাটোপে আটকাই। চারপাশের পরিচিত মানুষেরাও দেখি রহস্যরে সমীহ করে। এই সমীহের প্রকাশে আমি ক্রমশঃ আনন্দিত হই...এই আনন্দ একেবারেই মধ্যবিত্তের নিম্নবর্গীয় অনুকরণ। আজকের রাতে আমার মুখোশটারে অন্ততঃ আয়নায় খুইলা দেখনের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। আমি উন্মোচনের যেই প্রক্রিয়াটা জানি তারেই প্রয়োগ করনে সচেষ্ট হই। বড়ো ক্লিশে এই পদ্ধতি!

যদিও ক্লিশে'রে আমি চীরকাল ভালোবাসছি। চীরকাল ক্লিশেরে নিজের চিন্তা কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত করছি, আলোচনার ব্যপ্তিতে সবসময় ক্লিশের স্বাভাবিক প্রকাশের চেষ্টা করছি। সেই ক্লিশে ভক্ত আমি এখন প্রায়শঃ'ই ক্লিশে চিন্তারে শব্দের কাঠামোতে দেখতে পারি না। আমার শর্ট টার্ম মেমোরী লস বইলা একটা মানসিক অশান্তি দেখা দ্যায়। আমি চুল ছিড়ি শব্দের খোঁজে। আমি বাতাসে হাতরাই-স্মৃতির পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টাই। কিন্তু প্রয়োজনীয় শব্দেরা কোথাও কোন আড়ালে লুকাইছে...আমার ডাকে তারা মাঝে মাঝেই সাড়া দ্যায় না। শব্দের সাথে বসতির জীবনাচরণ নেওনের সাধটা আস্তে আস্তে কঠিন হইয়া পড়ে, রিসেন্টলি সরলমতি হইয়া উঠা আমার।

সমস্যাটা চিহ্নিত করতে পারি অবশ্য আমি। আজকাল বিবিধ বন্ধুগো(?) ফেইসবুক স্টেটাস ছাড়া বাংলায় গঠিত বাক্য পড়া'ই হয় না। বাড়িতে এই মুহুর্তে কোন বাংলা বই নাই...সময় কাটাইতে আমি ছড়ানো ছিটানো ইংরেজী বইগুলি থেইকাই খানিকটা খানিকটা কইরা পড়ি। কাছাকাছি সময়েই আমি তিনটা বই একসাথে শুরু করি। তারপর গল্প মনে করতে গিয়া খেই হারাইয়া ফেলি...যেই গল্পের শুরুটা ভাবি তার চরিত্রের বিস্তৃতি ঘটে আরেক গল্পের অন্য কোনো উপস্থাপনের রীতিতে। নিজেরে কেরম আনফিট লাগে সবকিছুর মধ্যে। এই বাক্যটা লিখতে গিয়া আমার হঠাৎ আমাগো সময়ের লিজেন্ড হইয়া ওঠা গায়ক আজম খানের কথা মনে পড়তে থাকে। এই লেখা তৈরীর আগে ফেইসবুকে কার জানি একটা লিংক থেইকা আজম খানের পারফরম্যান্সওয়ালা একটা বিজ্ঞাপন দেখছিলাম। সেইখানে তিনি মাইকেল জ্যাকসনের মতো পোষাকে সজ্জিত থাকেন। সম্ভবতঃ কোন ডামি পারফরমার জ্যাকসনের নাচের মূদ্রাগুলি অভিনয় করে। আমার মনে পড়ে কয়দিন আগে একটা কনসার্টে পাশে বইসা থাকা তিন/চারজন এই প্রজন্মের মাইয়া আজম খানের নাচ দেইখা হাসতে হাসতে গড়াইয়া পড়তেছিলো। নিজেরে কেরম মিসফিট লাগে। একসময় এই নাচের ধরণটা মুখস্ত করতাম। তার উপস্থাপন রীতি ঘোর তৈরী করতো আমার মধ্যে। যখন কোন আসরে গাইতাম 'সারারাত জেগে জেগে, কতো কথা আমি ভাবি' তখন আসলেই মনে হইতো আমি কোন একজন পাপড়ি'র স্মৃতিকাতর হইয়া পড়ি। মনে হইতো সেই পাপড়ি আমার দুঃখ বোঝে না আর তাই আমার ঘুম আসে না...

এই গানটা গাওনের টাইমে আমাগো সময়ের গুরুর অঙ্গভঙ্গী দেইখা নতুন প্রজন্ম কৌতুক বোধ করে! এরা সুললিত গণিতের মতোন নাচের মূদ্রায় আহ্লাদিত হয়। আবেগের এলোমেলো ধরণের প্রকাশরে এই প্রজন্মের কাছে হাস্যকর ঠেকে। আজম খানের প্রতি ছুইড়া দেওয়া টিটকারী আমি নিজের উপর টাইনা নিয়া, তব্ধা খাইয়া বইসা থাকি। মনে হয় রুচীবোধের এতো ফারাক নিয়া কেমনে দুইটা জেনারেশন মুখোমুখি জীবনযাপন করবো? এই প্রশ্নের আসলে কোন জবাব হয় না...অনেক অবভিয়াস ঘটনা এইটা...সময় আসলে এইরম আচরনরেই উৎসাহিত করে।

কৈশোরে যেরম ফুল ভলিউমে জুডাস প্রিস্ট-ডিপ পার্পল-ব্ল্যাক সাবাথ-রেইন বো-ইউরায়া হিপ শুনতাম, আজকাল আমি ছুটির দিনে আর রাইতে সেইরম গান ছাইড়া দিয়া চোখ বন্ধ করি। নিজের সেই সময়টারে ভাবতে গিয়া দেখি, আমার খালি শর্ট টার্ম না...লং টার্ম মেমোরীও আক্রান্ত হইছে। স্মৃতির তালিকা থেইকা অনেক কিছুই হাওয়া হইয়া গেছে...তাই বইলা আমি স্মৃতিভ্রষ্ট হই নাই! আমার স্মৃতি জুইড়া এখন কেবল সোয়া তিন বছর। প্রত্যেকটা মুহুর্ত আমি এখন মনে করতে পারি। আর এইসব মুহুর্তের গ্রাসেই আমি বান্ধা থাকি। যতোই তারে ভুইলা যাওনের সংকল্প করি, ততোই তারা সংখ্যায় বাড়তে থাকে। ভারাক্রান্ত হই।

ভারাক্রান্ত হইতে হইতে নুইয়া পড়ি...মাথা উচু কইরা রাখনের পুরানা অভ্যাসটা যখন মাথাচাড়া দ্যায় মাঝেমাঝে, তখন ভাবি সময় কইরা কোন একদিন কোন এক নদীর পাড়ে গিয়া তারে স্রোতে ভাসাইয়া দিতে হইবো...একই নদীর জলে দ্বিতীয়বার অবগাহন করন যায় না শুনছি...

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×