somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূতেরা রাম নাম জপছে

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন, ড. কামাল হোসেন প্রমুখ রাজনীতিকদের রাজনৈতিক মতের সঙ্গে আমার ঘোর বিরোধ আছে। তারা যখন টিভি পর্দায় অযৌক্তিকভাবে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন, সেটা অপছন্দ করি। কিন্তু আমি তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এমনকি তাদের মত প্রকাশে কেউ বাধা দিলে, আমি তার প্রতিবাদ করব। আর এই মত প্রকাশ করতে গিয়ে যাতে হাতাহাতি না হয়, সেটাও আমি খেয়াল করতে চাই।
কিন্তু এটা কি কল্পনা করা যায়, তাদের মতো বয়োবৃদ্ধ লোকেরা কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল মারমুখী উকিল ও ভাড়াটে মাস্তান নিয়ে দৌড়ে আক্রমণ করতে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলকে? কিন্তু ৩০ নভেম্বরের ঘটনা তাই ঘটেছে। ওই দিন এদের নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কক্ষে। ১ ডিসেম্বর পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায়, ্তুএক পর্যায়ে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা এনেক্স ভবনের এই আদালত থেকে প্রধান বিচারপতির চেম্বারের দিকে দৌড়ে যান। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন তখন উপস্খিত ছিলেন না। তারা প্রধান বিচারপতিকে না পেয়ে তার চেম্বার ও প্রধান বিচারপতির আদালত ভাঙচুর করেন।্থ
সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী, যিনি সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। আরেকজন আইনজীবী, যিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সহসভাপতি। এরা দুজন কিছু উচ্ছৃঙ্খল উকিল আর ভাড়াটে মাস্তান নিয়ে হামলা করেছেন প্রধান বিচারপতির চেম্বার ও আদালত। এর চেয়ে বর্বর ও জংলি ঘটনা আর কী হতে পারে? এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে যখন এসব মাস্তান হামলা চালায়, তখন তিনি নিজ কক্ষেই ছিলেন। দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা তিনি। এটি কি তাকে হত্যা প্রচেষ্টা নয়?
সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আমীর-উল ইসলাম তাদের সহযোগী বহিরাগত মাস্তানদের এই ন্যক্কারজনক হামলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা দেশবাসী। আদালতের সিদ্ধান্ত পক্ষে যায়নি বলে ভেঙে দেব আদালত? ভেঙে ফেলব প্রধান বিচারপতির কক্ষ? হত্যায় উদ্যত হব অ্যাটর্নি জেনারেলকে? এবং এই সন্ত্রাসেরও কোনো বিচার হবে না?
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের এই উচ্ছৃঙ্খল বর্বর কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিচারপতিরা আদালতে বসা বল্ডধ করে দেন। সুপ্রিমকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ তো সত্যি সত্যি নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। তারা দাবি করেছেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ও বার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দকে ক্ষমা চাইতে হবে। এ দাবি অসঙ্গত নয়। বরং অতি সামান্য। ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম যে ওই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে এখন আর সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। শত শত সাংবাদিকের দৃষ্টি, স্টিল ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরায় ধরা আছে সে দৃশ্য। ফলে তারা কেউ অস্বীকার করেননি তাদের কর্মকাণ্ড। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব রাজনীতিক-কাম-আইনজীবীর পক্ষে এক বিবৃতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এসব আইনজীবীর বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির খাস কামরাসহ আদালত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগটি মিথ্যা। তিনি এই মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা গত ৬ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ্তুদেশের রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধান পদদলিত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই নিযুক্ত হন, যা অনভিপ্রেত ও অসাংবিধানিক। সংবিধান সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশিষ্ট নাগরিকদের দায়েরকৃত রিট পিটিশন তিন দিন শুনানি শেষে আদেশ জারির প্রাক্কালে প্রধান বিচারপতি ন্যায়নীতি উপেক্ষা করে নজিরবিহীনভাবে আদেশ দান স্খগিত করেন। ফলে আইনজীবীরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এই সময় পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে চারদলীয় জোট সমর্থিত আইনজীবীদের মদদে কিছু বহিরাগত প্রধান বিচারপতির খাস কামরা তছনছ করে, যার সচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এই ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু ওই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই দেশের এই খ্যাতনামা সংবিধানবিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা সম্পৃক্ত হতে পারেন না।্থ
আওয়ামী লীগ নেত্রীর এই বক্তব্যের প্রায় প্রতিটি বাক্যই অসত্য। তিনি বলেছেন, অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধান পদদলিত করে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন। তার এই বক্তব্য চরম অসত্য। কারণ রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৮গ(৬) ধারা অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন। আবার শেখ হাসিনা এখন যে দাবি তুলেছেন, তা হলো প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দিতে হবে। ছেড়ে কাকে দেবেন? শেখ হাসিনার দাবি অন্য কোনো উপদেষ্টাকে। অর্থাৎ তিনি চাইছেন, সংবিধানের ৫৮গ(৫) ধারা অনুয়ায়ী কোনো ্তুনাগরিক্থকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দিতে। সে ধারায় আছে : ্তুযদি আপীল বিভাগের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে পাওয়া না যায়, অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অসম্মত হন, তাহা হইলে রাষ্ট্রপতি যত দূর সম্ভব, প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত আলোচনাক্রমে, বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক এই অনুচ্ছেদের অধীনে উপদেষ্টা নিযুক্ত হইবার যোগ্য তাহাদের মধ্যে হইতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করিবেন।্থ শুধু আওয়ামী লীগের পরামর্শেই তো প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা যাবে না। কারণ সংসদে প্রতিনিধিত্ব দিয়ে যদি প্রধান রাজনৈতিক দল নির্ণয় করতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের স্খান বেশ নিচে। তাদের কথায় কেন প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হবেন। শেখ হাসিনার এই দাবি তাই সুস্পষ্টভাবেই সংবিধানবিরোধী।
শেখ হাসিনার আরো অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি ন্যায়নীতি উপেক্ষা করে নজিরবিহীনভাবে আদেশ দান স্খগিত করেন। এই অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ৫ ডিসেম্বর এই কলামে তার সুস্পষ্ট নজির তুলে ধরেছি। তাতে দেখা যায়, ড. কামাল হোসেন ও রোকনউদ্দিন মাহমুদের সংশ্লিষ্টতায় এর আগেও এ ধরনের ঘটনার বেশ ক্থটি নজির রয়েছে। শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, ্তুএ সময় পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে চারদলীয় জোট সমর্থক আইনজীবীদের মদদে কিছু বহিরাগত প্রধান বিচারপতির খাস কামরা তছনছ করে, যার সচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।্থ দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে যে, এই ঘটনার আগেই জোট সমর্থক আইনজীবীরা চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে যান। যারা ছিলেন, তারাও আওয়ামী সন্ত্রাসী আইনজীবী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের মাস্তানদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যান। এখানে তিনি চারদলীয় জোট সমর্থকদের কোথায় পেলেন, বোঝা গেল না। সর্বোপরি রোকনউদ্দিন মাহমুদ বা আমীর-উল ইসলামও তো বলেননি যে, তারা ওই হামলায় নেতৃত্ব দেননি। পরিস্খিতি এমন যে, ্তুযার বিয়ে তার খবর নাই, দেশরত্নের ঘুম নাই।্থ শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে ওই আইনজীবীরা সম্পৃক্ত হতে পারেন না। কিন্তু তারা যে সম্পৃক্ত ছিলেন, সেটা তারা যেমন অস্বীকার করেননি, তেমনি তার প্রমাণ আছে সংবাদপত্রের রিপোর্টেও।
সুপ্রিমকোর্টে ওই হামলার নেতৃত্ব দেয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার পর তারা প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। তবুও বিচারপতিগণ প্রধান বিচারপতির অনুরোধে ১১ ডিসেম্বর থেকে বিচার কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ৭ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদের নামে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। সে বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ছিল : মাননীয় বিচারপতি ও আইনজীবীদের প্রতি আকুল আবেদন : সংবিধান ও ঐতিহ্য রক্ষায় আসুন একসঙ্গে কাজ করি। ওই বিজ্ঞাপনটি হেঁয়ালিতে ভরা এবং বিজ্ঞাপনটি পড়ে বোঝা যায় না তারা কী চান। বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ্তুসংবিধান সমুন্নত রাখতে আমরা সবিনয়ে মাননীয় বিচারপতিবৃন্দ এবং আমাদের সহকর্মী আইনজীবীদের প্রতি নিবেদন করছি যে, এটা প্রণিধানযোগ্য যে, আমাদের ও জাতির জীবনে কখনো কখনো এমন মুহূর্ত দেখা দেয়, যখন সংবিধানের মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে সমুন্নত এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য নিজেদের মধ্যে সব বিভেদ এবং মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নি:সন্দেহে আমরা সবাই আমাদের সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।... অনতিবিলম্বে দলীয় সংঘাতময় অবস্খান থেকে একযোগে সরে না এলে আমরা সবাই এই পবিত্র দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হব।্থ
এখানে প্রশ্ন হলো, কোন প্রতিষ্ঠান আপনারা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করছেন? সুপ্রিমকোর্টের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন। এটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। মেনেছেন? মানেননি। রাষ্ট্রপতি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। মেনেছেন? মানেননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি প্রতিষ্ঠান। মেনেছেন? মানেননি। বিচার বিভাগ, প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল্ল এক একটি প্রতিষ্ঠান। মেনেছেন? মানেননি। তাহলে আজ কোন মুখে এত বড় বড় কথা বলছেন?
ওই বিজ্ঞাপনে তারা বলেছেন, ্তুবারের প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে গত ৩০ নভেম্বর সংঘটিত ঘটনার এবং এর পূর্বসূত্রীয় ঘটনাবলির জন্য আমরা গভীর দু:খ প্রকাশ করছি? ঠিক যেভাবে নির্দ্বিধায় সে দিনের আবেগের বহি:প্রকাশ থেকে উদ্ভূত যেকোনো সংঘাতময় ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। এ ধরনের সংঘাত আর কখনো যেন দেখা না যায়। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের একটি নিরপেক্ষ ও উন্মুক্ত তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। জাতি ও পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি আমাদের যৌথ বক্তব্য, একটি সুমহান ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা এবং দলীয় প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে তাকে ধ্বংস না করা। যাতে অন্যদের ওপর আঘাত হেনে বিজয় দাবি করতে পারে।্থ
এই দু:খ প্রকাশ কি প্রধান বিচারপতির আদালত ভাঙচুরের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দু:খ প্রকাশ হলো? নাকি সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন মারা গেলে যেভাবে দু:খ প্রকাশের রেওয়াজ আছে, তাই হলো। সংঘাত তো সে দিন হয়নি। আপনাদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। নিন্দা জানালেন কাকে? নিজেকে তো নয়। সে দিনের আদালত ভাঙচুরের সঙ্গে তো জোট সমর্থক আইনজীবীদের কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। যা ঘটেছে, তা করেছে আওয়ামীপন্থীরাই।
ওই বিজ্ঞাপনে তারা বলেছেন, আমরা কি আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি মহোদয়গণের কাছে ও তাদের ওপর নির্ভর করতে পারি না, বিচারপতি ও আইনজীবী উভয়ের ব্যাপারে একটি গভীর পর্যালোচনার আলোকে বর্তমান অবস্খার সঠিক চিত্র নির্ণয় করে তা থেকে উত্তরণের জন্য সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য?
প্রধান বিচারপতি মহোদয়গণের কাছে দিকনির্দেশনা চাইছেন? কিন্তু বিচারপতি কে এম হাসানও তো প্রধান বিচারপতি ছিলেন? তাকে কি মেনেছেন? তবে কি তাকে বাদ দিয়ে পরামর্শ সভা গঠন করবেন?
বিজ্ঞাপনে তারা বলেছেন, কথিত রয়েছে যে, এমন ছয়জন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যারা কোনো দিন সুপ্রিমকোর্টে প্র্যাকটিস করেননি। এখানে কথিত থাকার বিষয়টি আজগুবি। আপনারা দীর্ঘকাল ধরে সুপ্রিমকোর্টে ওকালতি করছেন। কাকে এভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তা আপনাদের অজানা থাকার কথা নয়। সুস্পষ্ট করে না বলে এখানেও তারা হেঁয়ালির আশ্রয় নিলেন।
সবশেষে তারা বলেছেন, বিভেদ ও সংঘাতের পথ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আসুন একযোগে কাজ করি। একসঙ্গে সমবেতভাবে ভুল সংশোধন করি এবং একত্রে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করি, যাতে আমাদের সুপ্রিমকোর্ট ভয়ভীতি ও পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে থেকে ন্যায়বিচার করার তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারে।
কী চমৎকার হাই প্রোফাইল ভাষা। কী চমৎকার ন্যায়পালসুলভ কথা। এক দিকে সুপ্রিমকোর্টে প্রধান বিচারপতির অফিস-আদালত ভাঙচুর করব, রায় নিজের পক্ষে নেয়ার জন্য ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সুপ্রিমকোর্টকে ন্যায়বিচার করতে হবে্ল বিষয়টি অনেকটা মারিয়া পূজোর উপন্যাস গডফাদারের সঙ্গে তুল্য। ডন যখন শপথ নিচ্ছিল, তখন রিমাপ তাকে জিজ্ঞাসা করছিল, আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন? জবাব্ল করি। আপনি কি খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাস করেন? ডন বলল, করি। কিন্তু গডফাদারের লোকেরা তখন নিউইয়র্কের রাস্তায় নির্বিচারে হত্যা করছিল মানুষ।
এত কথা বলতে হতো না, যদি না এরা রাজনীতি থেকে পেশাটাকে আলাদা করতে পারতেন। রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে যখন পেশাকে জড়িয়ে ফেলা হয় তখন এরকম পরিস্খিতির উদ্ভব হওয়াই স্বাভাবিক।
আমরা সাধারণ নাগরিকরা স্বাধীন বিচারবিভাগ চাই। আমরা চাই, সে দিনের ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই সাজা দেয়া হোক। অপরাধীদের বারের সনদ বাতিল করতে হবে। আজ যদি হামলাকারীরা পার পেয়ে যায়, তাহলে কাল যেকোনো সন্ত্রাসী রায় তার নিজের পক্ষে নেয়ার জন্য এ ধরনের হামলার আয়োজন করবে। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা জিন্দাবাদ।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×