somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসপাতালে এক রাত !

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মঙ্গলবার (০১-০৪-২০১৪) সকাল ৭ টা ৩৫ এর দিকে আমি অফিসে চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছি। আমার ছোট বোনের ফোন। আমি কলটি রিসিভ করতে পারি নাই। আবার ১৫ মিনিট পর আমার মেঝ বোনের ফোন। ফোনটি দেখেই ভাবছি হয়তো কোন খারাপ খবর হবে। নইলে এত সকাল বেলায় ফোন করবেন কেন? আমার বোন বলতে লাগলেন, নাসিম ভাইকে (৪৮) হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাথে ভাবী আর দুলাভাই (সবার বড় বোনের স্বামী) আছে। আমি কিছু না বলে ফোনটি রেখে দিলাম। দুলাভাইকে ফোন করলাম, উনি বললেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হসপিটালের পাশে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাচ্ছি। ভাই নাকি প্রচুর ঘামতেছিলেন, বুকে ব্যথা আর চোখে ঝাপসা দেখতেছিলেন, বলে ফোনটি উনিই কেঁটে দিলেন। আবার ফোন করলাম। উনি ভাইকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে ভালই ভুল করলেন। ভুলক্রমে হৃদরোগে না গিয়ে পাশের হসপিটালে গেলেন, সেখানে ডক্টর না পেয়ে এক দালালের কথায় রাস্তার ওপারে গেলেন এক ডক্টরের চেম্বারে। ডক্টর বললেন অবস্থা বেশি ভাল না। আবার উনি হৃদরোগে পাঠালেন। হেঁটে হেঁটে ভাইয়ের অবস্থাতো আরও খারাপ।
আমি সকাল ৮ টা ৫০ এর দিকে অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম, বনানী থেকে শেরেবাংলা নগর। সকাল ১০ টা ৩০ এ পৌঁছলাম। উনি সি.সি.ইউ তে ২০ নাম্বার বেডে ঘুমিয়ে আছেন। কি যেন একটা ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। কমপক্ষে ৪/৫ ঘণ্টা ঘুমাবেন। আমরা যারা দর্শনার্থি ছিলাম সবাই মিলে বাইরে অপেক্ষা করতেছিলাম।
এরই মধ্যে হসপিটালে আমার পূর্ব পরিচিত এলেন ভাইয়ের সাথে দেখা। উনি গত রাতেই আমাকে এস.এম.এস করে জানিয়েছেন যে, ওনার বাবা রাত ১১ টার দিকে মারা গেছেন। আজ উনি লাশ নিয়ে যাবেন। রাতে হয়ত উনি অনেক কেঁদেছেন। তাই এখন অনেকটাই ওনাকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। একের পর এক ফোন রিসিভ করছেন, কথা বলছেন। আবার কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখলাম, আর একটা লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লাশ ধরে অনেকেই কাঁদছেন।
দুপুর ১টা বেজে গেল এরই মধ্যে। রাতে আমি অফিস করেছি। আমার দুচোখে ঘুম, আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। অবশেষে ভাবীকে বললাম আমি রাতে রোগীর সাথে থাকব। এখন চলে যাই। তারপর মেঝ বোনের সাথে তাঁর বাসা আজিমপুরে চলে গেলাম। দুপুরে একটু খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসতে ছিল না। বিছানা থেকে উঠে গোসল করলাম। গোসল শেষে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুমাতে আর পারলাম কই? বোনের বাসায় আবার মেহমান আসল। ওদিকে আবার আমার বাসায় গিয়ে বউকে নিয়ে হসপিটালে যাবার কথা। বউকে ফোন করলাম। বললাম আমি বাসায় আর যাবো না। তুমি সরাসরি হসপিটালে চলে এসো। সেখান থেকে তোমাকে আমি বাসায় পৌঁছে দিব। আমার কথা শুনে বউ মনে হল একটু বিরক্ত হল। বাসায়ও বাজার-টাজার নাই। সন্ধ্যা ৭ টায় বাসায় পৌঁছে, বাজার সেরে, রাতে কোনরকম খেয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যে মগবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেখানে রাজিব আর নেছার ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। রাজিব নতুন একটা প্রজেক্ট পেয়েছে। সেটার বিষয়ে আমাদের সারে ৮ টার দিকে বসার কথা। ঠিক ৮ টা ৫০ এর দিকে আমি পৌঁছলাম। হসপিটাল থেকে আবার আমার বড় দুলাভাই বার বার ফোন করছেন আমার অবস্থান জানার জন্য।
সোয়া নয়টায় মিটিং শেষ করে ঠিক ১০ টার মধ্যে পৌঁছলাম। যেয়ে ভাবীকে আমি ছুটি দিলাম। ভাবী সারাদিন অনেক কষ্টে করেছেন। গোসল নেই, ঠিকমত খেয়েছে কিনা কে জানে?
আমার ভাই শুয়ে আছেন। এখন আগের চেয়ে ভাল বোধ করছেন। কিন্তু কিছুতেই ওনার ঘুম আসছেনা। এদিকে হসপিটালে লক্ষ্য করলাম প্রচুর মশা। তাই মশার তাড়াবার কাজে আমি লেগে গেলাম। রাত ২ টা পর্যন্ত কখনও দাঁড়িয়ে আবার কখনও বসে হাত পাখা দিয়ে মশা তাড়ালাম।
বেডের পাশে অল্প একটু জায়গা পেলাম। সেখানে চাদর বিছিয়ে কোনরকম শুয়ে রইলাম। একটু ঘুমাতে পারলে হয়তো ভাল লাগত। চারপাশে রোগীদের চিৎকার।১৯ নম্বর ব্যাডে এক বয়স্ক রোগী, ওনার দেখা শুনার জন্য শুধু দেখালাম ওনার ছেলের বউ। মহিলাটিও হাল্কা-পাতলা গড়নের মাঝ বয়সি। মহিলাটির স্বশুর হঠাৎ করেই মাঝে মধ্যেই চিৎকার করে উঠেন। তাছাড়া গায়ে দেবার জন্য চাঁদর নেই। হসপিটাল থেকেই বরাদ্দ দেবার কথা কিন্তু বার বার মহিলাটি চাঁদর চেয়ে কেন পাচ্ছে না তা আমারও বোধগম্য হচ্ছে না। বাসা থেকেও হয়ত আনা হয়নি। শেষ পর্যন্ত দেখলাম একটা গামছা ওনার গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হল। কিছুক্ষণ পর দেখলাম মহিলাটি উধাও হয়ে গিয়েছে। ওই বয়স্ক লোকটি তার ছেলের বউ কে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এক পর্যায়ে বেয়াদব বলে গালি দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়লেন।
আমাদের সামনের বেডেই আর এক রোগী দেখলাম। বয়স আনুমানিক ৫৫ হবে। প্রায় সুস্থ হয়ে পরেছেন। তাই আর শুয়ে থাকতে পারছেন না। বেড থেকে নেমে যেতে চান। ওনার বউ এতে রেগে গেলেন এবং বললেন এমন করলে উনি কাল সকালই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাবেন। কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে বসতে যেয়ে একটু ব্যাথা পেলেন ভদ্রলোক। যখনই বউ তার স্বামীকে ধরতে গেলেন। লোকটি আর ভদ্র থাকলেন না। অমনিই বউয়ের গালে, পীঠে চড় মারা শুরু করে দিলেন। একটু কষ্টের মাঝেও আমার হাসি পেল। যাহোক হসপিটালের স্টাফরা এই সব দেখে ওনাকে সি.সি.ইউ থেকে নরমাল ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিলেন।
ভোর রাতের দিকে আবার একজনের মৃত্যু। তার ছেলে-মেয়ে-আত্মীয়-স্বজনরা কান্নাকাটি করছেন। হাসাপাতাল এক আজব যায়গা। সবাই আসে সুস্থ হতে। কেউ ফিরে সুস্থ হয়ে আবার কেউ ফিরে বাড়িতে যাবার জন্য নয়, চলে যায় না ফেরার দেশে।
মাঝে মধ্যে নিজেকে নিয়ে ভাবি আমারওতো কোনদিন এই বেডে আসতে হতে পারে। কি আজব মানুষ আমরা বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ্‌'র কাছে কতই না প্রার্থনা করি।! মসজিদে গিয়েওতো আমরা এত অসহায় হয়ে আল্লাহ্‌'র কাছে প্রার্থনা করি কি না সন্দেহ আছে? ভোরের অপেক্ষায় আছি। ডাক্তার আর কত দিন থাকতে বলেন আর কতদিন পর রোগীকে রিলিজ করবেন তা জানার অপেক্ষায় আছি।

ভোলামন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৪৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×