মানব জনমের সার্থকতা: বিনোদনের মাধ্যমে মানব জনমের পূর্ণতা ও সার্থকতা কিসে তা ভুলিয়ে রাখা হয়।
কতকটা আপনি চান বলেও হয়তোবা, কিন্তু মূলত আপনাকে যেন "cog in a machine” বানানো যায় সেজন্য বিনোদনের প্রয়োজন - আপনাকে একটা ঘোরের ভিতরে নিয়ে যাবার জন্য, যে অবস্থায় sleep walker-দের মত আপনি ঘুমিয়ে থেকেও অনেক কিছু করতে পারবেন, সচেতন না হয়েও। আপনি কোন প্রশ্ন না করে অবিশ্বাসী বস্তুবাদীদের ভোগ সুখের যোগান দিতে কেবল কিছু মাসোহারার বিনিময়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করবেন। পশ্চিমা বিশাল শিল্পনগরীগুলোর কর্মজীবী মানুষদের জীবন কেমন হয়? কাজ, ফিরে এসে বিয়ার নিয়ে টিভির সামনে বসা, খাওয়া, ঘুমানো তারপর আবার কাজ। কোন চিন্তা ভাবনা বা মনে কোন প্রশ্ন জাগার অবকাশ বা সুযোগ নেই। এই অবস্থাকেই রাসেল ‘cog in a machine’ বলেছেন। মেশিনের একটা দাঁত যেমন, নির্দিষ্ট সময় পরে পরে একটা বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে একই স্থান অতিক্রম করে, মানুষও তেমন একটা ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা জীবনযাপন করছে আজকের “উন্নত বিশ্বে”। সুতরাং আপনাকে আপনার মানবিক ও মানবসুলভ অস্তিত্ব ভুলিয়ে রাখার জন্য বিনোদনের প্রয়োজন - যেন আপনার মনে সমাজপতিদের নিয়ে কোন প্রশ্ন না জাগে, systemনিয়ে কোন প্রশ্ন না জাগে, বরং আপনি যেন system-এ গা ভাসিয়ে দিয়ে বিশ্বের মুষ্টিমেয় লোভী রাক্ষসের ’ভোগ-সুখের’ যোগান দিতে পারেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “চিরতন হরতন ইস্কাবনের” অতি সনাতন ছন্দে যেন সব কিছু চলে। আপনি কি জানেন কোটি কোটি ডলারের মালিক Drug lord বা Drug king-দের ছেলেমেয়েরা ধূমপান পর্যন্ত করে না বরং Harvard Law School বা MIT-তে লেখাপড়া করে - আপনার আমার ছেলেমেয়েরা, আমাদের যন্ত্রসুলভ জীবন ধারার জন্য মাদকাসক্ত হয়ে তাদের লক্ষ-কোটি ডলারের তহবিলের যোগান দিয়ে থাকে। বিনোদনে আপনাকে এমনভাবে ডুবিয়ে রাখা হবে, যাতে আপনার স্বাভাবিক বোধশক্তিই না থাকে - Australia-তে যেমন কিছু অঞ্চলে aborigine-দের যেন অথর্ব করে রাখা যায় সারাজীবন, তারা যেন কখনো মাথা তুলতে না পারে, সে জন্য তাদের বসতিপূর্ণ এলাকায় মদ্যপানকে সহজতর করে দেয়া হয় এবং এটা একটা Official Policy হিসেবে করা হয়। আমি খবরের কাগজে পড়েছি যে, একটা আদিবাসী অঞ্চলে মেয়েরা সংগ্রাম করছিল, যেন তাদের এলাকায় মদের সহজলভ্যতা রোধ করে, তাদের পুরুষদের অথর্ব হওয়া থেকে রক্ষা করা হয়। আমাদের দেশের চা বাগান গুলোর “কুলি”দের অবস্থা অনেকটা এ ধরনের ছিল বা প্রায় ক্ষেত্রে এখনো আছে। একদিকে অত্যন্ত নিম্নমজুরী বেঁধে দিয়ে তাদের জীবনে অভাবকে স্থায়ী আসন দেয়া হয়, আবার একই সময় মদ্যপান ও নাচগানের মাধ্যমে হাল্কা বিনোদনের প্রশ্রয় দেয়া হয়। তাতে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এরকম যে, অভাবী ও দুঃখী বলে সব ভুলে থাকতে (?) মানুষগুলো মদ্যপান ও ফুর্তি করতে গিয়ে সামান্য রোজগারটুকুও হারায় এবং তাদের দুঃখও কখনো ঘোচে না - দুঃখী বলে তারা মদ্যপান করে, আর মদ্যপানে সব হারিয়ে তারা চিরতরে দুঃখীই থেকে যায়। Exploitation-এর নিমিত্তে সৃষ্ট cause and effect বা কার্যকারণের কি অদ্ভুত এক ’পাপচক্র’ !! এভাবে পৃথিবীর অবিশ্বাসী সমাজপতিরা, যারা আমাদের বর্তমান পৃথিবীর পিরামিড বিন্যাসের চূড়ায় রয়েছে, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে, তাদের “শ্রমিক পিঁপড়া” শ্রেণীর শোষণের রক্ষ্যবস্তুরা যেন চিরজীবন বিনোদনের নেশায় ডুবে থেকে বাস্তবতা ভুলে থাকে - তারা যেন কোন বিপজ্জনক প্রশ্ন না করে - তারা যেন এতটুকু সচেতন কখনোই না হতে পারে, যতটুকু হলে রুখে দাঁড়াতে পারে। এখানে ছোট্ট একটা কথা বলে রাখি - কোন সমাজ বিজ্ঞানী যদি ইসলাম সম্বন্ধে জানতে চেয়ে কোন মুসলিমকে জিজ্ঞেস করেন যে, “মুহম্মদ (সা.)-এঁর মিশনে কি এমন ছিল যে, মক্কার সমাজপতিরা তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করতে চাইলো? অথচ, প্রচলিত ধারণা মতে তো ইসলাম শান্তির ধর্ম!” মাননীয় পাঠক, আপনার কাঙ্খিত ও সঙ্গত জবাব কি হবে? আমার জবাব হবে “মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্বের অবসান বা মানুষের দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া ছিল তার মিশনের প্রধান ও ব্যাপক লক্ষ্য।”

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




