"আবার জেগেছে এ দেশে দুঃশাসকের দল
অমৃত সিন্ধুপূর্ণ করেছে পীড়নের হলাহল
কাদে ক্ষুধাতুর কাদে নিপীড়িত উদ্ধত বাহু দোলা
তবু কি করে থাকি আজো আত্মভোলা?"
আজ ১৫ ডিসেম্বর।বিজয়ের উল্লাসের মাত্র একদিন বাকী।এ উল্লাসের আড়ালে হয়ত হারিয়ে যাবে সম্প্রতি গত২৭ দিনে নিখোজ হওয়া ৩২ জন দুর্ভাগা মানুষের পরিজনের করুণ আহাজারি হয়ত মিলিয়ে গত ১ মাসে খুন হওয়া ১০০মানুষের নিরব ফরিয়াদ।
স্বাধীনতা নিয়ে রাজনীতির আরো একটি মিথ্যা গল্প বানানোর ব্যতিক্রমতা ঘটেনি এবারের বিজয়েও।আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ফক্কিকারের দাবিতে ধুয়াশা হয়ে গেছে ১৯৭১ -এ নকশালদের(বর্তমান জাসদ) মারা যশোরের বাঘারপাড়া থানার জামাদিয়া এলাকায় ৩০-৩৫ জনকে হত্যার কথা,কিংবা নড়াইলের চাড়খাদার মাওঃ বজলুর রহমানের হত্যার অন্তরালে মুসলিম নিধনের অভিযান কিংবা এমন আরো অনেক অপগাথা।
গতকাল যখন গোলাম আযমের একটা সাক্ষাতকার দেখছিলাম তখন মনের কুঠুরীতে কেবলি আনাগোনা দিচ্ছিল আমাদের আত্মভোলা ইতিহাস বিকৃতির কথা।
আজ এত বছর পর মীমাংসিত একটা ইস্যু নিয়ে বামদের চাপিয়ে দেওয়া যে খেলায় নেমেছে সরকার তখন আমার ভয় এ সরকারও না আবার মুজিব সরকারের মত আত্মপ্রবন্চিত হয়ে ঠাই নেয় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি অনেকেই।এরশাদ, কামালের ৪০০ সেনা অফিসারসহ যুদ্ধের সময় ঐ পাকিস্তান বসে ছিলেন অনেকেই।এমনকি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবিদের অনেকেই তৎকালীন সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন পর্যন্ত।তবে কি এরা রাজাকার হয়ে গেছে?
রাজনৈতীক মতপার্থক্যের জন্য একজন মানুষ ভিন্ন মত দিতেই পারে।
দেশস্বাধীনের এক বছরের মধ্যে ২৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার স্থান ভারত,কিংবা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমাদের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর জন্য কোন চেয়ার না রাখা ভারত, কিংবা বর্তমানে সীমান্তে পাখির মত গুলি করে বাংগালী হত্যা করা ভারত,আমাদের বাজার দখল করা সাম্রাজ্যবাদী ভারতমদদপুষ্টতার চেয়ে যে অখন্ড পাকিস্তান পক্ষাবলম্বন তখন যে কোন মানুষের জন্য অস্বাভাবিক ছিল না তা এখন সহজেই অনুমেয়।তৎকালীন সময়ের এই মানুষগুলো তবে নিশ্চয়ই চলে যেতে পারতেন পাকিস্তানে ,বরং সেটাই নিরাপদ হত।কিন্তু থেকে গিয়েছেন স্বাধীন বাংলাকে মনে প্রাণে মেনে নিয়ে।
আমি অবাক হয়েছি ৭০উর্দ্ধো গোলাম আজমের স্রষ্টার প্রতি নিঃশর্ত আস্থা দেখে।
এতটুকুও বিচলিত নন তিনি।দেশ স্বাধীনের পর বহুকষ্টে ফিরে পেয়েছেন এ লাল সবুজের নাগরিকত্ব।ভাষা আন্দোলনে এ মানুষটির সক্রিয় অংশগ্রহনের ইতিহাস অনেক আগেই মুছে দিয়েছে জাতির তথাকথিত সূর্য সন্তানেরা,যেমন করে মুছে দিয়েছে বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী শাহজাহান সিরাজের নাম(এখন কেবল আ স ম আব্দর রব).
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার আমাদের আত্মইতিহাসের যে কঙ্কালসার অবশিষ্ট হয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে করুণা ভিক্ষা করছে তা যদি আমাদেরই অবহেলায় হারায় বিস্মৃতির গর্ভে,তবে পরবর্তী প্রজন্ম আত্মবিচলিত হতে বাধ্য।
যুদ্ধের পর বহুবার বহু আন্দোলনে গোলাম আযম এবং তার দল তথাকথিত স্বাধিনতার স্বপক্ষের শক্তির সাথে একাট্টা হয়েছে।
এমনকি স্বাধীন বাংলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রথম প্রস্তাবকারী এই গোলাম আযম ও তার দল জামাতে ইসলামী।
আলোচনায় একই টেবিলে বসে শেখ হাসিনা এবং গোলাম আজম যখন ৯০এ ভবিষ্যতবাংলার রূপরেখা নির্ণয় করেছে তখন একবারও আসনি যুদ্ধাপরাধ বিতর্ক।আসবেই বা কি করে?যুদ্ধাপরাধ(হত্যা,ধর্ষণ,লুন্ঠন,অগ্নিসংযোগ) এর সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া ১৯৫ জনের মধ্যে যে গোলাম আজম বা তার দলের কারো নাম ছিল না।
আর সেই ১৯৫ জনকেও ক্ষমা করে মুজিব সাহেব বিতর্কের চিরঅবসান ঘটিয়েছেন।
তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আমরা চাই এ যুদ্ধাপরাধ বিতর্কের অবসান হোক।আমরা চাই নিরপেক্ষ ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে অপরাধীর বিচার ,কোন রাজনৈতিক হয়রানি নয়।আর এতে যদি সত্যিই নিরপরাধ ঘোষিত হয় আজম আর তার দল,তবে বিচার চাই সেই সব ইতিহাসবেত্তার যারা এতদিন এ ইস্যুকে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অস্র হিসেবে নিয়েছেন।
গোলাম আজমের সাক্ষাৎকারের সর্বশেষ কথায় নির্ভয়তার সাথে তার ভ্য়হীন চিত্তে উচ্চারিত হয়েছে স্রষ্টার প্রতি অবিচল বিশ্বাসের।আর তিনি যদি সত্যি হন তবে এমন আবেদন কি করে বৃথা যেতে পারে?
আজ এত বছর পর প্রশিক্ষিত কিছু সাক্ষী দিয়ে এমন মিথ্যাকে সত্য হয়ত করা যাবে ,কয়েক জনকে ফাসিও হ্য়ত দেয়া যাবে কিন্তু সত্য বারবার প্রকাশিত হবে তার আপন ধৃষ্টতায়.........

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




