somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৫১

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৫১

ত্রিপুরা মায়ানমার
ভারতে ত্রিপুরার হাওড়া এবং খোয়াই উপত্যকায়ও প্রায় একই রকম প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। বার্মা বা মায়ানমারের ইরাবতী উপত্যকায় প্রাপ্ত অন্যাথিয়ান ও নবোপলীয় হাতিয়ারের সাথে বাংলাদেশের লালমাই ও চাকলাপুঞ্জিতে প্রাপ্ত প্রতড়ববস্তুর সাদৃশ্য রয়েছে। বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে, ত্রিপুরার হাওড়া ও খোয়াই উপত্যকা এবং বার্মা বা মায়ানমারের ইরাবতী উপত্যকায় প্রাপ্ত প্রস্তরীভূত জীবাশ্ম কাঠের প্রতড়ববস্তুর নিয়মিত উপস্থিতি এবং কলাকৌশল ও সংস্থানিক সাদৃশ্য পর্যবেক্ষণে মনে হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে এতদঞ্চলে এক আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল।১২৮

বাংলাদেশের আশেপাশে প্রাগৈতিহাসিক অনুসন্ধানঃ সংযুক্ত এলাকা হিসেবে আদিকাল থেকেই বাংলাদেশের মানবীয় জীবন এবং তার সংস্কার ও সংস্কৃতি আশেপাশের এলাকা, যেমন- আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিম বাংলা এবং মায়ানমারের প্রাকইতিহাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

আসামে প্রাপ্ত প্রত্নতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত সারঃ
বিশ শতকে ষাটের দশকে আসামের উত্তর কাছার পাহাড়ে লাংথিং এবং মহুর নদী উপত্যকায় এইচ.ডি সাংকালিয়ার নেতৃত্বে এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদ দাউঝালি হাডিং নামে স্তরায়িত নবোপলীয় প্রত্নস্থল চিহ্নিত করেন। এখানে একটি মসৃণ প্রস্তর হাতিয়ার শিল্প, একটি মৃৎপাত্র শিল্প ও বেশ কিছু গৃহসামগ্রী, যেমন, কর্ন গ্রাইন্ডার, স্টোন রাবার, ম্যুলার উন্মোচিত হয়। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ গারো পাহাড়ের গানোল, রংগ্রাম এবং সিমসাং নদী উপত্যকায় প্রস্তরযুগের সকল পর্বের সাংস্কৃতিক বস্তু সম্বলিত অনেক প্রত্নস্থল সনাক্ত করে। থ্রেব্রোংগিরি, মোকবল আব্রি ও মিসিমাগিরি-২ এ ডলেরাইটের তৈরি কিছু হাতকুঠার, ক্লিভার ও বড় ডিসকয়েডসহ প্রচুর কোর, ফ্লেক ও অস্পূর্ণ হাতিয়ার উন্মোচন করা হয়; নিসিমাগিরি-৩ এবং ডিডামি থেকে বিভিন্ন রকম ব্লেড ও প্রচুর পরিমাণ ব্লেডফ্লেকসহ বেশ কিছু ফ্লুটেড কোর আবিষ্কৃত হয়। গারো পাহাড়ে আর এক ধরনের ভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রত্নবস্তু পাওয়া যায়, যা পূর্বাঞ্চলীয় পেব্ল ঐতিহ্য নামে পরিচিত। সিমসাং-নাঙ্গাল উপত্যকার নাঙ্গালবিব্রায়, ডলেরাইট ও চার্টের নুড়ির তৈরি এ সংস্কৃতির পেব্ল ও ফ্লেক হাতিয়ার চিহ্নিত করা হয়েছে।

সেলবাগিরি ও থেব্রোংগিরিঃ
সেলবাগিরি ও থেব্রোংগিরিতে অবস্থিত প্রত্নবস্থলগুলোর ভূপৃষ্ঠে মাইক্রোলিথ পাওয়া যায়। এর অবস্থান নবোপলীয় স্তরের নিচে। এখানকার উল্লেখযোগ্য নবোপলীয় হাতিয়ার হচ্ছে গ্রাউণ্ড এবং চিপ্ড এক্স (হাতকুঠার) ও হাতের তৈরি ধূসর সাধারণ মৃৎপাত্র। রংগ্রাম আলাগিরি উৎখননে দুটি সাংস্কৃতিক স্তর অবমুক্ত করা হয়:
(১) গোলাকৃতির বাটযুক্ত তাহকুঠারের উপস্থিতি ও সোল্ডার হাতকুঠারের অনুপস্থিতিকে বৈশিষ্ট্যায়িত উপরেরর স্তরের নবোপলীয় সংস্কৃতি, এবং
(২) মৃৎপাত্রবিহীন, ভারী প্রস্তর পাউন্ডারসহ পেব্ল হাতকুঠার ও চপার সম্বলিত এবং নবোপলীয় স্তরের নিচে অবস্থিত হোবিনহিয়ান সংস্কৃতি।
রংগ্রাম নদীর বাম তীরে ও রেনচাঙ্গগিরি গ্রামের ২ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে চিত্রা আব্রিতে উৎখননে দুটি বড় প্রস্তরযুগীয় ফ্লেক-ব্লেড শিল্প এবং নবোপলীয় গ্রাউন্ড-প্রস্তর কুঠার শিল্প উন্মোচিত হয়।

চিত্রা আব্রি
চিত্রা আব্রিতে প্রচুর পরিমাণে সোর্ল্ডাড সেল্ট রয়েছে যা ডলেরাইট দ্বারা তৈরি। আসামের কমরূপ জেলার সারুতরু নামক স্থানে নবোপলীয় সংস্কৃতির হাতিয়ার পাওয়া যায়। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বি.পি বোপারডিকার অরুণাচল প্রদেশের লুহিত জেলার ডেফাবুম অঞ্চলে পুরোপলীয় ও নবোপলীয় ঐতিহ্যেও হাতিয়ার আবিষ্কার করেন।

আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব মণিপুর স্টেট-এর ও.কে সিং এ প্রদেশের বিভিনড়ব এলাকায় বেশ কিছু চুনাপাথরের গুহা আবিষ্কার করেন এবং একটিতে একটি পরিখা খনন করে হাড় ও পাথরের তৈরি হাতিয়ার পান। মিজোরাম থেকে একটিমাত্র পাথরের কুঠারের কথা জানা যায়। নাগাল্যান্ডের কেন্দ্রীয় অংশে সেমা ও লহোটা অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠায় ডাইওরাইট/সারপেন্টাইন পাথরের হাতিয়ারের সংগ্রহ (অবশ্য কিছু হাতিয়ার শেল, সিস্ট, বেলেপাথর দ্বারা তৈরি) এ প্রদেশের প্রাগৈতিহাসিক যুগের নির্দেশ করে। এই সংগৃহীত হাতিয়ারগুলিকে দুটো গ্র“পে ভাগ করা হয়েছে: একটি হচ্ছে সোল্ডারড/ট্যাঙ্গড সেন্ট সমৃদ্ধ এবং অপরটি ত্রিকোণাকার/পয়েন্টেড বাটযুক্ত কুঠার।

বিহারে প্রাপ্ত প্রত্নতত্ত্বঃ
ছোট নাগপুর মালভূমি পালামৌ, রাঁচি, হাজারীবাগ, সংঘির, গয়া এবং সিংভূম জেলাগুলির বিভিন্ন অবস্থান থেকে নিন্মপুরোপলীয় যুগের হাতিয়ার আবিষ্কৃত হয়েছে। দিলীপ কুমার চক্রবর্তী এবং এ.কে. ঘোষ ৭টি উচ্চপুরোপলীয় প্রত্নস্থল (এ প্রত্নস্থলসমূহে প্রাপ্ত হাতিয়ারসমূহ হচ্ছে কোয়ার্টজ এবং চার্টেও তৈরি পয়েন্ট ব্লেড, বিউরিন, ছুরি, ও সুঁচ) আবিষ্কার করেছেন। এখানে চারটি নিমড়ব ও চারটি মধ্য এবং বেশ কিছু উচ্চপুরোপলীয় সংস্কৃতির অবস্থানের কথা জানা গেছে। এ প্রত্নস্থলসমূহে কোয়ার্টজের তৈরি ফ্লেক, হাতকুঠার, স্ক্রেপার, বোরার, পয়েন্ট ইত্যাদি পাওয়া যায়। বিদুলা জয়সাল রাঁচি জেলার নয়টি প্রত্নস্থল থেকে চপিং হাতিয়ার, হাতকুঠার, স্ক্রেপার, ফ্লেক, কোর ক্লিভার ইত্যাদি ত্রিশটি হাতিয়ার পেয়েছেন। এ.কে. ঘোষ উচ্চ সুবর্ণরেখা নদী উপত্যকায় প্রস্তর হাতিয়ার সমেত বেশ কিছু প্রত্নস্থল চিহ্নিত করেন। দিলীপ কুমার চক্রবর্তীও এই জেলায় কিছু প্রস্তর হাতিয়ারের অবস্থান আবিষ্কার করেন।

রাঁচি অঞ্চলের প্রস্তরযুগীয় শিল্পে মুলত উচ্চপুরোপলীয় হাতিয়ারের সমাবেশ ও মাইক্রোলিথ এবং কিছু নিন্ম পুরোপলীয় উপাদান বিদ্যমান। এ হাতিয়ারগুলি সাধারণত কোয়ার্টজ দ্বারা তৈরি এবং কিছু কিছু হাতিয়ার ধূসর-কালো চার্ট দ্বার নির্মিত। প্রতড়বতত্ত্ববিদগণ সিংভুম জেলায় ৪০টি প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নস্থল চিহ্নিত করেছেন। এ অঞ্চলের হাতিয়ারগুলির মধ্যে কোয়ার্টজাইটের তৈরি নিন্মপুরোপলীয় হাতিয়ার (হাতকুঠার, চপার, চপিং হাতিয়ার, ক্লিভার, ডিসকয়েড, কোর, ইত্যাদি) এবং মিহিকণা কোয়ার্টজাইটের তৈরি মধ্যপুরোপলীয় হাতিয়ার (বোরার, পয়েন্ট, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রেপার, রিটাচ্ড ব্লেড, বিউরিন, পয়েন্ট ইত্যাদি) রয়েছে। দিলীপ কুমার চক্রবর্তী সাঁওতাল পরগনা জেলায়, রাজমহল ও দামিন অঞ্চলে উচ্চপুরোপলীয় শিল্পের ব্যাপক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এ ছাড়াও বিহারের মুঙ্গেরের নিকট খড়গপুর রেঞ্জে অবস্থিত পায়েসরায় লোকেলিটি এফ এ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৬৫-৯০ সেমি নিচে ১০৫ বর্গ মিটার আয়তনের একটি মেসোলিথিক বসতি ফ্লোর অবমুক্ত করা হয়েছে এবং ২৬টি ফিনিস্ড মাইক্রোলিথ হাতিয়ার (লুনেট, সাইড স্ক্রেপার বেকড ব্লেড ইত্যাদি ও একটি মাইক্রো-গ্যাভিটি পয়েন্ট) পাওয়া গেছে। এ প্রত্নস্থলটির রেডিওকার্বন ডেটের ক্যালিব্রেটেড রেঞ্জ হচ্ছে ৬৩৭৭ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ৬০৬৭ খ্রিষ্টপূর্ব। ছোটনাগপুর অঞ্চল থেকে কোনো নির্ভরযোগ্য নবোপলীয় প্রতড়বস্থল আবিষ্কৃত হয়নি, যদিও উত্তর বিহারের অ্যালুভিয়াল প্লেনের বিভিন্ন প্রত্নস্থলে (চিরান্ড, সেনার, তারাদি ইত্যাদি) নবোপলীয় স্তরের প্রাচুর্য রয়েছে।

১২৮ সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহসান- প্রাকইতিহাস- বাংলা পিডিয়া।

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৫০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×