somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ার বাজার। একটি বিশাল প্রতারনার মঞ্চ।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের শেয়ার বাজারের সাম্প্রতিক কিছু ভূমিকা আবারও নতুন করে পুরানো একটি প্রশ্নকে সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। প্রশ্নটা হলো আমাদের শেয়ার বাজার কি বিনিয়োগের জন্য না কি জুয়া খেলার জন্য!!

শেয়ার বাজারের সর্বোচ্চ কতৃপক্ষ বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন(বি এস ই সি) ও ঢাকা সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশন(ডি এস ই) কাদের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন ।১৯৯৬ থেকে এই সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করলে এই দুটি কতৃপক্ষকে জুয়াড়িদের বশংবদ না বলার কোন কারন আছে কি? ১৯৯৬ সালে কার্ব মার্কেট তৈরি করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিস্ব করার বুদ্ধি যাদের মাথা থেকে বেরিয়েছিল এখনও তারা সমভাবে সক্রিয়। ম্যনুয়েল থেকে ডিজিটালে তারা আরও অনেক বেশী পোক্ত!!

সংক্ষিপ্ত আকারে সাম্প্রতিক কিছু ব্যপারের বর্ণনা দেওয়া যাক।
এই ২০১৪ সালে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বি এস ই সি এই ৮ মাসে প্রায় ১৫টি কোম্পানীকে আই পি ও এর মাধ্যমে মোটামুটি এক হাজার কোটি টাকারও বেশী মূলধন সংগ্রহ করার অনুমতি দেয়।২০১৩ সাল ধরলে এই টাকা তিন হাজার কোটি টাকার বেশী হবে এবংয়থারীতি তারা তা সংগ্রহ করে নিয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানি তাদের শেয়ারের প্রকৃতমূল্য ১০ টাকার সাথে প্রিমিয়াম হিসাবে অতিরিক্ত আরও ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নিয়ে যায়। অথচ এসব কোম্পানি কোনটাই প্রিমিয়াম নেওয়ার মত নামকরা কোম্পানি নয়।

উল্লেখ্য যে প্রিমিয়াম সাধারনত নামকরা ও চলতি অবস্থায় লাভবান এবংযাদেরকে দস্তুর মত হাতে পায়ে ধরে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত করতে হয় তাদেরকেই দেওয়া হয়।মূলত এসব কোম্পানিগুলোকে আনা হয় বিনিয়োগকারিদের স্বার্থে।কারন বছর শেষে এরা ব্যবসায়ে লাভ করে ভাল এবং বিনিয়োগকারিদেরও ভাল লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। স্মরন কালের মধ্যে তেমন একটা কোম্পানি এসেছে গ্রামিন ফোন । ২০০৯ সালে ৬০ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে।তাদের যে পরিমান মূলধন ও লাভ সে হিসাবে এটাকে কমই বলতে হয়।সে হিসাবে বর্তমানে আই পি ও তে আসা কোম্পানিগুলোর এক টাকাও প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য নয়।

কেন এসব যদুমধু কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম দেওয়া হচ্ছে তার উত্তরে বি সি ই সি যে উত্তর দিয়েছে তা রীতীমত আতংকজনক ।তারা না কি শুধু কাগজপত্র দেখেই আই পি ও অনুমতি দিয়ে দেন ।সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা কারখানা সঠিক আছে কি না তা সরেজমিনে দেখার প‌্রয়োজন মনে করেন না ।
কোন ক্ষূদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে চাইলে তার একটি ট্রেড লাইসেন্স দরকার হয় আর এই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য কতৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ির অফিস পরিদর্শন করে তারপর লাইসেন্স প্রদান করেন অথচ শত শত কোটি টাকার মামলা আই পি ও তে কোম্পানি বা কারখানা পরিদর্শন করার কোন ব্যবস্থা নেই।



যারা সাধারন মানুষের কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে তাদের অফিস-কারখানা আছে কি নেই তা তা দেখার মত সময় বি এস ই সির নেই। এখন কেউ যদি ভাবে "ডাল মে বহুত কুছ কালা হায়" তাকে কি দোষ দেওয়া যাবে ?

শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলেকে তিনটি ক্যটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে,"এ", "বি" ও " জেড"। যে সব কোম্পানি প্রতি বছর লভ্যাংশ প্রদান করে তারা সাধারনত এ এবং বি ক্যটাগরির অন্তর্ভুক্ত আর যারা বছরের পর বছর কোন লভ্যাংশ দেয় না তাদেরকে জেড ক্যটাগরিভুক্ত করা হয় ।অন্য ক্যটাগরির শেয়ার তিন কার্যদিবসে বিক্রয়যোগ্য হলেও জেডভুক্ত শেয়ার দশ কার্যদিবসে বিক্রয়যোগ্য হয়।এটা জেডভুক্তদের জন্য শাস্তি। নিয়মটা বড় অদ্ভুত। কারন এতে কোম্পানির কোন ক্ষতি হয় না ।ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারিরা। তারচেয়ে অদ্ভুত হল বিনা কারনে কোন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে বাড়তে তিন-চার গুন হয়ে গেলে ডি এস সির টনক নড়ে এবং কেন দাম বাড়ছে তার কারন সংশ্লিষ্ট কেম্পানির কাছে জানতে চায় আর কোম্পানি জবাবে জানিয়ে দেয় মূল্য বৃদ্ধির কোন কারন তাদের জানা নেই।তদন্ত হয়ে গেল। দীর্ঘদিন ধরে এমন তদন্ত তদন্ত খেলা চলছে কারও করার কিছু নেই।

আমি শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ নই। অর্থনীতিবিদও নই। কিন্তু এই শেয়ার বাজারে যা চলছে তা বুঝার জন্য বিশেষ জ্ঞানের কি দরকার আছে ?সাদা চোখেই সব দেখা যাচ্ছে।

এই যে দুর্বল ভিত্তির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেলে তদন্ত তদন্ত খেলা,দুর্বল কোম্পানিগুলিকে অধিক মূল্যে শেয়ার বাজারের তালিকাভূক্ত করা সবকিছুই করা হচ্ছে ডি এস ই তথা ব্রোকারেজ হাউজগুলির স্বার্থে কারন যত বেশী ক্রয়-বিক্রয় ব্রোকারেজ হাউজগুলির তত বেশী লাভ।বিনিয়োগকারি মরলে কার কি আসে যায় !!!!এই ব্রোকারেজ হাউজ আর মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারিদের দস্তুরমত হাতে পায়ে ধরে টাকা ধার দিয়েছে শেয়ার কেনার জন্য।অদ্ভুত দেশ।অদ্ভূত প্রতারনা!!

কথায় আছে মুর্দা বেহেশতে যাক আর দোজখে যাক হুজুরের টাকা মাফ নেই।বেচা-কেনা লোকসানে বা লাভে করুন ব্রোকারেজ হাউজের হাদিয়া মাফ নেই।
অদ্ভুত নিয়মের শেষ নাই।একটা নিয়ম আছে কোম্পানি যেদিন লভ্যাংশ ঘোষনা দিবে সেদিন ঐ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়া বা কমার কোন সীমারেখা নেই।এই নিয়মের সূযোগ নিয়ে সদ্য ও টি সি(জেডভুক্ত কোম্পানিগুলো যখন একেবারে অচল হয়ে যায় তখন তাদেরকে এখানে রাখা হয়। অনেকটা ও এস ডির মত) মার্কেট থেকে আসা ওয়াটা ক্যমিকেল নামে একটি অখ্যাত কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনেই ৫৪ টাকা থেকে ৫২৪ টাকা হয়েছিল।সবচেয়ে দুখঃজনক হলো সর্বোচ্চ দামেও ক্রেতা পাওয়া গিয়েছিল।

আমি আগেই বলেছি শেয়ার বাজার আমি বুঝি না। অন্যদের দেখাদেখি নিজেও কিছু লগ্নি করেছিলাম। এখন "ভিক্ষা চাই না মা কুত্তা সামলা" অবস্থা।
কিন্তু যে ভাবে প্রকাশ্যে শেয়ার বাজার নিয়ে ডি এস ই জুয়া খেলছে এতে মনে হয় না কাউকে তারা পরোয়া করে।তারা এত বেশী বেপরোয়া যে প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে উদোম গায়ে বিনিয়োগকারিদের দিকে সামনের দিক ফিরিয়ে" হিস্যু" করছে আর পিছনের দিক অন্য কারও দিকে ফিরানো। ভাবখানা এরকম "পারলে কিছু করো"। আসলেই এদেরকে করার কিছু করার নেই ১৯৯৬ তে এদের কিছু করা যায় নি ২০০৯ সালেও এদের স্পর্শ করা যায় নি। কেন ? কারন এরা শুধু গডফাদার নয় এরা গড গ্র্যান্ডফাদার!!

এভাবে আর কতদিন ব্রোকারেজ হাউজ তথা ডি এস সি বিনিয়োগকারিদের বস্ত্র হরনের খেলা চালিয়ে যাবে ? ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারিরা কোথায় যাবে?এভাবে পতঙ্গের মত আগুনের ফাঁদে ঝাপিয়ে পড়বে আর মরবে ?এই ব্রোকারেজ হাউজগুলো কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী ?সরকার কি ভেবে দেখেছে শেয়ার বাজারের দুটি উত্থান পতনের সময় তারা নিজারাই ক্ষমতায় ছিল !!! তবুও সরকারের টনক নড়বে না!!

অথচ সরকার শেয়ার বাজারের কিছু আইনের পরিবর্তন করেই স্থীতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে কারন বর্তমানের প্রায় সবগুলো আইন ও নিয়ম ব্রোকারেজ হাউজ এবংকোম্পানিদের স্বার্থ রক্ষা করে।যেমন কোন কোম্পানি যদি লভ্যাংশ দিতে না পারে তাকে জেড ক্যটাগরি অথবা ও টি সি মার্কেটভূক্ত করা হয় । এতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কিন্তু মোটেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।ক্ষতিটা বিনিয়োগকারির।
বর্তমানে ৬৬ টি কোম্পানি ও টি সি মার্কেটে আছে এতে কোম্পানিগুলির কি কোন সমস্যা হচ্ছে ?
কোন পরিদর্শন না করে আই পি ও এর মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া । অবিশাস্য।ভয়াবহ ।

সরকার কি শেয়ার বাজার নিয়ে সত্যিই কিছু ভাবেন ?


সরকারের জরুরিভাবে ভাবা উচিত কারন আবার যদি শেয়ার বাজারের পতন হয় তার সাথে আরও অনেক কিছুর পতন হতে পারে।





সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৩
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×