রায় হুবহু ছাপাতে হবে : ড. কামাল, বিচারপতি আমীরুল
সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার একমাত্র সংসদের : সা কা চৌধুরী
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের রায় কি পদ্ধতিতে সংবিধানে সংযোজিত করা হবে এ নিয়ে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এদের একাংশ মনে করেন, আদালতের রায় হুবহু ছাপিয়ে তা প্রকাশ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন ও হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেছেন, আদালতের রায়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়ে গেছে। এখন সরকারকে বিজি প্রেসের মাধ্যমে ছাপিয়ে তা প্রকাশ করতে হবে। অপরাংশ মনে করেন, রায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার এখতিয়ার সংসদের। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের একমাত্র এখতিয়ার সংসদের। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা রাখার কোন সুযোগ সংবিধান বিচারকদের দেয়নি। অন্যদিকে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত সংসদের বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি বলেছেন, আমরা কোন বিতর্কে যাব না। সবকিছুই পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী সংক্রান্ত তাদের রায় প্রকাশ করে। এই রায় প্রকাশিত হওয়ার পর কিছু বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে নিষিদ্ধ হবে এবং আদালতের রায় কিভাবে সংবিধানে সংযোজিত হবে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধের বিষয়ে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করবে। এ বিষয়ে সরকারের কোন কিছু করার নেই। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা জানিয়েছেন, কমিশন কোন দলের নিবন্ধন বাতিল করবে না। সরকার যেসব দল নিষিদ্ধ করবে কমিশন শুধু তাদের নিবন্ধন বাতিল করবে।
অন্যদিকে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির আহবায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধান সংশোধন হয়ে গেছে। এখন সরকার একটি গেজেট প্রকাশ করতে পারে। এজন্য সংসদে কোন বিল উত্থাপনের দরকার নেই। সরকার যে বিশেষ কমিটি করেছে তার সঙ্গে আদালতের রায় বাস্তবায়নের কোন সম্পর্ক নেই।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, আদালতের রায় হুবহু ছাপানোর পর সংসদ যদি মনে করে তা নতুন করে সংশোধন করার প্রয়োজন তা হলে এই এখতিয়ার সংসদের রয়েছে। কিন্তু আগে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের এই অভিমতের প্রতি দ্বিমত পোষণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, ‘সংসদের দায়িত্ব কি আর সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব কি ড. কামাল হয়তো ভুলে গেছেন। উনারা তাদের স্বার্থ অনুযায়ী কথা বলছেন, এজন্য তাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে আমি বলতে চাই, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র এখতিয়ার জাতীয় সংসদের। সংবিধান আর কোন পন্থার সুযোগ রাখেনি।’
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিসহ সকল বিচারপতি সংবিধানের তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত একটি শপথ বাক্য পাঠ করে বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সংবিধান অনুযায়ী তিনটি দায়িত্বে তাদের ওপর অর্পিত রয়েছে সংবিধান রক্ষা, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করা অথাৎ এই সংবিধান যে ভাবে রয়েছে তা সংরক্ষণের দায়-দায়িত্ব তারা শপথ করেই নিয়েছেন।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, রক্ষক হয়ে ভক্ষণের ভূমিকা রাখার কোন সুযোগ সংবিধান তাদের দেয়নি। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের রায় বিজি প্রেস ছাপিয়ে তা সংবিধানে অনুভুক্তির কথা ড. কামাল বলছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি অষ্টম সংশোধনীর মামলার রায়ের নজির তুলে ধরেছেন। সালাহউদ্দির কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি অষ্টম সংশোধনীর মামলার রায় একটি অবৈধ রায়। উকিল ও জজ সাহেবরা মিলে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এই কাজটি সেদিন তারা করেছিলেন। সেদিন ওই অবৈধ কাজের কেউ প্রতিবাদ করেনি বলেই তারা সংসদকে অবজ্ঞা করে বিজি প্রেসের মাধ্যমে নতুন সংকলন প্রকাশের দুসাহস দেখাতে পারছেন।’
তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনীর রায় রাজনৈতিকভাবে একটি স্পর্শকাতর রায়। আদালতের ভেতরে-বাইরে কোথাও এ ব্যাপারে কোন ঐকমত্য হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিচারকরা তাদের নিজেদের শপথ ভঙ্গ করেছেন। তারা তাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এই রায় দিয়েছেন।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের রায়েই স্ববিরোধিতা রয়েছে। সামরিক আইন যদি অবৈধ তাহলে তাদের সকল ফরমানই অবৈধ হবে। ৪১টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ১১টি হাইকোর্ট এবং ৯টি আপিল বিভাগ অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ৬টি হচ্ছে ‘আল্লাহ’ সংশ্লিষ্ট। উনারা রায় দিয়েছেন ‘আল্লাহ’কে সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার জন্য। আর তিনটি হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বার্থসংশ্লিষ্ট।
সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত সংসদের বিশেষ কমিটির কো চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, ‘আমার অভিমত দেয়ার ক্ষমতা নেই। তবে আমরা সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সংসদের ক্ষমতা সংসদ প্রয়োগ করবে। আদালতের ক্ষমতা আদালত প্রয়োগ করবে। প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সংবিধানে নির্দিষ্ট রয়েছে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে সুরঞ্জিত সেন বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতা ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একমাত্র সংসদের।’
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





