somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের নামে আধুনিক যুগে প্রতিটি দেশের জনগণই প্রকৃতপক্ষে নিজ দেশে কারাবন্দী

১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের নামে আধুনিক যুগে প্রতিটি দেশের জনগণই প্রকৃতপক্ষে নিজ দেশে কারাবন্দী জীবনযাপন করেছে। কিন্তু মিশরীয়দের জন্য বুঝি ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হয়ে প্রতিভাত হয়েছে। ভৌগলিক কারণে মিশর বরাবরই ইহুদীবাদীদের ষড়যন্ত্রের লীলাভূমি হয়ে থেকেছে। পাশাপাশি প্রাচীন ইতিহাস ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব থাকায় মিশর বরাবরই পুঁজিবাদী ও কমিউনিস্ট সাম্রাজ্যবাদীদের মল্লযুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে থেকে যায়।
মিশরের ক্ষমতাসীন মোহাম্মদ আলী পাশা রাজবংশ নীলনদের দেশকে যাবতীয় বৈদেশিক ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত রাখার মতো প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন না। এদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিলাসব্যসন আর ইন্দ্রিয়পরায়ণতায় ডুবে থাকেন। এই বংশের শেষ বাদশাহ ফারুক ছিলেন বয়সে তরুণ। বৈদেশিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তাঁর সামর্থ তো ছিলোই না, উল্টো ব্যক্তিগত কিছু বিপর্যয় ও চারিত্রিক সমস্যার জন্য তিনি এক ভাঁড়ে পরিণত হন।
বাদশাহ ফারুক ছিলেন আমার প্রায় দ্বিগুণ মোটা। এর গাড়ি দুর্ঘটনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তিনি স্হুলদেহী হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর মা রাজমাতা নাজলি সাবরি ছিলেন উদ্ভট চরিত্রের মহিলা, যিনি প্রাসাদের কর্মচারী ও স্বামী বাদশাহ ফুয়াদের জ্ঞাতি ভাইয়ের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকেন।
একজন সৌখিন গাড়ি ও মুদ্রা সংগ্রাহক হবার পাশাপাশি ফারুক ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের শীর্ষ পর্ন ছবি ও চলচ্চিত্রের সংগ্রাহক। ১৯৫৩ সালে তাঁকে ক্ষমতাচ্যূত করার পর সেনাবাহিনী রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে একটি প্রকাণ্ড দ্বিতল ভবনের খোঁজ পায়, যার ছাদ থেকে মেঝে পর্যন্ত ঠাঁসা ছিলো হাজারো পর্নগ্রাফিক উপাদান।
যাহোক, ১৯৫৩ সালে ফারুকের পতনের পর মিশরীয় সেনানায়করা ক্ষমতায় এসেও মিশরকে ইহুদীবাদী ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত করতে পারেননি। উল্টো তারা মূল শত্রু হিসেবে বেছে নেন ইখওয়ানুল মুসলিমীন নামের একটি ডানপন্থী সংগঠনকে। জেনারেল নাসের মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র হিসেবে পশ্চিমের বিরোধিতার অংশ হিসেবে বেশ কয়েকবার ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি পরাজিত হন। নাসেরের পরবর্তী আনোয়ার সাদাত তো খোলাখুলিভাবেই ইসরাইলের সাথে ঝগড়াঝাটি শেষ করে মিশরকে, মিশরের বিশাল সেনাবাহানীকে ইসরাইলের শিখণ্ডী মিত্রতে পরিণত করেন।
২০১২ সালে হোসনি মোবারকের পতনের মধ্য দিয়ে প্রায় ছয় দশকের সামরিক শাসনে সাময়িক ছেদ পড়ে। মিশরীয়রা ভোটে নির্বাচিত করে মোহাম্মদ মুরসিকে। দেশটির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম নির্বাচিত শাসক। ইখওয়ানের নেতা হলেও তিনি দৃশ্যত পশ্চিমের বিরাগভাজন ছিলেন না। কিন্তু বছর না ঘুরতে তাঁকেও বরতরফ হতে হয়। মিশরে আবার পুরানো দিন ফিরে আসে। ইসরাইল তাদের দক্ষিণ সীমান্তে এবার এমন একজন মুসলিম নামধারী শাসক পায়, যার মা ইহুদী। বলা বাহুল্য, ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী ইহুদীর গর্ভে অন্য ধর্মাবলম্বীর ঔরসে জন্মানো সন্তানও ইহুদী হিসেবেই গণ্য হয়।
মোহাম্মদ মুরসিকে ফাঁসীর দণ্ড প্রদান তাই খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিলোনা। মিশরীয়রা যে প্রকৃতপক্ষে একদম স্বাধীন নয়, এই রায় তারই প্রমাণ। আমার মনে হয়, যতোদিন ইসরাইল থাকবে, ততোদিন মিশরীয়দের স্থায়ী মুক্তি আসবে না...।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×