যখন দেখি কত অর্থহীন কারনে, কত সহজে বিনাকারনে জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, তখন মাঝে মধ্যে মনে আসে এই প্রশ্ন: জীবনের কি কোন অর্থ আছে? এই যে এ্যত ঘৃণা, রাগ, অভিমান, অনুরাগ, ভালবাসা, স্নেহের বন্ধন দিয়ে জড়ানো মোড়ানো জীবন এর সত্যি কি কোন গভীরতর মানে আছে।
যত বন্ধন তত কষ্ট, তত ভয়, হারানোর ভয়ে সদা কম্পমান মন, তাই নিরাপত্তা খোঁজে মানুষ, লড়াই করে, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘ভবিষ্যত পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাব আমি’।
বন্ধন নাই করে দিলে কষ্টও শেষ, কিন্তু জীবনও যে শেষ, কারন বন্ধন আর সংঘাতেইতো জীবনের উপলব্ধি। ‘সহস্র বন্ধন মাঝে মহা আনন্দময়, লভিমু মুক্তির স্বাদ’। রবীন্দ্রনাথ অনেক বন্ধনকে স্বীকার করেই মুক্তির পথ খোঁজার কথা বলেছেন।
নিরাপত্তার জন্য দেয়ালের পর দেয়াল তুলছি আমরা। তাতে কী লাভ হচ্ছে বেচারা মনটা গুহাবাসী বাদুরের মত হয়ে যাচ্ছে আলো বাতাস হারিয়ে।
বন্ধনও চাই, আলোও চাই, নিরাপত্তাও চাই, কিন্তু দেয়াল চাই না, গুহার আধাঁর চাইনা।
ভোট গোনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোলের জেরে চারজন মানুষ মরে গেল, কার ভোট, কে মরে? কেনো গুলি করতে হবে।
সবগুলি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে অস্ত্র তুলে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিলে কেমন হয়।
তাইলে কি আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কমে যাবে? নাকি বেড়ে যাবে।
আচ্ছা কেমন হয় সারাদেশটাকে যদি আমরা অস্ত্রমুক্ত করতে পারি? পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজেবি, আনসার কারো হাতে মারনাস্ত্র নেই, কেমন হবে দেশটা।
দেশের জনগনের নিরাপত্তা নষ্ট হবে?
দুষ্টু লোকেদের রাজত্ব হয়ে যাবে? হয়ত। খুনীদের, ধর্ষকদের, চোরদের, ডাকাতদের, চোরাকারবারীর, নেশার কারবারীদের পোয়াবারো হবে?
হবে হয়ত। কিন্তু এখনোতো সবই চলছে। জেলখানায় লোকের অভাব কোন কালে হয়েছে বলে শুনিনি।
অস্ত্রের ভয়, জেলের ভয় আসলে অপরাধ দমনে, মানুষের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকরী, ফলপ্রসূ? ‘চোরে না শোনে ধর্মের বাণী’।
বাইরের জোর খাটিয়ে আসলে মানুষকে ‘কন্ট্রোল’ হয়ত কিছুটা করা যায়, কিন্তু তাকে ভাল বানানো যায় না। ভাল বানানোর পথ হচ্ছে শিক্ষা, পরিবার আর সমাজের কাছ থেকে পাওয়া মূল্যবোধ। সমাজে, পরিবারে প্রকৃত শিক্ষার চাষাবাদ হলেই তবে, সমাজে ভাল মানুষ তৈরী হবে, তাকে বাইরে থেকে জোর খাটিয়ে, ভয় দেখিয়ে ‘কন্ট্রোল’ করতে হবে না, সে নিজেকে নিজেই সঠিক পথে চালাবে। অস্ত্র লাগবে না, জেল লাগবে না।
সমাজে, পরিবারে প্রকৃত শিক্ষাই সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, জেল না, অস্ত্র না, দেয়াল না।
একবার আসুন ভেবে দেখি প্রকৃত প্রস্তাবে জেল, অস্ত্র, দেয়াল কাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সাম্প্রতিক সময়ে একজন প্রতিমন্ত্রীর হুমকির কথা মনে পড়ছে? সব বাহিনী আসলে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাকে মজবুত করার জন্য আছে। আমাদের মত সাধারন মানুষদের নিরাপত্তা কথা বলে এইসব বাহিনী রাখা হয়, শক্তিশালী করা হয়, এটা একটা চোখে ধূলো দেয়া অজুহাত; প্রয়োজনমত আম জনতাকে সাইজ করার জন্য, বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই সব বাহিনী আছে, ছিল এবং থাকবে, যতদিন না আমাদের বুঝ হয়।
রাষ্ট্র আমজনতার নিরাপত্তার কথা ভাবে না, তার সব ভাবনা একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের জন্য।
আসুন ভাবি আমরা কীভাবে সব মানুষের জন্য নিরাপদ একটা সমাজ তৈরী করতে পারবো। সেইজন্য আমাদের কী করিতে হইবে?