somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ ও জনগনের ই বন্ধু।

০২ রা মে, ২০২০ বিকাল ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পারভেজ মিয়ার কথা আমরা অনেকেই ভুলেগেছি। কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়া । যিনি নিজের জীবন বাজী রেখে দুর্ঘটনা পানিতে ডুবে যাওয়া বাস থেকে উদ্ধার করেন ১৫ জন যাত্রীকে। ৭ জুলাই ২০১৭ দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়ার ডিউটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে মতলবগামী মতলব এক্সপ্রেস যাত্রীবাহী একটি বাস হঠাৎ অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডোবায় পড়ে যায়। উপস্থিত লোকজন যখন দাঁড়িয়ে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলেন। খবর পেয়ে মুহূর্তের দায়িত্বরত কনস্টেবল পারভেজ মিয়া মহানায়কের মতো জীবনবাজি রেখে পচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা ডোবায় লাফিয়ে পড়েন। একে একে গাড়ির সবকয়টি জানালার গ্লাস ভেঙে দেন। ততক্ষণে গাড়িটির এক তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় গাড়িতে থাকা যাত্রীদের আত্মচিৎকারে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণ ঘটে। নিজেই ডুবন্ত বাসটির ভেতরে ঢুকে উদ্ধার করেন সাত মাস বয়সী একটি শিশুকে। তারপর একে একে উদ্ধার করেন পাঁচ নারীসহ ১৫ যাত্রীকে। পরে পারভেজ মিয়ার সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেন স্থানীয় জনতা ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। পারভেজ মিয়ার বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা ও মানবতায় নিশ্চিত মৃত্যুর ঘড় থেকে ফিরে আসেন বাসের অর্ধশত যাত্রী। দুর্ঘটনার ওই মুহূর্তে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তখন কেউ হয়তো তার দামি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করায় ছিল ব্যস্ত ছিলেন, কারও হয়তো ধান্দা ছিল ডুবে যাওয়া যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করা। ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশ সদস্য শের আলী কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাতের অন্ধকারে একটি বাস উল্টে বেশ কয়েক জন যাত্রী নিহত ও প্রায় সকল যাত্রীর ই আহত। উদ্ধার কাজ শেষে তিন ঘন্টা পর ওখানে দায়িত্বে থাকা ডিবি পুলিশ সদস্য শেরআলীর চোখ যার বাসের নীচে চাপা পরা একটি শিশুর দিকে। শেরআলী নিজের জীবন তুচ্ছ ভেবে নাম পরিচয় হীন জীবিত শিশুটাকে উদ্ধার করে পিতার মত বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে চিৎকার করে শিশু টিকে নিয়ে দৌড়ে ছুটেন হাসপাতালের দিকে। শেরআলীর ঐ দৃশ্য পরের দিন অবশ্য অনেক সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশ হয়ে ছিল।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সজল কুমার কানু গত ৮ এপ্রিল, সমগ্র দেশ যখন করোনার কাছে বন্দী রাত তখন ১০টা পেরিয়ে গেছে। হঠাৎ সজল কুমার কানুর মোবাইলে একটি ফোন আসে। না, কোথাও কোনো খুন, হত্যা, ডাকাতি বা ধর্ষণ হয়নি। তারই থানার একেবারেই দুর্গম এলাকা কেচুটিলা গ্রাম। সেখানে এক অসহায় মা তার তিন সন্তান নিয়ে সারাদিন না খেয়ে আছেন। এ কথা শুনে ওসি কানুর ঘরে যা রান্না করা ছিল, তার সথে মেসের রান্না করা খাবার দুটি টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে সাথে এসআই রাজীব, এএসআই সিরাজ ও মাহফুজকে নিয়ে মোটরবাইকে করে ছুটলেন প্রত্যন্ত এলাকা কেচুটিলার দিকে। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যখন কেচুটিলায় সেই মায়ের দরজার সামনে তারা দাঁড়ালেন, তখন ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁইছুঁই। মাটির ঘরের টিনের দরজায় কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চেয়ে পুলিশ শুনে ভড়কে যান। তারপরও ভয়-ভীতি নিয়ে দরজা খুলে দেখেন, দুই হাতে দুই টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সজল কুমার কানু। ঘরে ঢুকে ওসি সজল কুমার কানু ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া সন্তানদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন। এরপর নিজ হাতে খাইয়ে মায়ের হাতে নগদ পাঁচশ টাকা দিয়ে ভোর রাতের দিকে ঘরে ফেরেন। এই তো গত ১ লা মে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে নবজাতক শিশুকে দত্তক দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে বাড়ী ফেরা পোষাক শ্রমিক মা বাবার কাছে দত্তকের টাকা পরিশোধ করে শিশুটিকে মা বাবার কছে ফিরিয়ে দিয়ে মানবতার আরো একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন গাজীপুর মহানগেরে পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন।

করোনার এই বৈশ্বিক থাবায় আমাদের বাংলাদেশ ও আক্রান্ত। প্রতিদিন ই সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে ও আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বাড়ছে। ভয়াবহ করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বিজ্ঞান প্রতিষেধক আবিস্কারের চেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে দিন রাত। তাই এই মুহুর্তে করোনা প্রতিরোধের জন্য ঘরে থাকার বিকল্প নাই। গত ২৫ মার্চ থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে আমারা প্রায় সকলেই গৃহ বন্দী। আমাদের নিশ্চিন্তে নিরাপদে ঘরে থাকার জন্য নিজেদের জীবন বাজী রেখে করোনার বিরুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। আমাদের মত তারা ও মানুষ তাদের ও পরিবার পরিজন আছে। কিন্তু আজ তারা পরিবার পরিজনের কথা নিজেদের জীবনের কথা চিন্তা না করে দেশ ও জাতির শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শুধু নিরাপত্তা ই না আজ যখন করোনার ভয়ে আমরা মানবিকতা মায়া মমতা কে ভুলতে বসেছি, প্রিয় মানুষ টি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর যখন শেষকৃত্যের জন্য পরিবারের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়না তখন ও পুলিশ মানবিকার পরিচয় দিতে স্বার্থক হয়েছে। তারা কাঁধে লাশ নিয়ে মৃত মানুষটির সেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করছেন। আমাদের দেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ঠেকাতে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন আমাদের পুলিশ বাহিনী। এতে অনেককে জীবন ও দিতে হয়েছে।

পুলিশের অনেক সদস্য আজ করোনায় আক্রান্ত অনেকই আবার মৃত্যু রবন ও করেছেন। সর্বশেষ ২ মে হিসেব অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৪১ জন এরমধ্যে শুধু ডিএমপিতেই ৩৫৬ জন। আর ৫ জন পুলিশ সদস্যকে করোনার সাথে যুদ্ধ করে জীবন দিতে হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্যের জীবনে যেমন সাহসিকতার কাহিনী আছে, তেমনি বিড়ম্বনার কাহিনী ও আছে। যেমন মানবিকতার কাহিনী আছে, তেমনি আছে রূঢ়তার কাহিনী। তবে আমাদের কাছে পুলিশের সাহসিকার চেয়ে অনাচারের কাহিনী মানবিকতার চেয়ে অমানবিকতার কাহিনী ই শোনা যায়। আমাদের পুলিশ একটি বিরাট বাহীনি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের তথ্য অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১লাখ ৮৮ হাজার ৭২৪ জন। ভাল মন্দ মিলিয়ে ই কোন জাতি গোষ্ঠী বা বাহিনী। আমাদের পুলিশ ও ভাল মন্দের বাহিরে নয়। তবে বিশেষ কিছু কাজে আমাদের পুলিশ সমালোচিত। আমাদের অনেকের ই মন্তব্য আমাদের পুলিশ একটি দুর্নীতি গ্রস্হ্য বাহিনী যা মোটে ও সঠিক নয়। আমি আগেই বলেছি ভাল মন্দের মিলেই একটি বাহিনী। প্রবাদে কথা মক্কায় ও চোর যায় লংকায় ও বানর যায়। আমাদের পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমাদের সাধারন মানুষের যেই বিরূপ ধারনা তার সম্পুর্ন দায় কি তাদের? না মোটেও না। আমাদের রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের অনেকের মধ্যেই বছরের পর বছর ধরে যেই দুর্নীতির প্রতিযোগিতা চলে আসছে তার ই প্রভাব আজ আমাদের রাষ্ট্র তথা সমাজ ব্যবস্হার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। একজন পুলিশ সদস্যকে যখন চাকুরি জীবন শুরু করতে হয় বাপের জমি বিক্রির টাকা ঘুষ দিয়ে। তখন কিভাবে আমরা একটি শুদ্ধ পুলিশ বাহিনী আশা করতে পারি? তাই আমাদের রাষ্ট্রের উর্ধতন কর্তাব্যক্তিরা যদি সৎ হন, দুর্নীতি না করে জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে মানবিক হন, তাহলে পুরো বাংলাদেশের চিত্রটাই বদলে যেত। আর তাঁরা যদি পুলিশকে নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতেন, তাহলে সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা বদলে যেত।

মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা গৌরবোজ্জ্বল। জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকাল সহ প্রতিটি মুহুর্তে রাষ্ট্রের এই অতন্দ্র প্রহরী পুলিশ। তাই আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অন্য চোখে না দেখে বন্ধু হিসেবে মেনে নেই। রাস্তার পাশে থাকা পুলিশ সদস্যের প্রতি বন্ধুতের হাতটি এগিয়ে দেই। আমাদের পুলিশের ও উচিত হবে তাদের প্রতি জনমানুষের আস্তা ভালবাসা ফিরিয়ে আনার জন্য বন্ধু হয়ে জনগনের পাশে দাঁড়ানো। বিপদের সময় মানুষের আশ্রয়স্থল ও ভরসা ই হলো রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী।
একটি রাষ্ট্রের নাগরিকের বিপদের বন্ধু ই হলো পুলিশ এটা সব সময় ই তাদের ও মাথায় রাখতে হবে। তাহলেই পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ধারনা বদলাবে। সাধারন মানুষ ও পুলিশকে বন্ধু হিসেবে ই গ্রহন করবে।



৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×