somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখা সম্ভব?

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন না জীবিকা আগে? প্রশ্নটা খুবই জটিল। যিনি প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক তার কাছে জীবন আগে। কারণ তিনি বেঁচে থাকলেই তার ওই বিত্তবৈভবের মাধ্যমে আয়েশী জীবনযাপন করতে পারবেন। একজন গরিব দিনমজুর বা নিম্ন মধ্যবিত্তের কাছে এই প্রশ্নটি যদি করা হয় তার উত্তর হবে পেটে থাকলে পিঠে সইবে। অর্থাৎ তার কাছে জীবিকাই আগে। পেটের ক্ষুধার কাছে মৃত্যু একেবারেই তুচ্ছ। তার প্রমাণ আমার দেখছি ও দেখে আসছি। আমাদের পোশাকশিল্পের শ্রমিকরাই তার বড় প্রমাণ।

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত এটা আমি নিশ্চিত। আমাদের পোশাকশিল্পের প্রতিটি শ্রমিকও এর বাইরে নয়। তারপরও তারা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে শুধু পেটের তাড়নায় কাজে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মতো রাস্তার রিকশা বা অটোরিকশাচালক বা অন্য যেকোনো পেশার মানুষই আজ বাইরে আছেন শুধু পেটের প্রয়োজনে।

গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, আগামী ১০ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে। ইতোমধ্যে মসজিদও নামাজের জন্য খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবক্ষেত্রেই শর্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। পোশাকশিল্পের কারখানাগুলোও ওই একই শর্তে খোলা হয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যের মাধ্যমে জেনেছি অনেক কারখানাই যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এটাও সত্য যে যথেষ্ট ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক কারখানায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব না। আর আমরা বাংলাদেশের মানুষ নিয়মনীতির তেমন তোয়াক্কাও করি না। সবকিছুতেই আমাদের একটা উদাসীন ভাবে সেটা অনেক পুরোনো স্বভাব।


চলমান করোনা পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানা ও দোকানপাট খোলায় করোনা সংক্রমণ কিছুটা বাড়বে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষজ্ঞদেরও মতামত মে মাসজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকবে। অবশ্য এর বাস্তবতাও আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে এবং মানুষের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সরকারের এর বাইরে অন্য কোনো পথ খোলা নাই। আমার মত এমন একটি রাষ্ট্রে মাসের অধিককাল সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রেখে মানুষকে ঘরে রাখা কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব না।

হয়তো অনেকেই আজ সমালোচনা করে বলছেন সরকারের ভেতরে থাকা অনেকেই না মন্তব্য করেছেন দেশ কানাডা ছুঁই ছুঁই সিঙ্গাপুরের চেয়ে আমাদের অর্থনীতি এখন ভালো। ঢাকাকে প্যারিস বা লস এঞ্জেলসও ভেবেছেন অনেকে। যারা এসব মন্তব্যের সমালোচনা করছেন তাদের বলব- আমাদের সরকারের ভেতরে অনেক চাটুকার তেলবাজ আছেন যারা সবসময়ই যোগ্যতার মাপকাঠিতে নয়, শুধু চাটুকারিতা মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশ হিসেবে আছেন।

আমার মনে হয় খন্দকার মোশতাকের চেয়ে বড় চাটুকার আর কেউ ছিল না। আর এই খন্দকার মোশতাকই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঠিক পরমুহূর্তেই সেজেগুজে ক্ষমতাভার গ্রহণের জন্য বঙ্গভবনে হাজির। যুগে যুগে খন্দকার মোশতাকের উত্তরসূরীরা রাজনীতি ও ক্ষমতার অংশ হিসেবে থাকবে এটা বাস্তব। আমাদের দেশের বাস্তব চিত্র কী এটা আমরা প্রতিটি নাগরিকই উপলব্ধি করতে পারি। আমাদের কাছে যারাই এমন অলৌকিক তথ্য উপস্থাপন করেন তাদের কাহিনী মায়ের কাছে মামার বাড়ির গল্প উপস্থাপনের মতোই।

এবার আসি করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বের প্রশ্নে। আমাদের ঢাকার শহরের কতগুলো বিপণিবিতান আছে যেখানে খোলামেলা পরিবেশে কেনাকাটা করা সম্ভব? হাতেগোনা কয়েকটা হবে। বাংলাদেশের আধুনিক বিপণিবিতানগুলোর মধ্যে বসুন্ধরা সিটি শপিংমল ও যমুনা ফিউচার পার্কই বিশেষ বিবেচনায় আসে। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিস্তার কথা মাথায় রেখে ইতোমধ্যে এই বিপণিবিতানগুলো ঈদ শপিংয়ে খুলবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার গুলিস্তান, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, মৌচাক, মিরপুরসহ দেশের অন্যান্য বিপণিবিতানে হাঁটতে গেলেই গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানা তো কোনোভাবেই সম্ভব না। বিপণিবিতানগুলোতে যারা কর্মরত আছেন তাদের প্রায় সকলেই নিম্নবিত্তের এখানে তাদের শারীরিক নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা কে নেবেন এটা একটা বড় প্রশ্ন।

যদিও বিজিএমইএ থেকে বলা হয়েছে, কোনো পোশাক শ্রমিক কাজে থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হলে এর দায় তারা নেবেন। কিন্তু কোনো এক টেলিভিশনের টকশোতে দোকানমালিক নেতারা এদের দায় নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তার মানে সৃষ্টিকর্তা না করুন যদি কোনো বিপণিবিতানের দোকানকর্মী যদি কাজে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তা হলে তার পুরো পরিবারকেই পথে বসতে হবে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ প্রতিটি শহরেই সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি, তা প্রতিদিন আরও ঊর্ধ্বমুখী। ইতোমধ্যে সরকারি ছুটি ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় ১০ মে থেকে সব দোকানপাট খুলে দিল। হঠাৎ করে বিপুল লোকসমাগম বেরে যাওয়াই স্বাভাবিক।

আর এই বিপণিবিতানগুলোর কর্তৃপক্ষ যতই সরকারের বিধিনিষেধ মানার কথা বলুক আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এটা হবে শুধুই তাদের মুখের বুলি। বাস্তবে তা কোনোভাবেই মানা সম্ভব না। তাই বিপণিবিতান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকারের নতুন করে চিন্তা করা জরুরি বলে অনেকের মতো আমি মনে করছি।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×