somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"শেষ দেখা"

২৭ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ২.০০ টা । শরীরটা খুব হালকা লাগছে রাত্রীর । জড়ানো পায়ে হেটে এসে বেলকনিতে দাড়ালো । চাদের আলোতে ছেয়ে গেছে পুরো ঢাকা শহর । আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে । রাত্রীর মনে হচ্ছে চাঁদ ওকে দেখে তার রুপের সমৃদ্ধি বাড়াচ্ছে । রাত্রী তারা দেখছে । দেখছে রাতের আকাশের সৌন্দর্য্য । আর ভাবছে কত সুন্দর এই পৃথিবী ।

হঠাৎ । এমন সময় মোবাইলে রিং বেজে উঠল । ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলো সে । মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল অপরিচিত নাম্বার । ভাবছে রিসিভ করবে কি করবে না । অবশেষে রিসিভ করল । খুবই পরিচিত একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেল সে । একসময় যে কন্ঠস্বর শুনে রাত্রী নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে করত ।

----- হ্যালো, তুমি কেমন আছ ? তুমি কি সুস্থ আছ ।
রাত্রী - হুমম, আমি সুস্থ, খুব সুস্থ ।
----- কেন মিথ্যে বলছ ? আমার মনে হচ্ছে তুমি সুস্থ নেই ।
রাত্রী – না আমি সুস্থ আছি ।
----- ইচ্ছে করে তোমার সাথে কথা বলি । একটু খানি তোমার কন্ঠে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে । তুমি বলেছিলে আমি তোমাকে ফোন দিলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাও । তাই শত ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও তোমাকে আমি ফোন দেই না । তোমাকে আমি সুস্থ দেখতে চাই । আমার ফোনে তুমি বিরক্ত হও, তাই তোমাকে বিরক্ত করি না । তোমার কন্ঠস্বর আমার কাছে আজও মনে হয় মায়াবী ঝর্নাধারা, তোমার হাসির শব্দ আমি আজও শুনতে পাই । আজও মনে হয় আমি আলোকিত জ্যোৎস্নায় স্নান করছি ।
(রাত্রী আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে থাকে । আর চোখের জল ফেলে )
----- আজ আর তোমাকে ফোন না করে পারলাম না । কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার সাথে আজ আমাকে কথা বলতেই হবে । নয়তো আর জন্ম জন্মান্তরে কথা বলা হবে না ।
(রাত্রী কিছুই বলে না । নীরবে কাঁদে )
----- দীর্ঘ তিনটি বছর আমি তোমার তথা না শুনে বধির হয়ে আছি । তোমাকে না দেখে আমি অন্ধ হয়ে আছি । একটু কি আমি দেখা করতে পারি তোমার সাথে ? দূর থেকে দেখে আসব কোন বিরক্ত করব না । তুমি একটু অনুমতি দাও ।
(রাত্রীর কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে আসে । কিছু বলতে পারে না । শুধু কাদেঁ ।)
----- আমাকে ক্ষমা করে দাও রাত্রী । ক্ষমা করো । আমি আর পারছি না । পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকে একটু দেখতে চাই । একটু । একটু । একটু ।
(রাত্রী কান্না জড়ানো কন্ঠস্বর শুনতে পায় )
রাত্রী – ঠিক আছে । কাল সকাল ৮.০০ টায় চলে এসো । আমি আগের ঠিকানায় আছি ।

বলেই লাইন কেটে দিল রাত্রী এবং মোবাইল বন্ধ করে দিল । সে আজ শুধুই আকাশ দেখবে । আকাশের তারার সাথে কথা বলবে । চাঁদের সাথে হাসবে । বিশাল আকাশে ডানা মেলে উড়বে আর গান গাইবে । হঠাৎ মাথাটা কেমন যেন করছে । প্রচন্ড ব্যাথায় অন্ধকার দেখছে । দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরেছে ।


(২)
মিহির প্রতীক্ষায় আছে -কখন সকাল হবে ? বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে । ঘড়ির কাটা আজ যেন নড়ছে না । ভাবছে সে আজ নীল শার্ট পড়বে । তার প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে যাবে । কিন্তু ভোর হচ্ছে না কেন ? প্রকৃতি কেন আজ তার সাথে এমন করছে । তবে কি প্রকৃতি তার সাথে হিংসে করছে । করুক হিংসে । আজ কোন কিছুই তার পথ রোধ করতে পারবে না । খুব টাটকা ফুল কিনবে । তাই সে ভোর হতে না হতেই রওয়ানা হয়ে গেল ।

শাহবাগ থেকে ফুল কিনে সে একটা ট্যাক্সি নিল । ভাবছে - এত সময় লাগছে কেন ? ঠিক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তো । এইতো সেই একই রাস্তা । না ঠিক আছে ।
৬.৩০ দিকেই সে পৌছে গেল । সিড়ি দিয়ে উঠছে আর ভাবছে । রাত্রী হয়তো ওর অপেক্ষায় আছে । কতদিন দেখেনি সে রাত্রীকে । একটা ভুল রাত্রীকে তার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে । আজ সে রাত্রীর কাছে নিজের জীবন সপে দিবে । আজ তাকে ক্ষমা করতেই হবে । রাত্রী খুব ভাল মেয়ে, সে আজ তাকে ক্ষমা করে দিবে । তারপর সে রাত্রীকে নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করবে । ধীরে ধীরে ৪র্থ তলায় উঠে এলো । কলিংবেল বাজালো । আলতো করে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো । ভিতরে তাকিয়ে থমকে গেল । মানুষ ভর্তি বাসাতে । কান্নার গোমট বাতাসে ছেয়ে গেছে পুরো ঘর ।
একজনকে জিজ্ঞেস করল “কি হয়েছে ?
সে জানালো “ রাত্রীকে বেলকনিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে । ফুলের টবে মাথা পড়ে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে । দীর্ঘ দিন যাবৎ রাত্রী অসুস্থ ছিল । কিন্তু রাত্রী কোন চিকিৎসা করতে দেয় নি । নিজেকে তিলে তিলে এভাবে মেয়েটি শেষ করে দিল । ‍”
মিহির স্থবির হয়ে গেলো । পৃথিবীর কোন শব্দই তার শ্রবন শক্তি স্পর্ষ করছে না । তার হাত থেকে ফুল পড়ে গেলো । বিড়বিড় করে বলছে “ এত অভিমান তোমার রাত্রী ! আগে চলে এসেছি বলে তুমি আমাকে এত বড় শাস্তি দিলে । শেষ বারের মতো একটু দেখা করলে না ।‌” মিহির যেন অন্য জগতের মানুষ হয়ে গেছে । সে বিড়বিড় করে আপন মনে কথা বলছে । কাঁদছে আবার হাসছে । মাথা চুলকাচ্ছে । অচেনা দৃষ্টিতে চারপাশে তাকাচ্ছে । ধীরে ধীরে আপন মনে বাইরে বের হয়ে গেলো ।

২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×