রাত ২.০০ টা । শরীরটা খুব হালকা লাগছে রাত্রীর । জড়ানো পায়ে হেটে এসে বেলকনিতে দাড়ালো । চাদের আলোতে ছেয়ে গেছে পুরো ঢাকা শহর । আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে । রাত্রীর মনে হচ্ছে চাঁদ ওকে দেখে তার রুপের সমৃদ্ধি বাড়াচ্ছে । রাত্রী তারা দেখছে । দেখছে রাতের আকাশের সৌন্দর্য্য । আর ভাবছে কত সুন্দর এই পৃথিবী ।
হঠাৎ । এমন সময় মোবাইলে রিং বেজে উঠল । ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলো সে । মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল অপরিচিত নাম্বার । ভাবছে রিসিভ করবে কি করবে না । অবশেষে রিসিভ করল । খুবই পরিচিত একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেল সে । একসময় যে কন্ঠস্বর শুনে রাত্রী নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে করত ।
----- হ্যালো, তুমি কেমন আছ ? তুমি কি সুস্থ আছ ।
রাত্রী - হুমম, আমি সুস্থ, খুব সুস্থ ।
----- কেন মিথ্যে বলছ ? আমার মনে হচ্ছে তুমি সুস্থ নেই ।
রাত্রী – না আমি সুস্থ আছি ।
----- ইচ্ছে করে তোমার সাথে কথা বলি । একটু খানি তোমার কন্ঠে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে । তুমি বলেছিলে আমি তোমাকে ফোন দিলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাও । তাই শত ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও তোমাকে আমি ফোন দেই না । তোমাকে আমি সুস্থ দেখতে চাই । আমার ফোনে তুমি বিরক্ত হও, তাই তোমাকে বিরক্ত করি না । তোমার কন্ঠস্বর আমার কাছে আজও মনে হয় মায়াবী ঝর্নাধারা, তোমার হাসির শব্দ আমি আজও শুনতে পাই । আজও মনে হয় আমি আলোকিত জ্যোৎস্নায় স্নান করছি ।
(রাত্রী আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে থাকে । আর চোখের জল ফেলে )
----- আজ আর তোমাকে ফোন না করে পারলাম না । কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার সাথে আজ আমাকে কথা বলতেই হবে । নয়তো আর জন্ম জন্মান্তরে কথা বলা হবে না ।
(রাত্রী কিছুই বলে না । নীরবে কাঁদে )
----- দীর্ঘ তিনটি বছর আমি তোমার তথা না শুনে বধির হয়ে আছি । তোমাকে না দেখে আমি অন্ধ হয়ে আছি । একটু কি আমি দেখা করতে পারি তোমার সাথে ? দূর থেকে দেখে আসব কোন বিরক্ত করব না । তুমি একটু অনুমতি দাও ।
(রাত্রীর কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে আসে । কিছু বলতে পারে না । শুধু কাদেঁ ।)
----- আমাকে ক্ষমা করে দাও রাত্রী । ক্ষমা করো । আমি আর পারছি না । পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকে একটু দেখতে চাই । একটু । একটু । একটু ।
(রাত্রী কান্না জড়ানো কন্ঠস্বর শুনতে পায় )
রাত্রী – ঠিক আছে । কাল সকাল ৮.০০ টায় চলে এসো । আমি আগের ঠিকানায় আছি ।
বলেই লাইন কেটে দিল রাত্রী এবং মোবাইল বন্ধ করে দিল । সে আজ শুধুই আকাশ দেখবে । আকাশের তারার সাথে কথা বলবে । চাঁদের সাথে হাসবে । বিশাল আকাশে ডানা মেলে উড়বে আর গান গাইবে । হঠাৎ মাথাটা কেমন যেন করছে । প্রচন্ড ব্যাথায় অন্ধকার দেখছে । দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরেছে ।
(২)
মিহির প্রতীক্ষায় আছে -কখন সকাল হবে ? বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে । ঘড়ির কাটা আজ যেন নড়ছে না । ভাবছে সে আজ নীল শার্ট পড়বে । তার প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে যাবে । কিন্তু ভোর হচ্ছে না কেন ? প্রকৃতি কেন আজ তার সাথে এমন করছে । তবে কি প্রকৃতি তার সাথে হিংসে করছে । করুক হিংসে । আজ কোন কিছুই তার পথ রোধ করতে পারবে না । খুব টাটকা ফুল কিনবে । তাই সে ভোর হতে না হতেই রওয়ানা হয়ে গেল ।
শাহবাগ থেকে ফুল কিনে সে একটা ট্যাক্সি নিল । ভাবছে - এত সময় লাগছে কেন ? ঠিক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তো । এইতো সেই একই রাস্তা । না ঠিক আছে ।
৬.৩০ দিকেই সে পৌছে গেল । সিড়ি দিয়ে উঠছে আর ভাবছে । রাত্রী হয়তো ওর অপেক্ষায় আছে । কতদিন দেখেনি সে রাত্রীকে । একটা ভুল রাত্রীকে তার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে । আজ সে রাত্রীর কাছে নিজের জীবন সপে দিবে । আজ তাকে ক্ষমা করতেই হবে । রাত্রী খুব ভাল মেয়ে, সে আজ তাকে ক্ষমা করে দিবে । তারপর সে রাত্রীকে নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করবে । ধীরে ধীরে ৪র্থ তলায় উঠে এলো । কলিংবেল বাজালো । আলতো করে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো । ভিতরে তাকিয়ে থমকে গেল । মানুষ ভর্তি বাসাতে । কান্নার গোমট বাতাসে ছেয়ে গেছে পুরো ঘর ।
একজনকে জিজ্ঞেস করল “কি হয়েছে ?
সে জানালো “ রাত্রীকে বেলকনিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে । ফুলের টবে মাথা পড়ে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে । দীর্ঘ দিন যাবৎ রাত্রী অসুস্থ ছিল । কিন্তু রাত্রী কোন চিকিৎসা করতে দেয় নি । নিজেকে তিলে তিলে এভাবে মেয়েটি শেষ করে দিল । ”
মিহির স্থবির হয়ে গেলো । পৃথিবীর কোন শব্দই তার শ্রবন শক্তি স্পর্ষ করছে না । তার হাত থেকে ফুল পড়ে গেলো । বিড়বিড় করে বলছে “ এত অভিমান তোমার রাত্রী ! আগে চলে এসেছি বলে তুমি আমাকে এত বড় শাস্তি দিলে । শেষ বারের মতো একটু দেখা করলে না ।” মিহির যেন অন্য জগতের মানুষ হয়ে গেছে । সে বিড়বিড় করে আপন মনে কথা বলছে । কাঁদছে আবার হাসছে । মাথা চুলকাচ্ছে । অচেনা দৃষ্টিতে চারপাশে তাকাচ্ছে । ধীরে ধীরে আপন মনে বাইরে বের হয়ে গেলো ।