ঢাকাতে আমার আর আমার ছোট ভাইয়ের সংসার । একই বিল্ডিংয়ের নীচতলার একটা মেয়ে (রুবি), আমি আর আমার ছোট ভাই সন্ধ্যাবেলায় এক সঙ্গে চা খাই । ছোট ভাই বরিশাল অডিটে গিয়েছে । কিছুদিন আগে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি । ভাগ্যক্রমে রুবি থাকাকালীনি প্রচন্ড জ্বরে বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় আমি অজ্ঞান হয়ে পরি । জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি । পরে জানলাম রুবি ওর মাকে ডেকে নিয়ে আসলে ওর মা আমাকে বাসার কাছের হাসপাতালে নিয়ে যায় । তার এক ঘন্টা পরেই আমার জ্ঞান ফিরে । এবং জ্ঞান ফিরার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ডাক্তারের চিকিঁৎসায় আমি সম্পুর্ন সুস্থ বোধ করি । তারপর এক প্রকার জোর করেই হাসপাতাল ত্যাগ করি । কারন আমি জানি হাসপাতালের পরিবেশে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব । ওরা চেয়েছিল আমার মামনি-বাবাকে অথবা ভাইয়াকে ফোন দিতে । আমি নিষেধ করেছি । কারন আমার সামান্য ঠান্ডা কাশি হলেই আমার মা অসুস্থ হয়ে পরেন । রুবি এবং আমি একে অপরের সহযোগী । আমি ওদের প্রাত চীর কৃতজ্ঞ । এবং আমি আমার আরও বন্ধু যারা তাদের মূল্যবান সময় থেকে আমাকে সময় দিয়ে ফোন করেছেন তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ ।
আসল কথা বলতে গিয়ে অনেক প্যাঁচাল হয়ে গেলো । একটা কন্ঠস্বর আমার পূর্ব পরিচিত কেউ না, তাকে চিনি না, জানি না কিন্তু ছায়ার মতো বন্ধুত্বের আবেশে মনোবল বৃদ্ধি করে । সেই হচ্ছে আমার ভয়েস ফ্রেন্ড ।
অনেকেই ফোন করে যাদের চিনি না, জানি না বা জানার আগ্রহ বোধ করি না, তেমনি একজন আছেন যার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ আমার ফোনালাপ । কিন্তু আমি কখনও তার সম্পর্কে কোন প্রশ্ন কনি নাই । তিনিও কখনও কিছু জানান নি । প্রতিটি ঘন্টায় সে আমার খোঁজ নিতেন এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠার বিভিন্ন টিপস দিতেন । আমার ঘাড়ের রগ একটু ত্যাড়া আছে, আমি কখনও কারও কথা শুনি না নিজের মতো চলি । এটা সে বুঝতে পেরে তার খোঁজ নেওয়ার মাত্রা বেড়ে গেলো । খাচ্ছি কিনা আপনজনদের মতো খোঁজ নিতেন । প্রতিদিন ৩/৪ বার করে মামনি-বাবার সাথে কথা হয় কিন্তু তাদের বুঝতে দিতাম না যে আমি অসুস্থ । আমার এই ভয়েস ফ্রেন্ড এর সহানুভূতি, মহানুভবতা বা বন্ধুতা যাই হোক না কেন আমার মনে কৃতজ্ঞতার আঁচর কাটে ।
নীচতলার ওরা না থাকলে হয়তো কিছু একটা হয়ে যেতো । আর ভয়েস ফেন্ড না থাকলে এত দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতাম না । সারা দিন আমি কিভাবে কাটাই সব খোঁজ নেন । আমি একটু বদরাগি, এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন । তাই প্রতিবার ফোনে জিজ্ঞেস করতেন আজ কার কার সাথে রাগ করে কথা বললাম । আমি তারে কাছে স্বীকার করতাম । রাগের বশত কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করলে তিনি আমাকে শুধরে দেন । আমি কখনও কাউকে সরি বলতাম না । তিনি আমাকে সরি বলার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছেন । আবার এও বলতেন যে সরি যদি না বলতে চাই তবে সরি বলার মতো কোন কাজ যেন না করি ।
আমার অনেক বন্ধু আছে । সবাই খুব ভাল । অনেকে আছেন আমাকে বন্ধু মনে করেন কিন্তু তাদের স্বার্থপরতা লক্ষণ থাকে বলে আমি তাদের বন্ধু মনে করি না । আমি ছোটবেলা থেকেই আমার সব বন্ধুদের পড়াশোনা বা অন্য কোন ব্যাপারে সহয়োগী ছিলাম । কিন্তু আমি কখনও কার সাহায্য নিতাম না, পাছে দুর্বলতা ভাবে এই ভয়ে । এটা আমার একটা অহমিকা । প্রথম প্রথম আমি তার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করতাম । কিন্তু আমার এই ভয়েস বন্ধুটি আমার ভিতর সুপ্ত গভীর মনুষত্বের বিকাশ ঘটিয়েছেন । আমি এখন বুঝতে পেরে তার প্রতি কৃতজ্ঞ ।
“আল্লাহ তাকে সুখি করুন”