somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্নারাসুমানারা- স্বপ্নভঙ্গ, প্রত্যাশা ও বড় হওয়ার গল্প

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আচ্ছা, বড় হওয়ার মানে আসলে কি? শরীরটা আকারে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে মানুষের মনটায় কি এমন পরিবর্তন আসে, যার কারণে একসময় তার কাছে যা খুব আকর্ষণীয় ও আরাধ্য মনে হত, তা হঠাৎ করে যুক্তিহীন ও হাস্যকর লাগতে থাকে? প্রাপ্তবয়স্ক হলেই কেন মানুষকে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিতে হয়? নাকি স্বপ্ন দেখা ছাড়তে তাকে বাধ্য করা হয়! স্বপ্ন দেখলে যে সমাজ তোমাকে পাগল বলবে! তোমার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলবে, দেখ, সে এখনও বড় হতে পারল না! সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হতে ব্যর্থ। কারণ সে সমাজের ঠিক করে দেয়া নিয়ম মেনে বড় হয়ে ওঠেনি। সে সাহস করেছিল তার জন্য সাজিয়ে রাখা চকচকে পথ ছেড়ে নেমে নতুন করে পৃথিবীটাকে দেখার।

ইউন আই মেয়েটিকে এই সত্যের মুখোমুখি হতে হয় খুব অল্পবয়সে। ঋণের বোঝায় জর্জরিত বাবাকে ছেড়ে চলে যায় তার মা, আর পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়ায় তার বাবা। নিরুপায় আই তার এবং তার ছোটবোনের জীবন চালানোর জন্য তাই অমানুষিক পরিশ্রম করে। নিজে না খেয়ে থাকে, যেন ছোটবোন স্কুলে টিফিন নিয়ে যেতে পারে। স্কুল শেষ হওয়ার পর অনেক রাত পর্যন্ত একের পর এক পার্টটাইম জব করে, যেন বাড়িভাড়াটা সময়মত দিতে পারে। এতকিছুর সাথে সে কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশুনা করে নিজের গ্রেডটাও ঠিক রাখে, কারণ আই জানে, গ্রেড ভাল রাখলে একসময় হয়ত সে একটা ভাল চাকরি করে এই অভাবী জীবনটাকে পরিবর্তন করতে পারবে। ছোট্ট বয়সে বড় হয়ে ওঠা এই মেয়েটি জানে, তার কাছে যা বিলাসিতা, অন্যদের কাছে তা স্বাভাবিক জীবনের অংশ। আর সেই স্বাভাবিক জীবন পাওয়ার জন্য যা কিছু করা সম্ভব, আই সে সবই করবে।

আই এর ক্লাসমেট ইল দং। সবকিছু আছে তার। ধনী পিতামাতা, বিলাসবহুল জীবন, স্কুলে ভাল গ্রেড - সবকিছু। আই এর আরাধ্য জীবন জন্মগত ভাবে পাওয়া ইল দং কখনো জীবনে না শব্দটি শোনেনি। এতকিছু থাকার পরেও কোন না কোন দিক দিয়ে ইল দং ও খুশি নয়। কারণ তার উপরে রয়েছে সীমাহীন প্রত্যাশার পাহাড়। ক্লাসে সবসময় ফার্স্ট হতে হবে, দেশের সেরা ল' স্কুলে ভর্তি হতে হবে, বাবা-মায়ের মুখ সমাজের সামনে রক্ষা করতে হবে; এর অন্যথা হলে যে সে পরিণত মানুষ হতে ব্যর্থ হবে!

সমাজের সেট করে দেয়া স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নিজেদেরকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করা এই মানুষদের ভীড়েও রয়েছে কিছু অলস মস্তিস্কের স্বপ্নবাজ মানুষ। এরা এখনো স্বপ্ন দেখা ভোলেনি। এদের চোখে পৃথিবীটা এখনো রঙিন এক আনন্দময় ভুবন। সমাজ তাদের আখ্যায়িত করে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হিসেবে; তাতে তাদের থোড়াই কিছু আসে যায়! এমনই একজন মানুষ হল শহরের পরিত্যক্ত থিম পার্কে এক পুরনো তাবুতে বাস করা "ম্যাজিশিয়ান"। প্রতিটি মানুষের পরিত্যক্ত স্বপ্নকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করা সত্যিকারের জাদু জানা এই ম্যাজিশিয়ান প্রথম দেখাতেই আইকে প্রশ্ন করে, "Do you believe in magic?"



মানহোয়াটি পড়ার আগে এটির বেশ কিছু রিভিউ পড়েছিলাম, সেগুলো পড়ে আমার ধারণা হয়েছিল যে গরীব এবং খুব সিরিয়াস টাইপের একটি মেয়ে ও লেইড ব্যাক জাদুকরকে নিয়ে কাহিনী হবে, মাঝে থার্ড পার্টি হিসেবে বড়লোকের ছেলের উপস্থিতি থাকবে। আমি যে আসলে কতটা ভুল ধারণা করেছিলাম, সেটা কয়েক চ্যাপ্টার পড়েই বুঝতে পারি। শুরুর দিকে মজা লাগছিল, ইউন আই এর জীবনটা অনুভব করছিলাম, আর জাদুকরের প্রশ্নে আই এর মত আমারও মনে হচ্ছিল, জাদুবিদ্যা হল একধরণের ভ্রম। কিন্তু মানহোয়াটি যত এগিয়ে যেতে থাকে, কাহিনীটা যেন আরও গভীর হতে থাকে। প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা কাহিনী গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে। কে জানত, এতদিন পরে একটা মানহোয়া পড়ে এভাবে নিজের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে কাঁদব! ইল দং ও ম্যাজিশিয়ান এর পরিপূর্ণ রূপটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম ও অনুভব করতে পারলাম। আর তাই শেষ দিকে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল, "I do believe in magic!"

মানহোয়াটি সম্পূর্ণ রঙিন, আর্টওয়ার্ক খুবই সুন্দর। পৃষ্ঠাগুলোতে রঙের কারুকাজের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। মানহোয়াটির আর্ট দেখে বারবার শ্যাফটের কথা মনে পড়ছিল। ক্যারেক্টার ডিজাইন বেশ সুন্দর, যদিও ইল দং ও তার বাবা-মাকে দেখে শুরুতে প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছিল!! কাহিনীর পেসিং খুবই ভাল, একটার পর একটা পৃষ্ঠা উলটে গেছি বিরতিহীন ভাবে, একটুও ক্লান্ত বা বোরড না হয়ে। কাহিনী, এই আর্ট আর পেসিং এর পারফেক্ট কম্বিনেশন এই মানহোয়াটি; দেখে মনে হচ্ছিল কাহিনীটা যেন জীবিত হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত একইরকম ভাবে মুগ্ধ করেছে এটি আমাকে।

সবমিলিয়ে মাত্র ২৭ চ্যাপ্টারের মাস্টারপিস লেভেলের এই মানহোয়াটি আমার খুব বেশি ভাল লেগেছে, তাই আমি রিকমেন্ড করছি, হাতে সময় নিয়ে টানা ২৭ টা চ্যাপ্টার শেষ করে ফেলুন, খুব ভাল সময় কাটবে আশা করি।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×