তাহলে চুলের স্বাস্থ্য বলতে কি বোঝায়? আগা গোড়া সমান ভারী চকচকে পরিস্কার কালো চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল বলা যায়।
স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুলের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য,আর সঠিক পরিচর্যা।
চুল তবে কি খায়ঃ অনেকে চুলে শশা বাটা,টকদই,ডিম এইসব মাখেন। ভাবেন চুল জবরদস্ত ভিটামিন পাচ্ছে। কিন' চুল কি এসব খায়? নাকি চুলের এইসব খাবার গ্রহণ করার মত,শোষণ করার মত কোন ব্যবস্থ্যা আছে? পারলারে চুল সাজানো আর চুলের স্বাস'্য বিধান করা এক কথা নয়। বরং রূপচর্চার নামে এই সব হাবিজাবি মেখে চুলের বারোটা বাজানো হয়। আমরা যে সুষম খাবার খাই তা হজম বা পরিশোষিত হয়ে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মত ত্বক এবং চুলে ও পুাষ্িটর যোগান দেয়। তাই চুলের গোড়ায় এসব পুষ্টিকর খাবার না মেখে মুখে খেলে বরং কাজে দেবে। আমাদের সঠিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর শাকসবজি, ফল ও সালাদ। খনিজ ও ভিটামিনের অভাবে চুলের স্বাস'্য খারাপ হয়, চুল ঝওে পড়ে। এ ছাড়াও চুলের সুস্বাসে'্যর জন্য মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে।
তেলে চুল তাজা ঃতেল আসলে চুলের জন্য কতটা দরকারী? তেল কি চুলের খাবার? মোটেও না।তেল আসলে চুলকে তেলতেলে রাখে। মানে একটু চকচকে কওে রাখা , এই যা। আরেকটা কাজ অবশ্য হয় । তেল একধরনের পরিষ্কারক। চুল ও মাথার ত্বকে কিছু ময়লা থাকে যেগুলো পানিতে দ্রবীভ'ত নয় তেলে দ্রবীভ'ত। এই সব ময়লা তেলে দ্রবীভ'ত বলে তেল মাখার পর চুলে শ্যাম্পু করলে সহজেই তা পরিস্কার হয়ে যায়। চুলে তেলের কাজ বলতে এটুকুই। তবে উল্টোটাও হয়। তেল ময়লা আটকাতেও সাহায্য করে। তাই বিজ্ঞাপনে যতই বলুক এই তেলে আছে অমুক ভিটামিন ... ভাববেন এটা শুধুই বিজ্ঞাপনের চটক। আসলে চুলের রঙ কি হবে? কোঁকড়া না সোজা হবে, লম্বা বা ঘন হবে কিনা এসব কিছুই বংশগত বা জেনেটিক ।
দীঘল-কালো-ঘন চুলের রহস্য ঃচুলের রঙ মানুষের জন্মগতভাবে নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য। তবে অযত্ন হলে চুলের রঙে তারতম্য হতে পারে।ত্বকের উপরিতলের কোষ বা এপিডারমাল সেল থেকে চুলের উৎপত্তি। এপিডারমাল সেল থেকে হেয়ার ফলিকল তৈরি হয় । হেয়ার বালবের মধ্যের মেলানোসাইট চুলের রঙ সরবরাহ করে।
চুলে থাকে কেরাটিন। কেরাটিন একধরনের প্রোটিন। তাই প্রোটিনের অভাবে চুলের রঙ নষ্ট হয়ে যায়। চুল লালচে বাদামি হতে থাকে। পরে চুলের আগা ফাটতে থাকে এবং চুল ঝরে যায় । খাদ্য তালিকায় মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, ডাল, দই ও পনির ইত্যাদি থাকা জরুরি, এগুলো কেরাটিন তৈরিতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে চুল রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’-এর জন্য চুল ঝরে পড়তে পারে। দুধ, গাজর, মুলা, সবুজ শাকসবজি এইসব খাওয়া তাই খুব জরুরী। ভিটামিন ‘সি’র অভাবে চুল খসখসে শুষ্ক হয়ে ওঠে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাই লেবু, জাম্বুরা,কমলালেবু, মুসাম্বি,আমলকী এবং অন্যান্য টকফল থাকা প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘বি’ চুলকে চকচকে ও ঘন করে তোলে। শস্যদানা, দুধ, ডিম, কলা, বাদাম, কলিজা ও ডালে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’। প্রতিদিন ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে চুল ভালো থাকবে।
চুল থাকুক পরিস্কারঃ চুল ও মাথার ত্বক পরিস্কার রাখাটাই চুলের সবচেয়ে বড় পরিচর্যা। নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে হবে। কমপক্ষে সপ্তাহে তিনদিন। প্রতিদিন ও হতে পারে। সেটা নির্ভর করে চুলের অবস'ার ওপর। মাথায় খুশকি হলে দ্রুত তা নিরাময়ের ব্যবসথা করতে হবে। খুশকি মূলত একটি চর্মরোগ যা মাথার খুলির ত্বকে হয়। অনেকেই এই রোগটিকে খুব হালকাভাবে নেয়, এটা ঠিক না। খুশকি থেকে বিভিন্ন প্রকার সেকেন্ডারী ব্যাকটেরিয়াল কিংবা ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার ভেতর সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং টিনিয়া ক্যাপিটিস অন্যতম। এর ফলে মাথায় প্রচন্ড চুলকানি ছাড়াও চুল পড়তে পারে। তাই খুশকির যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন। ২% কিটোকোনাজল শ্যাম্পু সর্বাধিক কার্যকর একটি এন্টি-ডেনড্রাফ শ্যাম্পু। বাংলাদেশে এটি ড্যানসেল শ্যাম্পু নামে পাওয়া যায়।
খুশকি দূর করতে বাজাওে আরো কিছু মেডিকেটেড শ্যাম্পু পাওয়া যায়। জিংক পাইরিথিয়ন কিংবা সেলেনিয়াম সালফাইড সমৃদ্ধ শ্যাম্পু এক সময় চালু ছিল। তবে এটা তেমন একটা কার্যকর নয়।
খুশকি দূরীকরণে চুল ধুয়ে তাতে ২%কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ভালভাবে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ২ বার। করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমে যাবে। যাদের নিয়মিত খুশকি হয় তারা ১ বা ২ সপ্তাহ পর পর প্রতিরোধক হিসেবে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে তারা খুশকিমুক্ত থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন। এই শ্যাম্পু বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
চুল পড়ে, টনক নড়ে ঃ চুল পড়-ক, কে তা চায়? তবু চুল পড়ে, মাথা টাক হয়ে যায়। অনেকক্ষেত্রেই এটা জেনেটিক বা বংশগত কারনে হয় । তবে
চুল পড়ার পেছনে আছে আরো কিছু কারণ। যেমন ঃ
হরমোনের তারতম্যজনিত সমস্যা। পুরুষের সেক্স হরমোন- টেস্টোস্টেরন এর জন্য দায়ী।
খুশকি ও অন্যান্য রোগ যেমন থাইরয়েড সমস্যা, রক্তস্বল্পতা, ডিম্বাশয়ের অসুখ।
ভিটামিনের অভাব বা আধিক্যজনিত সমস্যা।
সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার না করা।
কেমোথেরাপী।
শারীরিক অসুখ-বিসুখ, মানসিক চাপ।
চুলে নানা কেমিক্যাল ডাই ব্যবহার করা,জেল, স্প্রে, চুল সোজা বা কোঁকড়ানোর জন্য হিট দেয়া ।
পরিবেশ দূষণ, খাবারে ভেজাল,পানি দূষণ, বায়ুদূষণ ইত্যাদিও পরোক্ষভাবে চুল পড়ার জন্য দায়ী।
স্বাভাবিক নিয়মেই প্রতিদিন কিছু কিছু চুল পড়ে। তবে বেশী পড়লেই সমস্যা। চুল পড়ে মাথা টাক হয়ে যেতে পারে। চুল ঝরে পড়লে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
চুল পড়ার কারণ নির্ণয়ের জন্য রোগীর ইতিহাস পর্যালোচনা করে নানা রকম পরীক্ষা করা হয়। কারণ অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চুল পড়ার কারণ প্রতিকার করতে পারলেই চুল পড়া বন্ধ হয়। বন্ধ হওয়ার পরে নতুন চুল গজানোর জন্য চিকিৎসা দেয়া দরকার। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে লেজার থেরাপী দিয়েও আজকাল চিকিৎসা হচ্ছে।
চুল নিয়ে ভুল কথাঃ চুল নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল কথা প্রচলিত আছে। যেগুলো আসলে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন নিছক মিথ। যেমনঃ
-বেশী বেশী মাথা কামালে চুল ঘন হয়।
-চুল কাটলে বা মাথা কামালে চোখের জ্যোতি কমে যায়।
-চিরুনী দিয়ে বেশী বেশী চুল আঁচড়ালে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। ফলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
-টাইট করে চুল বাঁধলে চুল লম্বা হয়।
-রাতে চুল বেঁধে ঘুমালে চুল লম্বা হয়।
উপরের এই মিথ গুলির কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই, ভিত্তি ও নেই।।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




