আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়ায় মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ এখানে আল্লাহর খিলাফতের দায়িত্ব ও দুনিয়া আবাদকরণের কর্তব্য পালন করবে। এ কাজ সুসম্পন্ন হওয়ার জন্যে মানব প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা পাওয়া এবং এখানে তাদের জীবনধারা অব্যাহতভাবে চলতে থাকা একান্তই আবশ্যক। তাহলেই মানুষ এখানে চাষাবাদের কাজ করতে পারে, শিল্প-প্রতিষ্ঠান কায়েম করে নিত্য পরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন করতে পারবে। এক কথায় পৃথিবী আবাদকরণ, মানব সমাজের প্রতিষ্ঠা বিধান এবং আল্লাহর ন্যস্ত করা দায়িত্ব সমূহ পালন করে আল্লাহর হক্ক আদায় করা সম্ভবপর হতে পারে। এই উদ্দেশ্যের বাস্তবতা বিধানের জন্যেই আল্লাহ্ তা’আলা মানুষের স্বভাবে কতগুলো মৌলিক দাবি ও কামনা-বাসনা স্পৃহা-প্রবৃত্তি সুসংহত করে জন্মগতভাবেই রেখে দিয়েছেন। এই জিনিসই ব্যক্তি ও সমষ্টি গোটা মানব প্রজাতির স্থিতি ও অব্যাহত অগ্রগতির নিমিত্ত হয়ে আছে। মানুষকে এ কাজের জন্যে বাদ্য করে দেয়া হয়েছে।
তন্মধ্যে একটি হচ্ছে খাবার গ্রহণের ইচ্ছা। মানুষ পেট ভরে খাবার গ্রহণে উদ্যোগী হয় তার স্বাভাবিক ইচ্ছার কারণেই এবং এর ফলেই জীবনে বেচেঁ থাকা তার পক্ষে সম্ভবপর হয়।
দ্বিতীয় হচ্ছে, যৌন ইচ্ছা-কামনা-বাসনা। এরই ওপর মানব প্রজাতির রক্ষা পাওয়া- বংশের ধারা অব্যাহতভাবে নির্ভর করে। মানব প্রকৃতি নিহিত এই স্পৃহা অত্যন্ত তীব্র, শক্তিশালী ও নিয়ন্ত্রণ-অযোগ্য। তার বিশেষত্ব হচ্ছে, তা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নিজের ইচ্ছা-বাসনা হিসেবে চরিতার্থ করতে বাধ্য করতে একান্তভাবে বাধ্যঃ
যৌন স্পৃহা পর্যায়ে মানুষের ভূমিকা
১. মানুষ হয় এ স্পৃহার লাগাম খুলে দেবে। তা যদৃচ্ছ ও যত্রতত্র চরিতার্থ করার পথে কোন নিয়ন্ত্রণ বা সংযম রক্ষা করবে না। এ জন্যে কোন দ্বীনী, নৈতিক বা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বা নিয়ন্ত্রণকে একবিন্দু আমল দেবে না, সবকিছু লংঘন করে যাবে। এ ক্ষেত্রে একটি মত হচ্ছে, সবকিছু করা যাবে, কোন কিছুই নিষিদ্ধ নয়। এ মতের লোকেরা না কোন দ্বীন মানে, না কোন নৈতিক পবিত্রতায় তারা বিশ্বাসী। যৌন স্পৃহা চরিতার্থ করণে এ লোকেরা এই ভূমিকাই অবলম্বন করে। কিন্তু এ ভূমিকা মানুষকে পশু ও জন্তু-জানোয়ারের পর্যায়ে নিয়ে যায়। আর ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ তথা রাষ্ট্রে সর্বাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনে।
২. দ্বিতীয় ভূমিকা এই হতে পারে যে, এ স্পৃহার মুকাবিলা করা হবে, তাকে প্রবল শক্তিতে দমন করা হবে, তাকে সমূলে ধ্বংস করা হবে, যেন এ ইচ্ছাটা কখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। কৃচ্ছ সাধনা, বৈরাগ্যবাদ ও সবকিছু থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখার প্রবণতা যাদের, এক্ষেত্রে তারাই উপরিউক্ত ভূমিকা অবলম্বন করে। এই ভূমিকায় এ স্বভাবগত প্রবণতাটাই খতম হয়ে যায়। এ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্যে জন্মগতভাবেই যে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ স্পৃহা মানব বংশ রক্ষায় যে অবদান রাখতে সক্ষম, উক্ত ভূমিকা তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
৩. তৃতীয় ভূমিকা এই হতে পারে যে, এ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্যে একটা নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা হবে। তা এ নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণের সীমার মধ্যে স্বাধীন ও উন্মুক্ত হবে, তাকে নির্মূলও করা হবে না, না পাগলের ন্যায় সীমালংঘনের কোন অনুমতি দেয়া হবে। আসমানী ধর্মসমূহ এই নীতিই করেছে। এ কারণে প্রায় সমস্ত ধর্মেই ব্যভিচার হারাম করা হয়েছে এবং বিবাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থার প্রচলন করেছে। বিশেষত দ্বীন-ইসলাম মানুষের স্পৃহাকে স্বভাবগত শক্তিরূপে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তা হালাল পথে চরিতার্থ করার জন্যে পন্থা উদ্ভাবন করেছে। অবিবাহিত ও নারী সংস্পর্শ পরিহার করে চলার প্রবণতাকে নিন্দা ও নিষেধ করেছে। অপর দিকে জ্বেনা-ব্যভিচার ও তার আনুসঙ্গিক যে যে কাজ মানুষকে সে দিকে টেনে নিয়ে যায়, তা সবই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।
বিবেচনা করে দেখলেই স্বীকার করতে হবে যে, ইসলাম অবলম্বিত নীতি ও ভূমিকাই মধ্যম ও সুবিচার ভারসাম্যপূর্ণ নীতি। কেননা বিবাহের ব্যবস্থা কার্যকর না হলে এ স্বভাবগত শক্তি মানব বংশের ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তার দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম থেকে যেত। পক্ষান্তরে জ্বেনা-ব্যভিচার হারাম করা না হলে নারীর জন্যে কোন পুরুষের সাথে বিবাহিত হয়ে নির্দিষ্ট হয়ে থাকার ব্যবস্থা দেয়া না হলে সেই পরিবার ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারত না, যা প্রেম-প্রীতি প্রণয়-ভালবাসার লীলাকেন্দ্র হয়ে থাকে। এরূপ পরিবার সংস্থা গড়ে না উঠলে সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। সমাজের উন্নতি অগ্রগতিরও কোন সুযোগ আসতে পারে না।