somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"অসাধারন কিছু বাচ্চাদের কথা".....

২০ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুনেছি, বাচ্চারা নাকি ফেরেশতার রুপ। তাদের সাথে নাকি সবসময় ফেরেশতা থাকে। তবে, কিছু বাচ্চা আছে যারা খুবই দুষ্টামি করে। সহ্যের বাইরে। তাদের দেখে বাচ্চাদের প্রতি অনেকের ধারনাই পাল্টে যায়। আবার, এমন কিছু বাচ্চাও আছে যাদের চিন্তা ভাবনা বড়দেরকেও হার মানায়। তাদের দেখেও মানুষের ধারনা পাল্টে যায়, তবে সেটা 'পজিটিভ' অর্থে। আমি কিছু বাচ্চার কথা বলবো, যারা বাচ্চাদের প্রতি মানুষের ধারনাকে নতুন রুপ দিয়েছে। বাচ্চাদের ক্ষমতা নিয়ে বড়দেরকে নতুন করে চিন্তা করার একটি নতুন পথ তৈরি করে দিয়েছে। চলুন, দেখা যাক সেই বাচ্চাগুলোকে-

"ANNE FRANK"- (1929-1945)

'অ্যান মেরি'/ (Anne Marie) "অ্যান ফ্র্যাঙ্ক" জার্মানির এক ইহুদি পরিবারের সন্তান। তার জন্ম ফ্রাঙ্কফুর্টে।
সে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে তার মৃত্যুর পর। মৃত্যুর পর তার লেখা এক ডায়েরি প্রকাশিত হয় যেখানে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে হল্যান্ডে জার্মানদের দখলদারিত্ব ও তাদের ব্যাপারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য 'অ্যান ফ্র্যাঙ্ক' লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। ১৯৩৩ সালে নাৎসিরা যখন জার্মানিতে ক্ষমতা দখল করেন অ্যান এবং তার পরিবার তখন অ্যামসটারডাম চলে আসেন। ১৯৪০ সালে তাদের পরিবার শত্রুদের হাতে আঁটকে পরে। যেহেতু নাৎসিরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে ছিলো তাই তারা সমস্ত ইহুদি বংশধরদের শেষ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। অ্যানের পরিবার কোনমতে সেখান থেকে পালিয়ে অ্যানের বাবার পুরনো এক অফিসের কামরায় আশ্রয় নেয়। ২ বছর পর তারা আবারও ধরা পরে যায় এবং তার ৭ মাসের মাথায় 'অ্যান ফ্র্যাঙ্ক' মারা যায়। তার বাবা তার পরিবারের একমাত্র ব্যাক্তি যিনি বেঁচে ছিলেন এবং যুদ্ধের পর তিনি দেখেন যে 'অ্যান ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি' অক্ষত অবস্থায় আছে। ১৯৪৭ সালে তিনি এক প্রকার জেদ করেই ডায়েরীটা বই আকারে প্রকাশ করেন। অরিজিনাল 'ডাচ' ভাষা থেকে বইটি প্রথম ইংলিশ ভাষায় প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে 'The Diary of a Young Girl'- নামে। 'অ্যানের' জনপ্রিয়তা ঝড়ের বেগে সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে এবং তার অসাধারন লেখনীর জন্য আজও তাকে সেরা কয়েকজন লেখকদের মাঝে স্থান দেয়া হয়। বইটির বাংলা নাম 'অ্যান ফ্রাঙ্কের ডায়েরি'।

"SAMANTHA SMITH"- (1972-1985)

'সামান্থা রিড স্মিথ' ছিলো আমেরিকার একজন স্কুল-বালিকা। তার জন্ম ম্যানচেস্টারে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকার মধ্যকার গৃহযুদ্ধের সময় মূলত 'সামান্থা' বিখ্যাত হয়ে যান। ঘটনাটা এরকম- ১৯৮২ সালে যখন 'সামান্থার' বয়স মাত্র ১০ বছর, সে 'সোভিয়েত ইউনিয়ন'- এর লিডার 'ইউরি অ্যান্ডরপভ' এর কাছে একটি চিঠি লিখে। সেখানে সে জানতে চায়, কেনো আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার সম্পর্কে এতো জটিলতা? তার লেখা এই চিঠি সোভিয়েত ইউনিয়নের সংবাদপত্র 'প্রাভাডা' তে ছাপা হয়। 'সামান্থা' এটা দেখে খুব খুশি হয়, তবে সে এর উত্তর পায়নি। সে তখন আমেরিকায় অবস্থিত সোভিয়েত অ্যাম্বাস্যাডর কে চিঠি লেখে যে লিডার 'ইউরি' কি তার চিঠির জবাব দেবে কিনা? ১৯৮৩ এর ২৬ এপ্রিল 'ইউরি' তার চিঠির জবাব দেয়। মুহূর্তে 'সামান্থা' মিডিয়ার নজরে চলে আসে। দুই দেশই তাকে ঘোষণা করে 'শান্তির দুত' হিসেবে। সাথে আমেরিকার সবচেয়ে ছোট অ্যাম্বাস্যাডর উপাধিও দেয়া হয় তাকে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে একটি প্লেন ক্র্যাশে তার মৃত্যু হয়।

"IQBAL MASIH"- (1982-1995)

'ইকবাল মাসিহ' এক পাকিস্তানি ছেলে যাকে ৪ বছর বয়সে একটি কার্পেট ইন্ডাস্ট্রির কাছে বিক্রি করা হয় 'দাস' হিসেবে। তার দাম উঠেছিলো ১২ ডলার। কার্পেট ইন্ডাস্ট্রিতে তাকে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হতো। এই দীর্ঘ পরিশ্রম ও সঠিক খাবারের অভাবে 'ইকবাল' দিনে দিনে আরও ক্ষুদ্র হয়ে যেতে লাগলো। ১২ বছর বয়সে তাকে দেখে মনে হতো ৬ বছরের বালক। ১০ বছর বয়সে 'ইকবাল' এই নির্মম দাসত্ব সইতে না পেরে পালিয়ে যায় এবং যোগ দেয় পাকিস্তানের 'দাস স্বাধীনতা' নামক একটি সংগঠনে যেখানে সে সারা পৃথিবীর 'শিশুশ্রম' বন্ধের জন্য নানাভাবে সংগঠনটিকে সাহায্য করে। 'ইকবাল' প্রায় ৩,০০০ শিশুশ্রমিককে মুক্তি দান করে তার সংগঠনের সাহায্যে। মিডিয়ার নজরে চলে আসে 'ইকবাল'।
শিশুশ্রম বন্ধের জন্য 'ইকবাল' সারা পৃথিবীতে তার বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ১৯৯৫ এর 'ইস্টার সাণ্ডের' দিন 'ইকবাল' নামক এই মুক্তির গান গাওয়া শিশুটিকে হত্যা করা হয়। অনেকের মতে, কাজটি কার্পেট ইন্ডাস্ট্রির পিছনে থাকা মাফিয়া চক্রের। কারন, 'ইকবালের' জনপ্রিয়তার কারনে সেই কার্পেট ইন্ডাস্ট্রির অনেক খবর ফাঁশ হয়ে যাচ্ছিলো। কয়েকজন অভিযুক্তও হয়েছিলো। ১৯৯৪ সালে 'ইকবালকে' "Reebok Human Rights Award"-এ পুরস্কৃত করা হয়। ২০০২-এ যখন প্রথম 'World’s Children’s Prize for the Rights of the Child'- নামক পুরস্কার দেয়ার কথা চিন্তা করা হয়, 'ইকবালের' নাম যথাযতভাবে সবার আগ চলে আসে।

"NKOSI JOHNSON"- (1989 – 2001)

জোহানেসবারগে ১৯৮৯ এ Nkosi-র জন্ম। তার বাবা কে, সেটা সে জানতো না। কখনও জানার সুযোগ হয়নি। 'Nkosi' জন্মগতভাবেই ছিলো HIV-positive একটি শিশু। যখন তার মা তার চিকিৎসা এবং ভরণ-পোষণের হাল ছেড়ে দেয়, 'গেইল জনসন' নামক পাবলিক রিলেশন সংগঠনের এক ব্যাক্তি তাকে দত্তক নেয়। শিশু 'Nkosi' সর্বপ্রথম নজরে আসে ১৯৯৭ সালে যখন জোহানেসবার্গের এক প্রাইমারি স্কুল তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণটি ছিলো
Nkosi-এর HIV-positive। ব্যাপারটি রাজনৈতিক পর্যায়ে গড়িয়ে যায় এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ পরে তাদের মতামত বদলায়। ১৩ তম আন্তর্জাতিক 'এইডস কনফারেন্সে' Nkosi ছিলো প্রধান বক্তব্য প্রদানকারী। সেই কনফারেন্সে সে 'এইডস' এর ব্যাপারে সবাইকে খোলাখুলি আলোচনার পরামর্শ দেয়। সে তার বক্তব্য শেষ করে এই বলে- “Care for us and accept us – we are all human beings. We are normal. We have hands. We have feet. We can walk, we can talk, we have needs just like everyone else – don’t be afraid of us – we are all the same!”
'নেলসন ম্যান্ডেলা' তাকে উপাধি দেয় 'জীবন সংগ্রামের প্রতিক'। HIV-positive শিশুদের মধ্যে Nkosi-ই সবচেয়ে বেশীদিন বেঁচে ছিলো। ২০০৫ এর নভেম্বরে তাকে 'আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরষ্কার' প্রদান করা হয় তবে, ততদিনে Nkosi মারা গিয়েছিলো। SABC3′s Great South Africans- দের মধ্যে সে ছিল পঞ্চম স্থান অধিকারী, যে ছিলো নিতান্তই এক শিশু। তার নামেই আজকের "Nkosi Award"

"THANDIWE CHAMA"- (1991- Present)

'যাম্বিয়ার' ১৬ বছরের এক কিশোরী 'Chama' । ২০০৭ সালের 'আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরষ্কার' বিজয়ী যে, পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের ২৮ জনকে পিছনে ফেলে এই পুরষ্কার জিতে নেয়। ১৯৯৯ সালে যখন Chama মাত্র নয় বছর, তাদের একমাত্র স্কুলটি শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। Chama ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেনি। ৬০ জন শিশুকে নিয়ে সে বেরিয়ে পরে অন্য কোন স্কুলের খোঁজে। ব্যাপারটি সুধী মহলে নাড়া দেয় এবং এর ফলশ্রুতিতে সেই ৬০ জন শিশুকে 'Jack Cecup' নামক এক স্কুলে ভর্তি করে নেয়া হয়। তারপর থেকে Chama উন্নত শিক্ষার জন্য তার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। Chama চার্চে 'এইডসের' ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনা করার পরামর্শ দেয় এবং তার বয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে সে রীতিমত 'আইকন' হয়ে যায়। অধিকার সম্পর্কে Chama বলে- “It’s so important to know that also a child has rights. At school I learned about rights. And I knew then that this was something I wanted to fight for. Because if children are given an opportunity, they for sure can contribute in making this world a better place.”.......
......................................... :) ............................................
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:১৭
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×