somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'ডোরেমন'.... নাকি 'মীনা' ???কোনটা আগে গ্রহণীয় এবং কেনো...(একটি সাধারন পর্যালোচনা)

১৭ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পোস্টটা যেহেতু কার্টুন নিয়ে তাই প্রথমে একটা কার্টুন দিয়েই শুরু করা যাক। (ডোরেমন ভক্তরা আমার উপর ক্ষেপবেন না আশা করি)













এবার মূল পোস্ট-

মীনা- আমাদের দেশের অ্যানিমেশন বা কার্টুন জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি নাম।
একসময় আমাদের দেশের বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত সকলেই মীনা কার্টুনটির একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলো। এখনও আছে তবে সেটা হয়তো আগের অবস্থানে নেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, গ্রামের সাদাসিধা মেয়ে মীনা এবং তার বাংলা-বুলি, বর্তমান ডিজুস যুগের বাচ্চাদের কাছে অনেকটাই অবহেলিত।

স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো যেদিন থেকে আমাদের দেশে সহজলভ্য হয়ে গেছে সেদিন থেকেই মূলত মীনা কার্টুনটি তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মীনার জায়গা দখল করে নিয়েছে জাপানীদের তৈরি 'ডোরেমন' নামক কাল্পনিক এক রোবোট বিড়াল।
একটা সময় ছিলো যখন বাচ্চারা মীনা ছাড়া কিছু বুঝতো না, এখন সেই বাচ্চারাই ডোরেমন ছাড়া কিছু বোঝে না।

ডোরেমন এবং হিন্দি ভাষার প্রবনতা-
'ডোরেমন' জাপানি কার্টুন হলেও ভারতীয়রা একে হিন্দিতে ডাবিং করে 'নিক' চ্যানেলের মাধ্যমে আমাদের দেশের বাচ্চাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তারা এখন ডোরেমনের প্রেমে এতোটাই মশগুল যে, বাংলা ভুলে যেয়ে এখন তারা অনর্গল হিন্দিতে কথা বলে যেটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। যে ভাষার জন্য এতো যুদ্ধ, এতো আত্মত্যাগ,- সেই ভাষাই যদি আগামী প্রজন্মের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা হারায়, তাহলে এর চেয়ে বড় লজ্জা, কি হতে পারে? এসব ব্যাপার চিন্তা করতে হবে।


এজন্য কারা দায়ী-
বাচ্চাদের কিন্তু এখানে কোন দোষ নেই কারন, বাচ্চারা সবসময়ই অনুকরনপ্রিয় এবং নতুনের দলে। তারা সেটাই গ্রহন করবে যেটা তাদের ভালো লাগবে। একটা সময়ে, এমন কোন বাচ্চা খুজে পাওয়া যেতো না যে কিনা মীনা কার্টুন পছন্দ করেনা বা দেখেনি। আর এখন- আমি নিজে এমন অনেক বাচ্চাদের দেখেছি যারা মীনার নামটা পর্যন্ত শোনেনি। এর জন্য দায়ী আমরাই কারন, আমরা তাদের সামনে মীনাকে উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করিনি। অনেক বাবা-মায়েরা ভাবে- তাদের বাচ্চা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, মীনা দেখে কি করবে? তারচেয়ে ইংলিশ মুভি দেখলে ইংলিশের চর্চাটা ভালো হবে। হিন্দি ডোরেমন দেখলেও সমস্যা নেই। ডোরেমনের কারনে তারা যে হিন্দি শিখছে সেটাতে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারন, আমাদের সুশীল সমাজ কিন্তু বর্তমানে হিন্দি ভাষাটাকে একটা স্মার্ট ভাষা হিসেবেই গ্রহন করে নিয়েছে। হিন্দি বলাটা বর্তমানে একটা Passion- তাদের কাছে এখন হিন্দি ভাষাটা এবং সংস্কৃতিটা অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ যেখানে মিনাকে একটি আইকন হিসেবে সবার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে আমরা নিজেরাই এর সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি না। নিজস্ব সংস্কৃতির আদলে নির্মিত মীনাকে বাচ্চাদের কাছে সঠিকভাবে তুলে না ধরে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি নিয়ে লাফালাফি করছি আমরা। ফলাফল, সবার চোখের সামনেই।


মীনা কার্টুনের প্রয়োজনীয়তা-
এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত একটি জনপ্রিয় টিভি কার্টুন- মীনা। এর কমিক বইও আছে। বাংলা ভাষায় নির্মিত কার্টুনগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র মীনা। দক্ষিন-এশিয় দেশগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক একটি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে UNICEF -এর সহায়তায় এই কার্টুন ধারাবাহিকটি নির্মিত।
মীনা কার্টুনের প্রত্যেকটা পর্বে জনসচেতনতামূলক অনেক বার্তা রয়েছে যা আমাদের সমাজ তথা, সমাজে বসবাসরত সকল পর্যায়ের মানুষ, ধনী-গরিব, ছোট-বড় সকলের জন্য সমানভাবে প্রয়োজনীয়।

যৌতুক প্রথা, ইভ-টিজিং, বাল্য-বিবাহ, ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার, সবার জন্য শিক্ষা, সমাজে মেয়েদের প্রয়োজনীয়তা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, শিশুশ্রম, মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব, শিশুপাচার,- এরকম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো উঠে এসেছে মীনা কার্টুনে যা কিনা বাচ্চা-বুড়ো সকলেরই নৈতিক চরিত্র গঠনে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। কথা আসতে পারে- বাচ্চাদের জন্য এখনই এসব নৈতিক শিক্ষার দরকার আছে কিনা?

-হ্যাঁ, অবশ্যই আছে।
মনে রাখতে হবে, বাচ্চাদের মধ্যে যেটার অনুপ্রবেশ প্রথমেই ঘটানো দরকার সেটা হলো- বাস্তবতা সম্পর্কে ধারনা, নৈতিক জ্ঞান। এ ব্যাপারগুলো তারা প্রথমে হয়তো সেভাবে বুঝবেনা তবে প্রথম থেকেই তাদের মধ্যে এসব সম্পর্কে ধারনা ঢুকিয়ে দিলে পরবর্তীতে যখন তারা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকবে, এ ব্যাপারগুলো তাদের মধ্যে আরও জোরালো এবং মজবুত হয়ে উঠবে, যেটা ভবিষ্যতের জন্য অনেক প্রয়োজন। এ কাজটি কিন্তু মীনা কার্টুনের কল্যাণে অনেকটাই সম্ভব।

মীনা কার্টুনের পর্ব তেমন বেশি নেই। সম্প্রতি নতুন কিছু পর্ব তৈরি করা হলেও বেশীরভাগ সময় একই পর্ব ঘুরে ফিরে প্রচারিত হয়। বাচ্চাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার এটাও একটা কারন হতে পারে। তবে, বাচ্চাদের কাছে যদি আমরা একে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি, বাচ্চারা যদি ডোরেমনের মতো মীনাকে গ্রহন করে, তাহলে আশা করা যায় UNICEF- এ ব্যাপারে নজর দিবে এবং পর্ব বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকবে। কারন, চাহিদা না থাকলে বানানোটাই বৃথা।

আমাদের যা করনীয়-
ডোরেমনের কারনে বাচ্চাদের মধ্যে হিন্দি বলার প্রবনতা বেড়ে গেছে ঠিকই তবু এটা বলবো না যে, বাচ্চাদের ডোরেমন দেখা বন্ধ করে দেয়া উচিত। কারন সেটা সম্ভবও না। কাল যদি ডোরেমন প্রচার বন্ধ হয়ে যায়, হাজার হাজার বাচ্চা এক হাতে ফিডার আরেক হাতে ঝাড়ু নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়বে, শিশু-বন্ধন করবে, প্রেস- কনফারেন্সও করার সম্ভাবনা আছে (একটু মজা করলাম ;))
অবশ্য তাদের দলে যে প্রাপ্তবয়স্ক কিছু ব্যাক্তিবর্গও থাকবে- সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সুতরাং, এটা কোন সমাধান নয়।
আমাদের যা করতে হবে-

• বাচ্চাদের কাছে অবশ্যই প্রথমে মীনা কার্টুনকে উপস্থাপন করতে হবে। ডোরেমন পরে দেখলেও ক্ষতি নেই তবে, তারা যেনো মীনাকেই প্রথমে গ্রহন করে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাবা মা'র ভূমিকা মুখ্য।

• সম্প্রতি ডোরেমন বাংলায় ডাবিং করা হচ্ছে। বাবা-মার উচিত হবে, তাদের বাচ্চাদের জন্য বাংলা ডাবিংকৃত ডোরেমনের সিডি কিনে সেগুলো তাদেরকে দেখানো। এতে হিন্দি ভাষার ছোবল থেকে তারা মুক্তি পাবে। বাংলায় ডাবিং করার জন্য সবাইকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে, যারা এসকল বিষয়ের সাথে জড়িত। (বড় কোন প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে এগিয়ে আসলে ভালো হয়

আমাদেরই একজন ব্লগার ভাই ইভান এই কাজে মাঠে নেমেছেন এজন্য তাকে অনেক সাধুবাদ। যথাযোগ্য সাহায্যের দাবিদার তার কাজ।

শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা-
আমি যেটা বুঝি তা হলো, মীনা কার্টুনের জগতটি সম্পূর্ণ লজিক্যাল বা বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে নির্মিত; আর ডোরেমনের জগতটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক/স্বপ্নরাজ্যের উপর নির্মিত। বাচ্চাদের জন্য দুইটারই প্রয়োজন রয়েছে। কল্পনা তাকে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখাবে, বাস্তবতা তাকে শেখাবে- কিভাবে সে বেড়ে উঠছে।
কল্পনা এবং স্বপ্নরাজ্যে বাচ্চারাই বিচরণ করবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এজন্যই তাদের কাছে ডোরেমনের এতো চাহিদা। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, বাস্তবতাই কিন্তু তার কাছে আগে ধরা দেবে। কোন বাচ্চার যদি স্কুলের হোমওয়ার্ক করতে ভালো না লাগে, অলসভাবে বসে থাকে এবং ভাবে যে ডোরেমন এসে তার হোমওয়ার্ক করে দিয়ে যাবে- তাহলে সেটা কোনদিনও সম্ভব হবে না। বরং, তার উচিত হবে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে হোমওয়ার্কটা করে ফেলা। কারন, এটাই বাস্তব। আর এ বাস্তবতার কথা বলে মীনা। কল্পনার প্রয়োজন অবশ্যই আছে তবে সেটা, বাস্তবতার আগে নয়। সুতরাং, এবার আপনিই ঠিক করুন- আপনার আগামী প্রজন্মের সামনে আপনি কোনটাকে আগে উপস্থাপন করতে চান- কল্পনার জগত, নাকি----বাস্তব জগত???


মীনার বাংলা কমিকসগুলোর ডাউনলোড লিঙ্ক-

মীনার সকল ইংলিশ কমিকসগুলোর ডাউনলোড লিঙ্ক-

মীনার বাংলা পর্ব-
IDM থাকলে এখান থেকেই ডাউনলোড করতে পারবেন।

মীনার ব্লগ-

মীনার পরিবার পরিচিতি-

২৪ সেপ্টেম্বর- মীনা দিবস

পোষ্টের উদ্দেশ্যঃ বাচ্চারা ডোরেমনকে গ্রহন করার আগে মীনাকে গ্রহন করুক, এটাই পোষ্টের মূল উদ্দেশ্য।
------------------------------------------ :) ------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:২১
৭৯টি মন্তব্য ৭৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×