somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ: রিক্সাওয়ালা

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“যত গর্বই করুক, মানুষ আসলে কিছুই না।একটা পাখিরই সামিল।খাবার খুজতে গিয়ে শিকারির ফাঁদে পড়তে পারে,কারো খাবার খেলে তারই পোষমানা হয়ে থাকতে হবে,তারই হুকুম মাফিক শিস দেবে,গান গাইবে,তারপর মনিব হয়তো একদিন খুশিমতো আর কারো কাছে দেবে বিক্রি করে ।”
শ্রমজীবি মানুষদের জীবন সংগ্রাম আর ভাগ্য যেন এ ক'টি বাক্যে ফুটে উঠেছে লেখক লাঅ চাঅ’র বর্ননায়।
খুশি বাবা-মা হারা,পরিবারহীন বিশ বছরের নি:সঙ্গ যুবক।তার জীবনের একটাই লক্ষ্য-রিক্সাওয়ালা হওয়া।তার জমি-জিরাত চাই না;তার চাওয়া একদিন তার নিজের একটা রিক্সা হবে।নিজের রিক্সা নিজে চালাবে।পিকিং এসে সে মানব মিলন রিক্সা গ্যারেজ থেকে রিক্সা ভাড়া নিয়ে চালানো শুরু করে।সবল সুঠাম তার দেহ,চওড়া বুকের ছাতি,মাথায় সে সকলের চেয়ে উচু।যাত্রী নিয়ে সে সবার চেয়ে দ্রুত ছুটতে পারে।এটা তার অহংকার।খুশি নামের মানেই যেন “জোরে ছোটা”।
খুশি সামান্য রিক্সাওয়ালা।তার সাধও নগণ্য।নিজের রিক্সা কিনবে,চালাবে,ঘরে বউ আসবে।কিন্তু সেই সামান্য আশাও পূর্ণ হয় না।সমাজব্যবস্থা এসে বাধা দেয়।গুড়িয়ে দেয় তার আশা।তবু আশা যায় না,শত হতাশায় ঝিলিক দিয়ে ওঠে,এই পাঁচালীই লিখেছেন লাঅ চাঅ।কিন্তু চীনের মুক্তির বৃহত্তর আশার সঙ্গে তাকে মিলিয়ে দিতে ভোলেননি।এইখানেই তার বাহাদুরি।
তিন বছর রিক্সা চালিয়ে ১০০ ডলার জমিয়ে,সে নিজের একটা রিক্সা কেনে।কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোলে রিক্সাখানা সে হারায়,গ্রেফতার হয় সেনাদের হাতে।তার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়।মাঝরাতে সেনাদল আক্রান্ত হলে খুশি মালিকানাবিহীন তিনটি উট নিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে যায়।সে আবার স্বপ্ন দেখেতে শুরু করে-উটগুলো বেচে সে আবার নতুন রিক্সা কিনবে।মাত্র ৩৫ ডলারে উটগুলো বেচে তার সে স্বপ্ন অচিরেই নষ্ট হয়।সে মানব মিলন রিক্সা গ্যারেজে ফিরে আসে।গ্যারেজ মালিক বুড়ো লিও এর কাছে তার টাকা গচ্ছিত রেখে আবার ভাড়ায় রিক্সা চালানো শুরু করে।রিক্সা কেনার বাকি টাকা জোগাড় হলে সে টাকাটা তুলে আবার রিক্সা কিনবে।কিন্তু ভাগ্য তার প্রতি বিরুপ আচরন করে। সে বুড়ো লিও এর মেয়ে যাকে বাঘিনী বলে সম্বোধন করা হয়েছে তার লালসার শিকার হয়।বাঘিনী ৩৭ বছরের অবিবাহীত কিন্তু অসতী মেয়ে। বাঘের মতই লম্বা-চওড়া বিশাল সে। ভয়ঙ্কর তার চেহারা-মুখ খুললে তার নেকড়ে দাত বেরিয়ে পড়ে। মেজাজ তার তিরিক্ষ।যখন চলে তখন মনে হয় যেন একটা মূর্তিমান কালো প্যাগোডা চলছে।এরকম মেয়েকে খুশি বিয়ে করতে পারবে না।আবার বাঘিনীও তাকে ছাড় দিবে বলে মনে হয় না।এদিকে সে পালাতেও পারছে না,কারন বাঘিনীর বাবার কাছে তার ডলার গচ্ছিত আছে।আর সে প্রানের শহর পিকিং ছেড়ে যেতেও চায় না।বাঘিনীর বাবা লিও তার মতো সামান্য রিক্সাওয়ালাকে জামাই হিসাবে মেনে নেবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন।
বাঘিনীর হাত থেকে নিস্তার পেতে সে মি চাও এর বাড়িতে মাসমাইনের কাজ নেয়।মি চাও সমাজতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী একজন ভদ্র অমায়িক শিক্ষক।খুশি লিও এর কাছে থাকা তার গচ্ছিত টাকা ফেরত পায়। আবার যখন সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তখনই আবার ছন্দপতন। মি চাও তিয়েনসিনে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।তার জমানো টাকাও এক প্রকার ছিনতাই হয়ে যায়।
সরাইখানায় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালাকে দেখে তার বোধোদয় হয়--এই কি তার ভবিষ্যৎ?
রিক্সাওয়ালার ওই এক ভাগ্য;একেবারে বন্ধ রাস্তা--কোনদিকে এগুনোর উপায় নেই।তুমি যতই পরিশ্রম কর,যতই উচু নজর তোমার থাক,বিয়ে করলে ,কি একবার রোগে পড়লে,তুমি গেলে!জীবনে ভালো আর মন্দ যাই তুমি হও না কেন,রিক্সাওয়ালার ভাগ্যই এক আলাদা।যে পথে তারা চলছে,সে মরনের পথ-সেখান থেকে কারো রেহাই নেই।যখনই হোক মৃত্যু ঠিক এসে হানা দেবেই-তা যেরকম ভাবেই আসুক।
আশা-নিরাশা,স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভঙ্গ, সম্ভাবনার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় রিক্সাওয়ালা খুশির জীবন।সেই সাথে উপন্যাসের কাহিনী। এ কাহিনী সমাজের নীচুতলার মানুষের কাহিনী।
দারুন উপভোগ্য ধ্রুপদি এক উপন্যাস “রিক্সাওয়ালা”।খুব বেশী চরিত্র নেই;তবে যখন যে চরিত্র এসেছে গভীরতা নিয়েই হাজির হয়েছে।অশোক গুহের অনুবাদ অত্যন্ত সাবলীল এবং প্রাণবন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×