সবার ধারনা হবে যেসব প্রকাশনী হুমায়ূন আহমেদের বই প্রকাশ করে সে সব প্রকাশনীর স্টলে ভীড় সবচেয়ে বেশি।যেমন--অন্যপ্রকাশ,কাকলী,সময়,পার্ল,অবসর,প্রতীক প্রকাশনী।হুমায়ূন আহমেদের জীবদ্দশায় সেটাই নিয়ম ছিল। তার মৃত্যুর পরও এ ধারা যথারীতি অব্যাহত ছিল।ইমদাদুল হক মিলন একবার তসলিমা নাসরিনকে বলেছিলেন, “হুমায়ূন আহমেদের কারনে মেলা সবসময় একদিকে কাত হয়ে থাকে।”শুনে তসলিমা নাসরিন খুব হেসেছিলেন।গত কয়েক বছরে দেখা গেছে যেসব স্টলে অনুবাদ করা বই পাওয়া যায় সেসব স্টলেও উপচে পড়া ভীড় ছিল।
এবার সিনারিও খানিকটা ভিন্ন।হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই আসা আর সম্ভব না।প্রকাশনীগুলো পুরানো বইগুলো ৩/৫/৭/১০ টা একসাথে করে সংকলন বের করছে।কোনটার নাম তিন কন্যা,কোনটার নাম তিন পুরুষ,সেরা হিমু,সেরা মিসির আলী,সেরা সাত হিমু/মিসির আলি,অনুবাদ সমগ্র ইত্যাদি হরেক তাদের নাম।দীর্ঘদিন এসব দেখতে দেখতে অনেক পাঠক আগ্রহ হারিয়েছে।অন্যদিন,কাকলী ইত্যাদিতে তাই এখন মাঝারি ভীড়।
প্রথমা প্রকাশনীতে ভালো ভীড় লক্ষ্য করা গিয়েছে।তাদের বেশ কিছু ভালো,মূল্যবান বই আছে।হকিংস এবং বিজ্ঞান বিষয়ক বই ছাড়াও অনুবাদিত বই,হক সাহেবের মতো দেশের বড় লেখকদের বই তারা বের করে।
তাই বলে প্রথমাতে সবচেয়ে বেশী ভীড় হয়--তা কিন্তু না।সবচেয়ে বেশি ভীড় হয় তাম্রলিপির স্টলে(প্যাভিলিয়নে)।প্রথমার চেয়ে তাম্রলিপির স্টল দ্বিগুন বড়,সেই হিসাবে ভীড়ও বেশি।প্রথমার স্টলে তাও একবারে সামনে যাওয়া যায় কিন্তু তাম্রলিপির স্টলে সামনে যাওয়া যায় না।তিন হাত দূরে দ্বিতীয় সারিতে থাকতে হয় ।তাদের অধিকাংশ বই আত্মউন্নয়ন মূলক,মোটিভেশন মূলক। যেমন:আনলিশ ইয়োর পটেনশিয়াল,পাওয়ার অব হ্যাবিট,পাওয়ার অব পজেটিভ থিংকিং,স্টুডেন্টস হ্যাক,ভালো ছাত্র হবার কৌশল,বিদেশে উচ্চ শিক্ষা,কিভাবে মার্কেটিং করবেন,এক্সিকিউটিভ থেকে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর,কীভাবে উদ্যোক্তা হবেন,১০১ স্টার্ট-আপ আইডিয়া,কিভাবে ব্রান্ড বানাবেন,কীভাবে ব্রেন সুপার ফাস্ট করবেন,গণিতের মজা,মজার গণিত,অংক-বাংলা- সমাজ -ভুগোল অলিম্পিয়াড,কম্পিউটার শিখুন,ইংরেজি শিখুন , ফ্রীল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং,কিভাবে সর্বক্ষেত্রে সফল হবেন ইত্যাদি।বইয়ের নাম উনিশ-বিশ হতে পারে,মোটামোটি এরকমই।
মানুষকে সফল করার পথ তারা বাতলে দিলেও সফল ব্যক্তিদের, পেশাজীবিদের, অভিজ্ঞদের সেখানে দেখা গেল না।মূলত সেখানে টিনেজারদের উপচে পড়া ভীড়।দু-চার জন ভার্সিটির ছাত্রও দেখা গেল;তবে সংখ্যায় তারা বেশি না।লেখকরাও তুলনামূলক ভাবে তরুণ--আয়মান সাদিক,ফ্রীল্যান্সার নাসিম,ডন সামদানি প্রমুখ।তাম্রলিপিতে এতো ভীড় কেন ,দেখতে আমি সেখানে গিয়েছিলাম ।কিন্তু দেখলাম আমার উপযোগী বই সেখানে নেই।
(আমি প্রথম এবং তৃতীয় সপ্তাহে বই মেলায় গিয়েছি।সেই অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৩