অমর একুশে গ্রন্থ মেলা ২০২১ এগিয়ে আসছে।প্রকাশকদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।তারা পান্ডুলিপি আহ্বান করছেন লেখকদের কাছ থেকে।লেখকরা পান্ডুলিপি শেষ করছেন , প্রকাশকদের সাথে কথা বলছেন,তাদের কাছে পান্ডুলিপি পাঠাচ্ছেন।প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই প্রকাশে বরাবরের মতো কোন সমস্যা নেই।সবাই তাদের বই ছাপানোর জন্য মুখিয়ে আছে।একেক জনের তিন/চারটি করে বই পর্যন্ত তারা প্রকাশ করছেন।নবীনদের অবস্থা তথৈবচ।বেশ ক’জন প্রকাশকের সাথে কথা বলে এবং প্রকাশনীর ফেসবুক পেজ ,স্পনসরড বিজ্ঞাপন থেকে বেশ কিছু জিনিস লক্ষ্য করলাম।
ঢাকার একটি বিখ্যাত প্রকাশনী পান্ডুলিপি চান এমন লেখকদের কাছ থেকে যাদের পূর্বে বই বেরিয়েছে বা পত্র-পত্রিকায় লিখে যাদের মোটামোটি নাম হয়েছে, তাদের কাছ থেকে।অথচ নবীন লেখকের পান্ডুলিপি পেয়ে তারা তিন বার ফোন করেন এবং এক পর্যায়ে জানিয়ে দেন বই ছাপাবেন কিন্তু খরচ আপনার।এরকম প্রস্তাব পেলে নিজেকে মুরগী না ভেবে লেখকের কোন উপায় আছে?
ঢাকার আরেকটি প্রকাশনীর পান্ডুলিপি আহ্বানের স্পন্সরড বিজ্ঞাপনের কমেন্টে জনৈক বুদ্ধিমান লেখক জানতে চেয়েছেন---“শর্ত আছে?” প্রকাশকের উত্তর---“অবশ্যই।” আরেকজন লেখক প্রশ্ন করেছেন---“কি কি শর্তে বই প্রকাশ করেন জানা যাবে?”প্রকাশকের উত্তর---“আগে পান্ডুলিপি পাঠান,তারপর শর্ত।”যদিও বিজ্ঞাপনে শর্তের কথা কিছু বলা নেই।প্রকাশক গোষ্ঠির এ রকম আচরণ দুঃখজনক।
আরেক প্রকার প্রকাশক আছেন যারা যৌথ কাব্যগ্রন্থ,যৌথ গল্প গ্রন্থ বের করতে পছন্দ করেন।এদের বিজ্ঞাপনে লেখা থাকে “প্রকাশনা ব্যায়ের শর্ত আছে।” লেখা নির্বাচিত হলে বিশ জন লেখক প্রত্যেকে দু’হাজার টাকা প্রকাশনা খরচ দেন;বইটি প্রকাশিত হয়। লেখকরা ৫/৭ টা সৌজন্য কপি পান।প্রকাশক বই বের হওয়ার আগেই সেফ সাইডে।লেখকরাও খুশি।
কিছু প্রকাশনী যৌথ উদ্যোগে বই প্রকাশ করতে চান। বই প্রকাশ করবেন কিন্তু লেখককে একশত কপি বই বিক্রির নিশ্চয়তা দিতে হবে।অর্থাৎ লেখককে শুধু লেখক হলেই হবে না,হতে হবে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী।একজন লেখক তার মেধা,সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগিয়ে গল্প,উপন্যাস লেখেন /অনুবাদ করেন।আমি মনে করি এটাই তার বিনিয়োগ। প্রকাশক পান্ডুলিপি পড়ে নতুন লেখকের উপর ভরসা করতে না পারলে লেখা ছাপবেন না। প্রকাশকরা মানহীন বই লেখকের সম্পূর্ণ খরচে ছাপতে আগ্রহী কিন্তু নতুন সম্ভাবনাময় লেখকের বই ৬০/৪০,৭০/৩০ ঝুকিতে ছাপতে রাজী না।যে কোন ব্যাবসাতেই ঝুকি থাকে।কিছু ঝুকি না নিতে পারলে ব্যাবসা করা উচিৎ না;বিশেষ করে ঝুকির পরিমাণ নির্ণয়ে যখন আপনার কাছে পান্ডুলিপি আছে।
ঢাকার বাইরে কোন প্রকাশনীতে ভুলেও পান্ডুলিপি পাঠাবেন না। এরা চরম আনপ্রফেশনাল। একটি প্রকাশনিতে লেখা পাঠিয়ে ছিলাম।ডেডলাইন শেষ হবার পর দেড় মাসেও পান্ডুলিপি প্রতিযোগীতার ফলাফল ঘোষনা করতে পারেনি। আমার শ্রম এবং অর্থ দুই-ই নষ্ট।এদিকে ঢাকার একটি প্রকাশনী ইতোমধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ঢাকার বাইরের প্রকাশনীগুলো যে শুধু চরম আনপ্রফেশনাল তা নয় ,তাদের স্বাভাবিক ভদ্রতা জ্ঞানটুকুও নেই।ঠাকুর গাও কি ফরিদপুর কোন এক জায়গার প্রকাশনী তাদের ফেসবুক পেজে লেখা আহ্বানের সাথে সাথে এটাও জানিয়েছে---প্রকাশনীর ব্যায়ে বই প্রকাশ করা হয় না। আপনি যদি বাংলা একাডেমী বা একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।ওই প্রকাশক সম্ভবত মানসিক ভাবে অসুস্থ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:২১