somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টার, বিলবোর্ড ও দেয়াললিখনআইনি সীমাবদ্ধতা - কালের কণ্ঠ

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মো. জাহিদ হোসেন

ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক ও অলিগলিতে নানা রঙের পোস্টার। আর সেই সঙ্গে দেখা যায়, যত্রতত্র নানা রকম দেয়াললিখন ও বিলবোর্ড। কোথায় নেই পোস্টার, বিলবোর্ড ও দেয়াললিখন! বাসস্থান, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাকেন্দ্র, শিল্প-কারখানা, দোকান থেকে শুরু করে দেয়াল, বেড়া, গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, খাম্বা, সড়ক বিভাজক, ব্রিজ, কালভার্ট কিংবা সড়কের উপরিভাগ_সব স্থানেই হরদম চলছে দেয়াললিখন, পোস্টার লাগানো আর বিলবোর্ডের কাজ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার তাদের প্রচার-প্রচারণার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো, বিলবোর্ড সাঁটা আর দেয়াললিখনকে। এতে তাদের প্রচার-প্রচারণা বা বিজ্ঞাপনের জন্য কাউকে কোনো অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে না বিধায় তারা এ ব্যাপারে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাতের আঁধারে মালিকের কোনো অনুমতি ছাড়াই যারতার দেয়ালের ওপর চলছে এসব অবৈধ কাজ।
দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে দেয়াললিখন বা পোস্টার লাগানো নিষেধ থাকলেও এ ক্ষেত্রে কোনো দল, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান_কেউই আইনের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করছে না। এমনকি জেলা আদালতের দেয়ালগুলোও রঙিন হয়ে আছে নানা রঙের পোস্টারে। অনিয়ন্ত্রিত পোস্টার, বিলবোর্ড ও দেয়াললিখন যেমনি পথচারীর নিয়মিত বিরক্তির সৃষ্টি করছে, তেমনি নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট করার প্রধান অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২-তে বলা আছে, কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেয়াললিখন বা পোস্টার লাগানোর জন্য প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা স্থান নির্ধারণ করে দিতে পারবে এবং ওইভাবে নির্ধারিত স্থানে দেয়াললিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে উল্লিখিত নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে দেয়াললিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে।
বিদ্যমান দেয়াললিখন বা পোস্টার সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আইন কার্যকর হওয়ার পর বিদ্যমান দেয়াললিখন বা পোস্টার মুছে ফেলতে বা অপসারণের জন্য সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা সময়সীমা নির্ধারণ করবে। কিন্তু সরকার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সুবিধাভোগী তার দেয়াললিখন বা পোস্টার অপসারণ বা মুছে ফেলতে দেখা যায় না।
সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে অননুমোদিত যেকোনো দেয়াললিখন বা পোস্টার মুছে ফেলতে বা অপসারণ করতে পারবে এবং এসব কাজের সব খরচ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীর থেকে নগদ আদায় করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সুবিধাভোগী কোনো অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করতে না পারলে তা Public Demands Recovery Act, 1913 (Act IX of 1913)-এর বিধান অনুযায়ী সরকারি দাবি হিসেবে আদায় করা যাবে।
নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোনো দেয়াললিখন বা পোস্টার মুছে ফেলা না হলে বা অপসারণ করা না হলে কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে নগদ অর্থ আদায় করা না গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে। অনাদায়ে অনধিক ১৫ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা যাবে। আর সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে। অনাদায়ে অনধিক ৩০ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিতে পারবেন আদালত। এ ছাড়া ওই ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীকে তার নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেয়াললিখন বা পোস্টার মুছে ফেলার বা অপসারণের জন্য আদেশ প্রদান করা যাবে। বিদ্যমান আইনে দেয়াললিখন বা পোস্টার সম্পর্কিত সব অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে করার বিধান রয়েছে।
কোনো কম্পানি এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ করলে বা এমন কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে ওই কম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ওই অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে, যদি না তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে ওই অপরাধ তাঁর অজ্ঞাতে করা হয়েছে বা ওই অপরাধ রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। আইন অনুযায়ী স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেমন_সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা সময় সময় অননুমোদিত দেয়াললিখন বা পোস্টারগুলো মুছে ফেলার বা অপসারণ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না।
২০১২ সালে হাইকোর্ট জনগণের ও ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর দৃশ্য দূষণকারী এ ধরনের প্রচারণা রোধ ও নিয়ন্ত্রণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আইন হলো, রুল জারি করা হলো। তবুও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
তা ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লাগানো বিলবোর্ডগুলোও অবৈধ। রাতে এগুলোতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে পরোক্ষভাবে নগরবাসীকে বৈদ্যুতিক সংকটে রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন হারবাল প্রতিষ্ঠানের অশ্লীল পোস্টারে ছেয়ে গেছে সর্বত্র। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ বা সিটি করপোরেশনকে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আইন থাকলেও আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। যে যার পক্ষ থেকে নিজ নিজ দেয়াল ও স্থান পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে।

লেখক : আইনের শিক্ষার্থী,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×