somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্র রাজনীতির প্রতি তরুণরা শ্রদ্ধা হারাচ্ছে

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোঃ জাহিদ হোসেন

বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতির যে করুণ অবস্থা তাতে অনেক সৎ ও মেধাবী তরুণ রাজনীতিতে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অধিকাংশ তরুন কিংবা শিক্ষার্থীর কাছে বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই হল ঘুণে ধরা সংস্কৃতি। রাজনীতির কথা বললেই বাস্তবতা নিয়ে তাদের সামনে ঘৃণার একটা স্পষ্ট পর্দা ফুটে উঠে। অথচ রাজনীতিই হল এমন ধারণা যে ধারণায় উজ্জীবিত হয়ে মানুষ যুগ যুগ ধরে নিজেদের অধিকার আদায়ের পথে নেমেছে, স্বৈরাচার শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এদেশে ছাত্র রাজনীতির প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল এমন একদল তরুণের দ্বারা যারা সমাজের অনাচার দূর করতে আর শ্রেণী বৈষম্যের হাত থেকে সমাজকে মুক্ত করতে প্রথম এগিয়ে এসেছিলো বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে।
সেই ৫২ এর ভাষার আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে ৮৯ এর গণঅভ্যূত্থানতে মূলত তরুণরাই ছিল মূল শক্তি তথা সেই সময়কার রাজনীতিতে তাদেরই ছিল সব চেয়ে বড় অবদান। ছাত্র রাজনীতি দেশ ও সমাজের জন্য কল্যাণকর বলে তখনই বিবেচিত হবে যখন তা নিয়মতাণ্ত্রিক উপায়ে ছাত্রদের স্বার্থ সংরক্ষণের কাজ করবে।

কিন্তু আমাদের দেশে পূর্বের সেই ছাত্র রাজনীতি ও এখনকার ছাত্র রাজনীতির কোন মিল নেই। ছাত্র রাজনীতি আজ উল্টা পথ অনুসরণ করতে শুরু করেছে। পূর্বের ছাত্র রাজনীতি ছিল গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। আর বর্তমানের ছাত্র রাজনীতি হল স্বজনপ্রীতি, সিট দখল, আদিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজি, হত্যা, বোমাবাজী, সন্ত্রাসী ইত্যাদির মাধ্যম। বর্তমানে খুব কম তরুণ-তরুণী পাওয়া যাবে যারা প্রকৃতই রাজনৈতিক ধারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে আসে। নঞর্থক দৃষ্টিভঙ্গী থাকার পরেও বর্তমানে যে সব তরুণ-তরুণী রাজনীতিতে আসে তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য আসে। আবার অনেকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিস্থিতির চাপে পড়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়। যে সব তরুণ প্রকৃতই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য রাজনীতিতে আসে তাঁদের আবার খারাপদের ভিড়ে টিকে থাকতে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। অথচ এক সময় মেধাবী ও সৎ তরুণরা ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতো এবং ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করত।

আবার এমনও দেখা যায় অনেকে হাজার ভুল থাকার পরেও নিজের রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করতে নারাজ। আমার মতে যারা নিজের দলের ভুল দেখার পরেও তা নিয়ে কোন প্রতিবাদ কিংবা সমালোচনা না করে একতরফা ভাবে অপর দলগুলোর ভুল খুঁজে বেড়ায় তারা উক্ত রাজনৈতিক দলে সুবিধাভোগী ছাড়া আর কিছু না। কারণ আমরা জানি নিজেদের ভুলিভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা করলে সংশ্লিষ্ট দল তাদের একই রকম ভুলের আর পুনরাবৃত্তি করবে না বা নিজেদের ভুলগুলো ঠিক নিতে চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে এমন দৃষ্টিভঙ্গী খুব কম দেখা যায়।

অনেকে বলে থাকেন যারা কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন না কিংবা তাদের ভাল মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করেন তারা সুশীল সমাজ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের অভিযোগ, এই সুশীলরা আসলে কোন কাজের না। এরাই নাকি একদিন বাংলাদেশকে ধ্বংস করবে। ধরলাম তাদের কথা ঠিক। আর আমার কথা হল যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আলোচনা সমালোচনা করার কারণে সুশীলরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করবে, কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি এমন মনে করে থাকেন তবে তা হল অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কিন্তু যে সব রাজনীতিবিদরা ও তাঁদের সমর্থকরা বর্তমানে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, দেশের মানুষের ভাগ্যে ভাগ বসাচ্ছে, হত্যা, চাঁদাবাজি, গুম, বোমাবাজী, ছিনতাই কিংবা দুর্নীতিতে ইন্দন যোগাচ্ছে তা তো সরাসরি প্রত্যক্ষ করছি। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন কাদের কর্মকাণ্ড বেশি ক্ষতিকর? ভবিষ্যতের সেই সুশীল সমাজের নাকি বর্তমানের এই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের? কারা সরাসরি জনগনের ক্ষতি করছে? দেখা যায় রাজনীতিবিদ কিংবা তাদের সমর্থকদের কর্মকাণ্ডই সরাসরি সাধারণ মানুষকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করছে হোক তা সরকারী দলের কিংবা বিরোধী দলের।

বর্তমানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ ব্যাক্তি তাদের স্বার্থের জন্যই কাজ করে থাকেন, দেশের জন্য বিন্দু মাত্র ভাবেন না। যদিও তাঁদের একটা অংশ সমাজে লোক দেখানো অনেক সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন। তাদের চিন্তায় সাধারণ মানুষের কোন স্বার্থ থাকে না। এসব আমাদের দেশে শুধু পরীক্ষিতই নয়, প্রমানিতও যার প্রভাব সচেতন তরুণদের উপর পড়ছে। আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে কিংবা হত্যা করা হচ্ছে নির্বিচারে। বিরোধী পক্ষদের কেউ কেউ তা দেখে উল্লাস করছে, মজা পাচ্ছে। উক্ত ব্যাক্তি যে রাজনৈতিক দলের সদস্য হোক না কেন সবার উপরে তাঁর পরিচয় - সে একজন মানুষ। সে কারো ছেলে, সে কারো বাবা কিংবা সে কারো ভাই। সে কোন অপরাধ করে থাকলে তার জন্য দেশে আইন আছে।

এছাড়াও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিটি সরকার তাঁর বিরোধী দলকে দমন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েও মানুষকে নির্যাতন, হয়রানী করতে উৎসাহিত করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে বিরোধী পক্ষ আরো বেশি সহিংস হয়ে উঠছে। কেউ কারো অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলা ঠুকে দেওয়া হচ্ছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের বন্দুকের গুলিতে, দায়ের কোপে অনেক ছাত্র প্রাণ হারাচ্ছে, পঙ্গুত্ব বরণ করছে। তাহলে কেন এই রাজনীতি? যে রাজনীতি সাধারণ মানুষের ভালর চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। যে রাজনীতিতে দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখা হয়। চলমান বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে বর্তমানে অধিকাংশ তরুণদের মনে এসব প্রশ্ন জাগা ও রাজনীতিতে আসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলাটাই স্বাভাবিক।

লেখকঃ ছাত্র, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, স্টুডেন্ট কাউন্সিল, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন, চট্রগ্রাম।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×