বাংলাকে জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
Sun 26 Sep 2010 10:58 AM BdST
rtnnইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ২৬ সেপ্টেম্বর (আরটিএনএন ডটনেট)-- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসঙ্ঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার আহবান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত আড়াইটার দিকে নিউইর্য়কে জাতিসঙ্ঘে সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে বিশ্ব নেতাদের প্রতি এ আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাকে জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে গ্রহণ করার যুক্তিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ আজ বাংলায় কথা বলেন। এ ভাষার রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সাহিত্য। এজন্য বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তিনি জানান, ২১শে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এর ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, আবাসন ও জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
এই হুমকি মোকাবিলায় গঠিত তহবিলে বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদার হাতে অনুদান প্রদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এতে বাংলাদেশ তার টিকে থাকার সংগ্রামে সফল হতে পারে।
ভাষণের শুরুর দিকে তিনি বলেন, ‘৩৬ বছর আগে জাতির পিতা এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবতার সেবায় জাতিসঙ্ঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজও জাতিসঙ্ঘ সারা বিশ্বের বিপন্ন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের শেষ ঠিকানা হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলায় ভাষণ দেন। গত বছরও তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন।
বিশ্ব সংস্থা বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছে। ১৯৮৮ সালে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২৪টি দেশে ৩২টি মিশনে ৯৭ হাজার সৈন্য প্রেরণ করেছে।
তিনি জানান, ‘এসব শান্তি মিশনে আমরা বাংলাদেশের ৯২ জন বীর সৈনিককে হারিয়েছি। বাংলাদেশ এখন জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সেনা প্রেরণকারী দেশ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা, আবাসন ও জীব বৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। বন্যা, খরা, সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের ক্ষতি করছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের কারণেই এ অবস্থা। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে দায়ী না হয়েও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ফলে সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এই ক্ষতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, এই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ১৩৪টি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন নদ-নদীর ড্রেজিং, ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুনর্বাসনের জন্য চাষযোগ্য জমি পুনরুদ্ধার এবং খাদ্য উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
এ ছাড়াও রয়েছে কার্বন আধার তৈরি। ২০১৫ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জমিকে বনায়নের আওতায় আনা এবং সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টির মাধ্যমে সমুদ্র উপকূল রক্ষা করা।
তিনি বলেন, আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি, পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খায় এমন ধরনের শস্যের জাত উদ্ভাবনে গবেষণার কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগকালীন আশ্রয়ের জন্য সমুদ্র উপকূলে ইতোমধ্যে ১৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থের।
তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদার হাতে অনুদান প্রদানের আহ্বান জানান যাতে বাংলাদেশ তার টিকে থাকার সংগ্রামে সফল হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গত বছর কোপেনহেগেন সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মেক্সিকোর কানকুন সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা একটি সুনির্দিষ্ট ইতিবাচক চুক্তিতে উপনীত হবেন।
বাংলাদেশ, ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ এবং হিমালয় অঞ্চলসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষের ভাগ্য বিপর্যয়রোধে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে তিনি উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে এখনো পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি। মন্দার কারণে অনেক উন্নত দেশসহ স্বল্পোন্নত দেশসমূহের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্রেটনউড ইনস্টিটিউশনগুলোকে উন্নয়নশীল বিশ্বে বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে তাদের সহায়তা আরো জোরালো করতে হবে।
এই সংস্থাগুলো সেখানে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন সহায়তা দিতে পারে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনি এসডিআর এবং অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের আওতায় একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো নিজ দেশের বেকার সমস্যার পাশাপাশি বিদেশে চাকরির ক্ষেত্রেও অভিবাসন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এসব দেশের জাতীয় আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে রেমিটেন্স থেকে। এজন্য তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উন্নত দেশগুলোতে অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শেষ দিকে বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিপূর্ণ বিশ্ব হিসাবে গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চাই। আসুন, আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




