somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু সান্ত্বনা

১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারদিকে শুধু হতাশা। সান্ত্বনা কেবল সুষ্ঠু নির্বাচন। চার সিটিতে শোচনীয় পরাজয়ে মনোবল ভেঙে পড়েছে দলের কর্মীদের। তাদের কথায় হতাশার সুর। ক্ষমতাসীনদের এমন পরাজয়ের প্রভাব পড়েছে সাধারণ শ্রমজীবী পেশাজীবীদের মাঝেও। কেন এমন পরিণতি- সর্বত্র এখন এমন আলোচনা। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে চায়ের দোকান থেকে অভিজাত পাড়ার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চার দেয়ালে বন্দি কক্ষগুলোতেও। এমনকি আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকগুলোতেও চলছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা এবং পরাজিত হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ। সেখানে ক্ষোভ আছে, হতাশা আছে, ক্ষুব্ধতা আছে, মান-অভিমান আছে একে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ আছে। কি কারণে এমন ফল বিপর্যয় ঘটলো? দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অলোচনায় উঠে এসেছে নানা কারণ। বিশ্লেষণ হচ্ছে রাজনীতির সিদ্ধান্তগুলো নিয়েও। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে কেন জাতীয় নির্বাচনের রূপ টেনে এনে এমন বিপর্যয় ঘটনা হলো? আলোচনা হচ্ছে সে প্রসঙ্গেও।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগ আলোচনাই অনানুষ্ঠানিক বলা যায় এক ধরনের গসিপ। ওই সকল আলোচনা কেবল তাদের মাঝেই সীমাদ্ধ থাকে, হাই কমান্ড পর্যন্ত খুব একটা পৌঁছায় না। বাইরে যা-ই ঘটুক দলের সিনিয়র নেতারা পর্যন্ত দলীয় প্রধানের কাছে গিয়ে কথা বলেন নিজের অবস্থান ঠিক রেখে। নেত্রী অখুশি হতে পারেন এমন কোন কথা বলে কেউ বিরাগভাজন হতে চান না। এমন কথাও চাউর আছে একজন উপদেষ্টা তো মাঠ থেকে আসা গোয়েন্দা রিপোর্ট পর্যন্ত নিজের বাসায় বসে কাটছাঁট করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন অনেক কিছুই আলোচনা করছেন।
কথা উঠেছে একই সঙ্গে যুদ্ধের সকল ফ্রন্টে ফায়ার ওপেন করা নিয়েও। এটা কোন দক্ষ সেনাধ্যক্ষের কাজ হতে পারে না। কিন্ত সরকার সে কাজটিই করেছে তা আবার যুদ্ধের জন্য সেনাদের প্রস্তুত করা ছাড়া এবং মিত্রদের সঙ্গে গৃহবিবাদ জিইয়ে রেখে। বিএনপির সঙ্গে বিরোধ তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে, জামায়াতের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে, সর্বশেষ সরকার চরম বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে হেফাজতের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ বড় তিনিটি শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে মিত্রবিহীন। মহাজোটের অন্যতম প্রধান শরিক এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে তো নেই-ই বরং বিরোধী। আওয়ামী লীগের চিরকালের মিত্র সিপিবি তাদের সঙ্গে নেই। আওয়ামী ঘরানার পরীক্ষিত বন্ধু বুদ্ধিজীবীদের একের পর এক অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে। আওয়ামী ঘরানার পরীক্ষিত বন্ধু বলে চেনা মানুষ এ বি এম মূসাকে একটিমাত্র কথার জন্য অপমান করা হলো কুষ্টিয়ার গণ্ডগ্রাম থেকে তুলে আনা নেতা হানিফকে দিয়ে। বলা হলো রাজাকার পর্যন্ত অথচ ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুর সময়ে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। একের পর এক মিত্রকে কাছ থেকে তাড়িয়ে দেয়াই যেন দলের বর্তমান নেতাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে চরমভাবে অগোছালো এলোমেলো, ধান্দাবাজিতে ব্যস্ত দলকে রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত না করে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করায় দেশব্যাপী জামায়াতের তাণ্ডব রুখতে পারেনি দলীয় কর্মীরা। উল্টো মার খেতে হয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীদের। বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। দল বলতে যেটুকু আছে তা ঢুকে পড়েছে এমপি-মন্ত্রীদের পকেটে, বাকিরা এমপি-মন্ত্রীদের ঠেলায় নীরব নিথর হয়ে গেছে
একটি দেশে উগ্র ধর্মবাদী লোক থাকে, আবার ধর্মে অবিশ্বাসী লোকও থাকে। চরমপন্থি লোক থাকে, নরমপন্থিও থাকে। এটা কেবল বাংলাদেশেই নয় দুনিয়ার সব দেশেই আছে। সরকারের কাজ হচ্ছে ভারসাম্য বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। কারও পক্ষ নেয়া নয়। তারাই ভাল সরকার যারা দক্ষভাবে এ ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে। আওয়ামী লীগ সেটা করতে পারেনি। কেন পারেনি? কারণ একটাই- দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার অভাব। হেফাজতে ইসলাম কখনওই সরকারের প্রতিপক্ষ হতে চায়নি। শুরু থেকেই তারা বার্গেনিং এজেন্টের ভূমিকায় ছিল। তাদের কর্মসূচিগুলোও সেভাবেই দেয়া। তারা চেয়েছিল ইসলামের পক্ষে একটি প্রেসার গ্রুপের ভূমিকা নিতে। কিন্তু সরকারই তাদের ডেকে এনে প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। কেন তোফায়েল আহমেদের মতো বাকপটু নেতা বা গওহর রিজভীর মতো স্বীকৃত নেগোসিয়েটরকে সমঝোতার জন্য না পাঠিয়ে হাছান মাহমুদের মতো একজন রাজনৈতিক কূটনীতিতে অনভিজ্ঞ নবীনকে কেন পাঠানো হলো তা এখনও স্পষ্ট নয়। যাই হোক, ফল যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতকে মিডিয়ার আড়ালে রাখতে হেফাজতকে সামনে আনার পলিসি যে কি পরিমাণ ভুল হয়েছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তা হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিয়েছে হেফাজত।
রাজনীতির হিসাব সব সময় দুয়ে দুয়ে চার হয় না। এখানে অনেক অপ্রিয়কে মেনে নিয়েও এগোতে হয়। বিএনপি মৌলবাদী জামায়াতকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় তাদেরকে মিত্র ভাবে এটা সত্য। তাই বলে সেই দোষে বিএনপিকে মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা ছিল একেবারে ভুল কৌশল। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে কথা বললেও তাকে বলা হয়েছে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতির জন্য একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ নিয়ে দেশী-বিদেশী নানা ধরনের ষড়যন্ত্র কাজ করছে। ওই প্রশ্নে সরকারের উচিত ছিল জামায়াত বাদে বাকিদের সঙ্গে নেয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপিকে পাত্তা না দিয়ে জামায়াতকে হালে পানি পাইয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপিকে সরকার ঠেলে দিয়েছে জামায়াতের কাছে যেটা জামায়াত চেয়েছিল। রাজনীতিতে কখনও চরম আঘাত সুফল বয়ে আনে না। সরকার এখানে ভুল কৌশলে এগিয়েছে খালেদা জিয়ার দুই ছেলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে। এমনকি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে ঠেলে দিয়েছে। হামলা মামলা করে মিটিং-মিছিল না করতে দিয়ে পুরো বিএনপিকে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করা হয়েছে যা কখনও ছিল না। এখন নিজেদের রক্ষা করতে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধ হেফাজত যাকে পাবেন তার সঙ্গে ঐক্য করবেন- এটাই স্বাভাবিক কারণ, শেখ হাসিনা তার সকল দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। শোনা যায় কেউ কেউ শেখ হাসিনাকে বলেছেন বিএনপিকে ভেঙে ফেলা যাবে এবং আওয়ামী লীগ একা নির্বাচন করলে বিএনপির একাংশ নির্বাচনে আসবে। বিএনপির বেশ কয়েকজন বড় নেতা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখে এটা ঠিক। তবে আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বললেন, বিএনপি ভাঙবে এটা নেত্রী কিভাবে বিশ্বাস করেন জানি না, তার তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তো বোঝা উচিত বিএনপি কোন দিন ভাঙবে না কারণ আওয়ামী লীগ কোন দিন ভাঙবে না। শেখ হাসিনা বাদে যেমন আওয়ামী লীগ হবে না তেমনি খালেদা জিয়া বাদে কোন দিন বিএনপি হবে না।
রাজনীতি হচ্ছে সেরা কূটনীতি। লাঠির ভাষা রাজনীতির ভাষা এক হয়ে গেলে তা বুমেরাং হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে কূটনীতির ভাষার বদলে মামলা হামলাকে প্রধান্য দিয়েছে বেশি। হামলা মামলা পুলিশি নিপীড়ন পৌঁছেছে গ্রাম পর্যন্ত। পুলিশ বাড়াবাড়িও করেছে অনেক ক্ষেত্রে। সাধারণ মানুষ নিরপরাধ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। জামায়াত ধরার নামে অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছ থেকে অর্থকড়ি কামিয়েছে পুলিশ। সেগুলো দেখার কোন লোক ছিল না মাঠে। ওইসব অত্যাচারের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে মানুষ ভেতরে ভেতরে একতাবদ্ধ হয়েছে নিজেদের তাগিদে। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের তাগিদ থেকেই সাধারণ মানুষ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
সূত্র:http://www.mzamin.com/details.php?nid=NTkwMTk=&ty=MA==&s=MTg=&c=MQ==
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×