somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাফ-ওয়াল,লাল-নীল ফুল ও একজন আইন্সটাইনের উপলব্ধি

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপেক্ষার এই সময়গুলোতে ক্যাফের সাম্নের হাফ-ওয়াল টাকে বড্ড আপন মনে হয় আমার । বাচ্চাকালে দেখা এক্টা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেলো । পশ্চিমের শীতবস্ত্রের মোড়কে আচ্ছাদিত এক বঙ্গ ললনা নাচন-কুদন করে আমাদের জানাতেন যে , গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে ত্বকের যত্ন নিতে, তিব্বত পমেট-ই তার একমাত্র সঙ্গী । কিন্তু সৌভাগ্যবশত (কিম্বা দুর্ভাগ্যবশত),সেই ললনার মেকাপ বিহীন মুখমন্ডল দেখবার পর হতে, তিব্বত পমেট এর সঙ্গ লাভের যৌক্তিকতা খুজে পাইনি আজও । কিন্তু যৌক্তিকতা বোধহয় স্থান,কাল,পাত্রের উপর নির্ভরশীল । বুয়েট এর স্থাপন কালে কোন যুক্তিতে, এরকম আপাত-দৃষ্টিতে আধা সম্পূর্ণ একটি দেয়াল বানানো হয়েছিল তা প্রায়ই আমার 'কিছু না করার সময়' গুলোতে চিন্তার খোরাক যোগান দেয় । কোনো দূরদর্শী প্রেমিক প্রকৌশলী হয়ত তখন বুঝে থাকবেন যে, আজ হতে কয়েক যুগ পরে এই হাফ-ওয়ালটাই এ যুগের প্রেম-প্রকৌশল এর ছাত্রদের কাছে তিব্বত পমেটের মত গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে অপেক্ষার একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠবে । তাকে সালাম ।;)

ইটের সুচারু বুননে কি সুন্দর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে হাফ-ওয়াল টা । কত ফ্রেশার ব্যাচ আসে, কত র‍্যাগ ব্যাচ যায় ,শুধু এই হাফ-ওয়ালটা থাকে অজস্র নির্ভেজাল আড্ডা, বন্ধু-বন্ধু খেলা, প্লেটনিক প্রেমের আবেগীয় উৎস , রগরগে ফ্রয়েডীয় প্রসঙ্গ-বিশ্লেষন , আর নির্মম উপসংহারের সাক্ষী হয়ে ।
হাফ ওয়াল টা আমার অনেক ঘটনার সাক্ষী, অঘটনের ও বটে । পরম প্রিয় সিনিয়র র‍্যাগার ভাইদের কারণে এর দৈর্ঘ,প্রস্থ উচ্চতাও আমার মুখস্থ । মনে পড়ে সেই সদ্য সিভিল ড্রয়িং শেখার কাল ; হাফ ওয়াল এ বসে ,সবান্ধবে সাইড ভিউ, টপ ভিউ ,হিডেন লাইন খুজতে এই মনে উথাল পাতাল ;)। সেই ক্যাফে ক্রিকেট , শচীনসম স্ট্রেট ড্রাইভ করে এই হাফ ওয়ালে বসা ললনাদের দৃষ্টি আকর্ষণের সেই মরণ-পণ চেষ্টা , আর অবশেষে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে সেই চেষ্টার অপমৃত্যু ।

দিনবদলের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেল একটা বিশ্বকাপ ফুটবল,দুইটা হল ভ্যাকান্ট আর তিনটা টার্ম ।ক্যাফের সামনে আজ জুনিয়ররা শচীন হতে ব্যস্ত , ভিউ আর লাইনের কারবার, সিভিল ড্রয়িং এ পাওয়া 'বি মাইনাসের' সাথেই শেষ । তবুও তোমার কারণেই বিশটা বসন্ত পার করে, আজ আবশ্য আমি বলতে পারি কেউ কথা রেখেছে । তারপরও , এই কথা রাখার যাত্রাপথের কথা ভাব্লে কেমন জানি এক রকমের বিষণ্নতা, এক ধরনের অবিশ্বাস, এক ধরণের জড়তা কাজ করে ।

বয়স্কালে অনেক লাল-নীল ফুলের সৌন্দর্য্যেই বিমোহিত হয়েছি, কিন্তু ঘ্রাণ নেইনি কোনোটার । কারন, কিছুদিন পরই ঐ লাল-নীল রঙ আমাকে আর টানবে না, উল্টা লাল-নীলের অতি চাকচিক্য বাহুল্য ঠেকবে ।তাই হতো,কিছুদিন পরই,নতুন মোহ কে স্থান দিতে লাল-নীল ফুলের মোহ মনের পেছন দরজা দিয়ে পালাত । আমার পছন্দ শুভ্র-সাদা । তাইতো, বহু দিন যাচাই-বাছাই এর পর যখন বুঝলাম যে তুমি আসলেই আমার সেই শ্বেত-শুভ্র ফুল, তখন বন্ধুসমাজে অবিশ্বাস আর হাজারো কানাকানির জন্ম দিয়ে,তিলে তিলে গড়ে তোলা নিজের চারপাশের আবেগ-নিরোধক দেয়াল চূর্ণ করে তোমায় বলেছিলাম কখনো না বলা সেই তিনটি শব্দ । তুমিও ফেরাওনি আমায় ।

অথচ,আজ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি, তুমি আর সেই শ্বেত-শুভ্র নও, ধীরে ধীরে তোমার গায়েও চড়েছে লাল-নীলের বাহার । যে তুমি প্রেমের পূর্বশর্ত দিয়েছিলে যে- মুঠোফোনে অপ্রয়োজনীয় আলাপ নিষিদ্ধ,ডেটিং অবশ্য পরিহার্য, আজ সেই তোমার ভালবাসার পারদের সাথে তাল মিলিয়ে চড়তে গিয়ে আমি মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলি । কিন্তু মজার কথা হল, আজকাল আমারো কেন জানি লাল-নীল ভালো লাগতে শুরু করেছে । মনে হচ্ছে,লাল-নীল না হলে আর ফুল কিসের ! মুঠোফোনের শুন্য ব্যালেন্স আর মাসের ১৫ তারিখে ফাকা মানিব্যাগ সে কথাই জানান দেয় ।

মনে পড়ছে রুম্মেট এর কথা । বেচারা, অতি আবেগী, আর তাইতো লাল-নীল ফুলের কন্টকে রক্তাক্ত । কিন্তু , আমার খুব যৌক্তিক আর নিরাবেগ সিদ্ধান্তের সাদা ফুলেও যে আজ রঙ ধরেছে । তাহলে , এই প্রেম-ভালোবাসা,লাল-নীল-সাদা ফুলের পরিণতি সবই কি ভাগ্য, নিয়তি, সম্ভাব্যতার শর্তাধীন এক যৌক্তিক সিদ্ধান্তের ফলাফল ,নাকি বিধাতার এক আজব খেলা ?

এই ভাবতে ভাবতে, কাধে নরম স্পর্শ । ঘুরে দেখি "আমার ও " ।
খুব গাম্ভীর্যপূর্ণ ভঙ্গিমায় ওকে শুধাই, "আইন্সটাইন বলেছিল- " God does not play dice ", জানো? "
ওর ঠাট্টা মিশ্রিত হ্যা বোধক উত্তরে আবার প্রশ্ন করি " কেন করছিল জানো ? "
উত্তর দেবার ফুরসৎ না দিয়েই বলি - " Because, God does not fall in love "


ডিসক্লেইমার :: উপরে বর্ণিত সকল স্থান-কাল-পাত্র-ঘটনা সত্য । কল্পনার সাথে সাদৃশ্য পাওয়া গেলে তা কাকতাল মাত্র ।;) ইহার জন্য লেখক দায়ী নন ।:P
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১:২৫
২৬টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×