somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিকু - ২

২৮ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিকু নামে ছোট বাচ্চাদের জন্য একটা গল্প লিখেছিলাম। সেটার একটা সিকুয়েল লেখার চেষ্টা করলাম। লিখে এটাও বুঝতে পারলাম প্রথমটাই ভাল ছিল সিকুয়েল লেখা ঠিক হয়নি। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। লিখেই যখন ফেলেছি তাই পোস্ট দিয়েই দিলাম। আমি আবারও ক্ষমা প্রার্থী। কেউ প্রথম পর্বটা না পড়ে থাকলে সেটা আগে পড়ে নিয়েন। সেটাই বেশি ভাল ছিল।



ফারহিনের বিয়ে যেই ছেলের সাথে হল তার নাম অনীক। ফারহিনের নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে হলেও বিয়ের রাতে ফারহিন অনেক কাদল। বিয়েতে মেয়েদের কাঁদতে হয় এটাই নিয়ম। বিয়ের রাতে অনীক ফারহিনে কান্না সামলানোর চেষ্টা করল। রাত ৩ টার দিকে ফারহিনের কান্না থামল। পরেরদিন তাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথা। ফারহিন ঠিক করল তার ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে কিছু টাকা তুলবে। টাকা তুলতে গিয়ে বিপত্তি শুরু হল। চেক ফেরত দেওয়া হল। ফারহিনের সিগ্নেচার ঠিক নেই। ফারহিন অবাক হল। সিগ্নেচার সে ঠিক মতই দিয়েছে সিগ্নেচারের সাথে একটা কমা দেওয়া। এই কমা তার চেনা। পিকু ফিরে এসেছে। ফারহিন অনীককে বলল, অনীক পিকু ফিরে এসেছে। অনীক মন খারাপ করল, তোমার জীবনে আর কেউ আছে আমাকে তো কখনও বলোনি!! ফারহিন বলল, আরে দূর পিকু কোন ছেলে না। সে একটা পেন্সিল। মানে সে এমন একটা পেন্সিল যে আসলে কলমের মত লিখে আর কমা দিতে জানেনা। অনীক বলল, কি আবোল তাবোল বলছ। ফারহিন বলল, ঠিকই বলছি। অনীক অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল।

কক্সবাজারে পৌছে ফারহিন আর অনীক বিকালে সমুদ্রের পাড়ে কাটাল। হোটেলে ফিরে রুমে যাওয়ার আগে রিসিপশনিস্ট দৌড়ে এল। ম্যাডাম কোথাও কোন ভুল হয়েছে। কি ভুল? ম্যাডাম আমাদের খাতায় আপনি সিগ্নেচার করেননি। কোনরকমে একটি কমা দিয়ে চলে গেছেন। ফারহিন আবারো অবাক হয়ে দেখল আসলেই কোনরকমে একটা কমা দেওয়া। এছাড়া আর কিছুই নেই। ফারহিনের পিকুর কথা আজও কেউ বিশ্বাস করেনি। অনীকও করলনা। ফারহিন আর অনীক ঢাকায় ফেরার পরই অনীক ফারহিনের পিকু সংক্রান্ত তথ্য বের করার চেষ্টা করল। ফারহিনের বাবা , মা সবার সাথে কথা বলল। ফারহিনের বাবা মাও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। জামাই মানুষ এখন কি না কি মনে করছে। আর পিকু বলে কি আসলেই কিছু থাকা সম্ভব!! অনীক ফারহিনের ছোট বেলার বই খাতা পেন্সিল বক্স এগুলা দেখার চেষ্টা করল।

কলম জগত পেন্সিল জগত থেকে অনেক শক্তিশালী। কলম জগত আর পেন্সিলপুরের মধ্যে বিরোধের অনেক কারনও আছে। আমরা মানুষেরা তাদের পেন্সিলবক্সে রেখেই চলে যাই তাই আমরা জানিনা। কিন্তু ফারহিন জানে। পিকুর মাধ্যমেই সে প্রথম এটা জানতে পারে। কলমের ক্লিপ আছে। তারা টেকসই বেশি কিন্তু তাদের রাখা হয় পেন্সিলবক্সে। তাদের হীনমন্যতাবোধ এখান থেকেই আসে। তাদের ইগো এখান থেকেই জাগ্রত হয়। এটা অনেক আদি দ্বৈরথ। মানুষ লেখালেখ শেখার শুরুতে পেন্সিল দিয়ে শিখে। কিন্তু পরবর্তিতে কলমে চলে যায়। আমরা যখন রাতে একই টেবিলে কলম আর পেন্সিল রেখে ঘুমিয়ে যাই তারা লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। পেন্সিলের শত্রু খালি কলম না। পেন্সিলে অন্যতম শত্রু হল শার্পনার। কিন্তু পেন্সিলদের শার্পনার দরকারও আছে। শার্পনার তাদের আয়তনে ছোট করে দিলেও ধারাল করে। কলম আর পেন্সিলের এই বিরোধে সব থেকে বড় ফ্যাসাদে আসলে পিকু। পিকু হল একটি কলম। কলম জগতে যখন তার জন্ম হয় তখন কলম জগত আর পেন্সিলপুরের লড়াই শুরু হয়। ছোট পিকুকে একা পড়ে থাকে। মমতাময়ী এক পেন্সিল যে কিনা পিকুর মা সে তাকে পেন্সিলপুরে নিয়ে আসে এবং আদর যত্নে বড় করে। কিন্তু পিকু বড় হওয়ার পরেই সবাই বুঝে যায় সে পেন্সিল নয়। ইরেজার দিয়ে তার লেখা মোছা যায়না। যে কমা লিখতে পারেনা। ফারহিন তাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে কমা লিখতে হয়। তবে অভিমানী পিকু, যার নাতো কলম জগতে যাওয়ার অবস্থা আছে, না পেন্সিল জগতে ফিরার, আর নাতো সে ফারহিনের কাছে যাবে, সে হঠাৎ এতদিন পর কোথেকে এল সেটাই ফারহিনকে ভাবিয়ে তুলছে। তবে ফাঅরহিন এখনো জানেনা পিকু কোথায়।

সেদিন রাতে অনীক আর ফারহিন কথা বলছিল। ফারহিন বলল, শোন, পিকু ব্যাপারটা আমি যখন বাচ্চা ছিলাম তখনকার। কেউ আমার কথা বিশ্বাস না করলেও আমি জানি একজন পিকু আছে। যে আমার উপর অভিমান করে আমার সামনে কখনো আসেনা কিন্তু সে নানা সময়ে আমাকে বাঁচিয়েছে। স্কুলের পরীক্ষায় আমি একবার রোলনম্বর না লিখে চলে এসেছিলাম। তাতেও কোন সমস্যা হয়নি। পিকু গিয়ে লিখে দিয়ে এসেছিল। অনীক বলল, কেউ বিশ্বাস না করলেও আমি করলাম। কারন আমি জানি তুমি মিথ্যা কথা বলনা। ফারহিন আমার অফিসে সমস্যা হয়েছে। একজন আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ভুল জায়গায় আমাকে দিয়ে সিগ্নেচার করিয়েছে। আমি দুশ্চিন্তায় আছি।

অনীক অফিসে চুপচাপ বসে আছে। একটু পরেই তার বসের রুমে যেতে হবে। চাকুরী মনে হয় আর থাকছেনা। অনীক মন খারাপ করে বসে আছে। ঠিক তখনি তার সামনের পেন্সিল কথা বলে উঠল। কেমন আছিস অনীক? অনীক অদ্ভুত চোখে তালাক। তুমি কি পিকু? হা। তোমাকে ফারহিন খুঁজছে সেতা কি জান? জানি। আমাকে খালি ফারহিন না। কলম জগতের সকল কলম এবং পেন্সিলপুরের সকল পেন্সিল খুঁজে বেড়াচ্ছে। অনীক অবাক হয়ে বলল, কেন কেন? আমি আসলে একটা কলম কিন্তু বড় হয়েছি পেন্সিলপুরে। কলমরা আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে মেরে ফেলতে চায়। সে কি! আর পেন্সিলপুর। আমার নানা সেখানকার রাজা। সেখানে আমাকে নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ চায় আমি তাদের হয়ে থাকি কেউ চায় আমাকে কলমদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। আজ রাতে বিশাল লড়াই আছে। আমি গেলাম। আমার ভাগ্য আজ নিয়ন্ত্রন হবে। তবে আমি পালাতে পারিনি। ফারহিনের কোন বিপদে আমি পালাতে পারিনা। অনীক বলল, ফারহিনের কি বিপদ। তোর বিপদ মানেই ফারহিনের বিপদ। আমি গেলাম। আজ রাতে একটা ফয়সালা হয়ে যাবে।

অনীক বসের রুমে ঢুকল। অনীকের বস বলল, একটা ফ্রড ফ্রজারীর লেনদেনে আপনার সিগ্নেচার আছে। কিছু মইনে করবেননা ইনভেস্টিগেশনে আপনার নাম দেওয়া হল। পুলিশ আসল। কাগজপত্র দেখল। কিন্তু অনীকের কোন সিগ্নেচার পেলনা। অনীকের নামের উপর অনীক লেখা নেই। সেখানে খালি লেখা, স্ক্রু-ড্রাইভার। অনীক এর মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলনা। খালি বুঝল সে কোন ভাবে বেঁচে গেছে। রাতে অনীক ফারহিনকে বলল কিভাবে সে বেঁচে গিয়েছে। ফারহিনও বেশ অবাক হল। তারপর অনীক বলল, পিকু আমার নামের উপর স্ক্রু-ড্রাইভার লিখে গেছে কেন কে জানে! খুবই আজব। ফারহিন কিন্তু ঠিকি বুঝে গেল ব্যাপারটা কি। সে বলল, অনীক, পিকু আমাদের বাঁচিয়েছে। এখন আমাদের পালা। বাসায় যে কয়টা স্ক্রু-ড্রাইভার আছে খুঁজে রাখ।

গভীর রাতে মানুষজন যখন সবাই ঘুমিয়ে গেল কলম আর পেন্সিলদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হল। ঝগড়া তো আর না যুদ্ধ। পিকু নামে একজন কলম হয়েও পেন্সিলদের পক্ষে যুদ্ধ করল। মায়ের পক্ষের যুদ্ধ। সমস্যা শুরু হল যখন শার্পনারগুলা কলমদের পক্ষ নিয়ে পেন্সিল নিধনকরা শুরু করল। পেন্সিলপুরের পিকুর উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগল। ফারহিনদের রেখে যাওয়া স্ক্রু-ড্রাইভার গুলা সব শার্পনারের স্ক্রু খুলা শুরু করল। সেদিন থেকে পিকু আর পেন্সিল জগতে অনাকাংখিত নয়। পিকু তাদের জাতীয় বীর। পেন্সিল জগতের একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরষ্কার সব এখন পিকুর নামে।

পরের দিনের ঘটনা। ঢাকা শহরের কোন দোকানে আজ শার্পনার কিনতে পাওয়া যাচ্ছেনা। দোকানে যারা যারা কিনতে গেল সবাইকে বলা হল, ভাই কোন কারনে শার্পনারগুলার স্ক্রু-খোলা। কি হল কিছুই বুঝলাম না। বোঝার কথাও না। ফারহিন আর অনীক ছাড়া পেন্সিলপুরের পিকুর কাহিনি কেই বা জানে।

অনীক আর ফারহিনের বিয়ের পর প্রথম ভ্যালেন্টাইনে খুব অবাক করা কান্ড ঘটল। ভ্যালেন্টাইন্স কার্ডে লেখা অনীক। অনীকের সিগ্নেচার। তার নিচে ভালবাসা কু কু কু। তার নিচে লেখা স্ক্রু-ড্রাইভার। তার নিচে বিশাল একটা কমা। তবে এখনও পিকুর অভিমান কমেনি। পিকুর সাথে ফারহিনের এখনও দেখা হয়নি। পিকু একটি অভিমানী পেন্সিল।
১৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×