রাজনীতি। রাজার নীতি।
আমাদের দেশে রাজনীতি নিয়া কথা বলার বিপদ আছে। আসল কথা পাড়ার আগেই ‘বিষয়’ নিজে নিজেই রঙ ধারণ করে। আমরা ধরেই নেই, রাজনীতির মানে হলো আওয়ামী-বিএনপি-কমিউনিস্ট-জামাত প্রভৃতি রাজনীতিক দলের নাম। রাজনীতি বলতে এই নামগুলোরই কর্মকা- বোঝায়। রাজনীতি বিষযে কেউ কথা কইলেইÑ প্রথমে চেষ্টা চালানো হয়Ñ লোকটা কোন্্ পার্টির ধান্দা নিয়ে আসছে। নানা কৃৎকর্ম, মনের দুয়ারে খেলা করে। খেলা করা ভালো কিন্তু আন্দাজের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক না। একটু ভেতরে প্রবেশের জন্য একটু সময় দেয়া দরকার। তাহলে সবারই আরাম।
আমার রাজনীতি আসলে কি বস্তু? কি চিজ? রাজনীতির দরকারটা কি? খুবই চাছাছিলা প্রশ্ন। জবাবও পরিষ্কারÑ টিকে থাকার প্রশ্ন। টিকে থাকার জন্য রাজনীতি করি। মানবের ইতিহাসে টিকে থাকার প্রয়াসে যে সকল পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে তাই মানবের রাজনীতি। মানব এখন আর সেই মানব নাই। নানা-গোষ্ঠীমানব হয়েছে। নানা ভাগে বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু ভক্তি কমে গেছে। এখন নানা গোষ্ঠীর রাজনীতির জমানা এসেছে। তবে মানবের রাজনীতি ফুরায়ে যায় নাই্। তার ফুরাবার কোনো কারণও নাই।
টিকে থাকার জন্য আমি কোনো না কোনো পদ্ধতি নির্বাচন করি। নির্বাচন করতে বাধ্য। এটাই আমার রাজনীতিক পরিস্থিতি। আমার পরিস্থিতিতে যদি অন্য আরো লোক সমাবেত হয়Ñ তাহলে ওইটা ওই নির্দিস্ট মুষ্টিমেয় লোকের রাজনীতি। এখানে সঙ্কট ও পদ্ধতি দু’টোই পরিস্কার পানির মতো বুঝে নিতে হয়। কিন্তু পানি তো পরিষ্কার থাকে না। বেশিভাগ সময় পানি ঘোলা করে রাখে। আর তাতেই যতো ঝুক্কি-ঝামেলা। এর ফাঁক দিয়া আসল জিনিস চুরি হয়ে যায়। তখন যা কিছু বলা হয়Ñ তা পাখিদের কথা নিজের অনুবাদের দশা উপস্থিত হয়। নতুন কথা, নতুন রাস্তা নির্মাণের সম্ভাবনা ক্ষীণ হতে থাকে।
রাজনীতিতে, রাজনীতিক-দর্শন বলতে কিছু একটা আছে। যা আমাদের রাজনীতিতে একেবারে অনুপস্থিত। টিকে থাকার পদ্ধতি যদি রাজনীতি হয় তাহলে সেই পদ্ধতির ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। তাই সেই রাজনীতিক-পদ্ধতির উকালতি না করে সঠিকতার দিকে অগ্রসর হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সঠিকতাকে ধারণ করতে চাওয়াই সঠিকতার কাছাকাছি পৌঁছতে পারা।
আমার দেশের রাজনীতিক নেতারাÑ রাজনীতির উকিল হয়েছেন। তাদের পক্ষে রাজনীতির প্রপাগা-া করা ছাড়াÑ জনগণের মৌলিক সেবাদান সম্ভব না। উকিল কোনো দিনও তার পেশার বাইরে গিয়ে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু তা দিয়ে তো আর অন্য পেশাজীবীদের জীবন বাঁচে না। ক্লায়েন্টের পক্ষে তার কথা কইতেই হইবো। সে হোক-না বড় অপরাধী। উকিলের কাজ হলো তাকে নির্দোষ প্রমাণ করা। আমাদের নেতৃবৃন্দ নিজেদের দলের উকিল হয়েছেন। নিজেরও উকালতি করেন। নিজেরে নির্দোষ প্রমাণ করায় ব্যস্ত। নিজের দল সর্বকিছুর উর্ধ্বে। বাকীরা চোর।
এই দলায় একটি জনগোষ্ঠীর অবস্থাও সঙ্গীন হয়ে ওঠে। নেতাদের সিদ্ধান্তের কুফল সরাসরি মানুষের উপর গিয়ে পরে। তারা নাজেহাল সময় যাপন করতে থাকে। তবু কিছু লোক তাদের স্তুতি করে। যাদের নিয়ে একটি দল গঠিত হয়। এমনি করেই অনেক দল গঠিত হতে পারে। কিন্তু তবু সব দলের বাইরে কিছু লোক জটলা পাকিয়ে সময় মাথায় নিয়ে হাঁটতে থাকে। তারা মূল জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রের মূল। এই ‘দল’ আর ‘জটলার’ দূরত্ব থাকে হাজার মাইল। এই পথে জীবনানন্দ হাঁটেন নাই।
‘জটলা’ হাজার মাইল দূরে থেকেও এইসব দলকে দেখিতে পারে। বলতে দুঃখ লাগে, বর্তমান দলের কোনোটারই সেই ‘জটলা’ পর্যন্ত পৌঁছাবার ক্ষমতা নাই। এই ‘জটলার’ ‘ক্ষমতা’ বা এর ‘রূপ’ ধরা দেয় না রাজনীতিক দলের নেতাদের চোখে। যদিও কখনোই ‘জটলা’র রাজনীতি-হীন না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




