somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মান্ধ: মুসলিম উম্মাহর পদস্খলনের একটি অন্যতম কারণ

২০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ দলিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত। এর কারণ হচ্ছে উপকারী জ্ঞান এবং তার সঠিক প্রয়োগের অভাব। মুসলিম উম্মাহর রাহবারের দায়িত্বে যারা বসে আছে তারা অধিকাংশই গোঁয়ার, অনমনীয় ও ধর্মান্ধ ব্যক্তি। আর যখন এই ধরনের লোক ক্ষমতার মসনদে বসে তখন কোনো জাতির তাদের কাছ থেকে উপকারী কিছু আশা করা বোকামী। আমাদের অসতর্কতার ফলে এধরনের লোক ক্ষমতার মসনদে জেঁকে বসেছে। এর পরিপূর্ণরূপে আমরাই দায়ী। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, "আমি তাদের উপর জুলুম করিনি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছে...।" [১]

যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ ভুল থেকে ফিরে সত্যের পথে আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ নিজের উপর নিজে জুলুম করতে থাকে।[২]
আমরা যেভাবেই চলি না কেন জুলুমের কারণ টা নিজেদের মধ্যেই আছে। আমাদের অসচেতনতার জন্যও বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছি। আর এই নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণ আমরা নিজেরাই। আমাদের অসচেতনতার জন্য ধর্মান্ধ ও দ্বীনের প্রকৃত জ্ঞানের ব্যাপারে অজ্ঞ স্বার্থ অন্বেষণের মানসে উম্মাহর রাহবারের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। তারা জনসাধারণের মধ্যে ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

ইসলামকে সঠিকভাবে অনুধাবন করার পূর্বেই তারা বিভিন্ন স্ববিরোধী মন্তব্য ও ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে। চেতনাধারী ও মুক্তচিন্তার মুসলিমদের প্রশ্নের উত্তরে যখন তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যায় তখন তারা এদের কাফির ফতোয়া দিয়ে নিজ রাস্তায় কেটে পড়ে। আফসোস! তারা মূলত এক আল্লাহর উপাসনা নয়; বরং প্রবৃত্তির উপাসনা করে।

বাংলাদেশে প্রচলিত তথাকথিত বিভিন্ন বক্তা, অলি-আউলিয়া, গাউস-কুতুব, পীর-মাসায়েখগণ বিভিন্ন ধরনের অলীক, বানোয়াট ও কল্পিত ঘটনাবলী বর্ণনা করে জনসাধারণকে প্রকৃত ইসলামের উপর বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা ব্যতিত এক কল্পনা ও অবাস্তব ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত করছে। বর্তমানে একশ্রেণীর বক্তাগণ মানুষের মাঝে এমন সব কেচ্ছা-কাহিনী বলে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে যা প্রকৃত ইসলাম সাংঘর্ষিক। তথাকথিত ইসলামী বক্তাগণ ধর্মীয় জ্ঞানহীন জনসমাগমের মাঝে যত অলৌকিক ঘটনা অর্থাৎ কল্পিত ঘটনা বর্ণনা করে এগুলোর কোনো ভিত্তিই ইসলামে নেই। এর ফলে জনগণের বিশ্বাস প্রকৃত ইসলাম থেকে সরে এক অবাস্তব কল্পিত অবস্থার উপর তাদের প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের এই প্রোপাগাণ্ডার ফলে ইসলামের অভূতপূর্ব ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

ইসলাম একটি বাস্তব চিন্তার ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম। কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা বিভিন্ন বানোয়াট ও কল্পিত কাহিনী এতে যোগ করার চেষ্টা করেছে। তাই এমন কিছু কাহিনী লোকমুখে শোনা যায়। তবে কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত ঘটনাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ সমস্ত ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকুক কিংবা না থাকুক। কেননা, বিজ্ঞান দিয়ে ইসলাম চলে না৷ তাফসির, হাদিস ও ফতোয়াই কেবলমাত্র ইসলামের জ্ঞান নয়। মুসলিম জাতির দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য যে সব জিনিসের প্রয়োজন বোধ করে সে সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জনই হলো ইসলামি জ্ঞান। বর্তমান সময়ে যদি ইসলাম ধ্বংস হয় তবে এর কারণ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষকের অভাব। অধুনা আমাদের দেশে কিছু আলেম-ওলামা বলে বেড়ান বিজ্ঞান, আধুনিক বিষয়ে গবেষণা ও নতুন কিছু আবিষ্কার— এগুলো পশ্চিমাদের কাজ। তারা নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে এবং আমরা তা ব্যবহার করব। তারা হচ্ছে সেবক আর আমরা হলাম সেবিত। এ সমস্ত আলেমগণ মূলত জ্ঞান স্বল্পতার দরুন এমন প্রলাপ বকছেন। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারেন যে, সুস্থ ও শক্তিশালী ব্যক্তির সেবার প্রয়োজন হয় না; বরং অসুস্থ ব্যক্তিরই সেবার প্রয়োজন। ইউরোপীয়রা তো চায় মুসলিমরা কোনোকিছু আবিষ্কার না করুক, তারা আবিষ্কার করবে আর মুসলিমরা তা ব্যবহার করবে। ফলে তারা মুসলিমদের সম্পদ হাতিয়ে নিবে আর মুসলিমরা চিরকাল দুর্বল থাকবে।

আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু মুসা মুহাম্মাদ বলেন, "যারা আবিষ্কার করে না, অন্যের আবিষ্কৃত বিষয় ধার করে চলে; যারা নিজের মেধা ও জ্ঞানকে কাজে লাগায় না, অন্যের জ্ঞানের উপর ভর করে চলে ইসলাম ধর্মে এ ধরনের জাতির প্রয়োজন নেই।"

ইসলামের আরেক অভূতপূর্ব ক্ষতি সাধিত হচ্ছে অনমনীয়-গোঁয়াড় মুসলিম দ্বারা। অনমনীয়-গোঁয়াড় মুসলিম জানে না যে সে তার একগুঁয়েমী কাজের মাধ্যমে তার মিল্লাত কে নিষ্ক্রিয় বানাচ্ছে এবং অন্যান্য জাতির তুলনায় মুসলিম জাতিকে পতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পার্থিব জ্ঞান তথা প্রকৃতি বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করে তারা নিজের জাতির জন্য মুসিবত টেনে আনছে -এ বিষয়ে তারা সতর্কও হচ্ছে না এবং ভ্রুক্ষেপও করছে না। ফলে তারা দরিদ্রতার মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে। যদি তারা নিজেদের জীবনযাপনের দিকে তাকায় তাহলে বলে, আল্লাহ তাকদীরে এমনই রেখেছিলেন। এ জগতের অলস লোকদের হল এ কথা, তারা সবকিছু তাকদীর বলে চালিয়ে দিয়ে ক্ষান্তি লাভ করে। এ স্বভাব অধিকাংশ মুসলিমদের মাঝে অলসতা এনে দিয়েছে। তাদের মধ্যে একদল বের হয়েছে যাদেরকে দরবেশ বলে উপাধি দেওয়া হয়। তাদের কাজ-কর্ম কিছু নেই। তারা ইসলামী সমাজে প্রকৃতপক্ষে পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোক। এ স্বভাবই ফিরিঙ্গীদেরকে মুসলিম সম্পর্কে বলতে বাধ্য করছে যে, ইসলাম অদৃষ্টবাদী। এটা কাজ করার নির্দেশ দেয় না। সৃষ্টিজীব কাজ করুক বা না করুক, যেটা হবার সেটা হবেই।[৩]



তথ্যপুঞ্জি:
[১] সুরা হুদ, আয়াত:১০১।

[২] তাফসীরে আল মানার।

[৩] মুসলিমদের পতন ও বিধর্মীদের উত্থানের নেপথ্য কারণ। লেখক: আল-আমির শাকিব আরসালান
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×