সাম্পানওয়ালার পুরো নাম মফিজ আখন্দ, অবশ্য লোকে চেনে মাকুন্দা মফিজ নামে, চিবুকের আনাচে কানাচে যে কয়টা লোম দেখা যায় তা আঙ্গুলে গোনা যাবে। প্রতিদিন সকালে 5 টাকার আয়না আর বলাকা ব্লেডে ক্ষৈরি করে গম্ভ ীর মুখে, চর্চায় কি না হয়, মানুষ বড় বড় বিলডিং বানাচ্ছে আর মুখের সাইড ওয়ালে ক'গাছা দাড়ি চাষ করা সম্ভব হবে না? অধ্যবসায়ের ফল মিঠা, তাই যখন চিবুকের ধারে কালচে রেখা দেখা গেলো, মফিজের আনন্দ বাধ মানে না।
মফিজ কবিতা লিখে, কবিসুলভ ভাবভঙ্গিও নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো মাঝে, তখন বাংলাদেশে কবিফ্যাশন বলতে এলেমেলো বাবড়ি চুল আর ঝোলা গোঁফ দাড়ি, মাথার বাবড়ি চুল রাখার চেষ্টায় যাও কিছুটা অগ্রগতি হয়েছিলো কিন্তু যা নেই তা কিভাবে আনবে, এই দহনে তার কবিতায় হতাশর সুরের পাল্লা ভারী, অনাগতা সব ভক্ত সুন্দরীদের প্রতি অব্যাক্তপ্রেমগাঁথা ভীষন ভাবে আছড়ে পড়ে তার কবিতার সৈকতে। অবগুণ্ঠনহীন পাল মেলে দিয়ে ভাবের সাম্পান চলে, জোয়ার ভাটার টান লাগে, তবে তার সেই ঝোলা গোঁফ হবে না এই সত্য মেনে নিয়েই তার এই নিত্য ক্ষৌর কর্মের আয়োজন।
অবশেষে যখন চিবুকের 2 প্রান্তে বেশ কালচে রেখা আমদানি হলো, তখন কবি সমাজে নিজের পর্যায়ভুক্ত করার সেই কৈশোরীয় ইচ্ছাটা আবার বেয়ারা ঘোড়ার মতো পথিমধ্যে মাথা চাড়া দিলো। এবার তার সেই ঝোলার ভেতরে, কয়েকটা প্রকাশিত কবিতার অনুলিপি, নোট প্যাড, কাগজ কলম, লাইটার সমেত স্টার ফিলটার( অনেক ইচ্ছা ছিলো ব্রান্ড বদলানোর কিন্তু রেস্তের সাথে সংগতি রেখে জামার পকেট বানাতে হয়, ) এবং শুকনো কিছু ফুলের পাঁপড়ি।
বাংলাদেশের মানুষ বেশ চমৎকার, তারা সব কবির জন্যই একটা না একটা বিশেষন জোগাড় করেই ফেলে, যুগবদলের কবি, ছান্দসিক কবি, ভোরের কবি, গোধুলীর কবি, মধ্যরাতের কবি, এবং বাংলা অমৃত ভান্ডার তব-তাই কখনই এখানে বিশেষনের কমতি নেই, বাংলা মায়ের ঝোলা থেকে একটা না একটা উপযোগী বিশেষন ঠিকই খুঁজে পাওয়া যায়, গাড়ীর আগে যেমন ঘোড়া লাগানোর নিয়ম তেমনই কবির আগে কবির বিশেষন চলে রাস্তা দিয়ে।
ঠিক তেমনই একটা বিশেষন জুটে যায় মফিজ আখন্দের, তার বেশীর ভাগ হতাশামিশ্রিত কবিতার শেষ চরনে অবধারইত চলে আসা হা ইশ্বর শব্দযুগল তাকে ধরমী কবি অভিধায় ভূষিত করে তাকে।
সাকি এবং সুরা থাকলে হয়তো কপালে মরমী কবি পদবিটা জুটলেও জুটতে পারতো কিন্তু তার জীবন একেবারে মেয়ে বিবর্জিত না হলেও তার জীবনের সাথে নারীর সম্পর্ক উপহাস মিশ্রিত। কলেজে পড়ার সময় তার পছন্দের মেয়ে তাকে বলেছিলো বাবু তুমি কোন স্কুলে পড়ো, এই থেকে সূচনা এবং তার অতিকর্ষিত মুখের সাইড ওয়ালে জন্মাতে না পারা দাড়ি এবং তার টানটান চামড়া দেখে এখনও তাকে স্কুলের ছাত্র বলে চালিয়ে দেওয়া সম্ভব, যদিও এখন একটু বয়েসের ছাপ পড়েছে চেহারায় তার পরও অপুষ্ঠ স্কুল বালকের ভূমিকায় তাকে মানিয়ে নেওয়া যাবে।
সব দুঃখের দিনের অবসান হয়, এমন কি মাকুন্দা মফিজ সাম্পানওয়ালা শিরোনামটা চেপে বসলেও, এইসামপ্রতিক অগ্রগতিতে সে কঠোর ফাঁস সামান্য আলগা হয় এবং কবি সেই সামান্য বাতাসে প্রাণপণে শ্বাস নেন। এবার অন্তত তাকে কেউ স্কুল বালক বলে ভুল করবে না, নারীর অগমনে ইশ্বরের প্রাদুর্ভাব দুর হবে এবং তার কবিতা নারীময় হয়ে উঠবে এমন একটা আকাংক্ষা কাজ করে ভেতরে ভেতরে।
মাঝে মাঝে ছেঁড়া পালের মতো কবিতার ঝাপট লাগে তার মননে, বিশেষত গুরুতর সময়গুলোতে একেকটা অদ্ভুত পংক্তি ঝাপটা মারে, বেসামাল হয়ে উঠে তিনি হাল ছেড়ে দেবেন ভাবলেও কবিতা লিখে আজকাল পেট চালানোর উপায় নেই, কবিকেও কেরানিগিরি করতে হয়, তিনি অবশ্য করনিক কবি নন তিনি পরিশ্রমি মানুষের প্রতিভূ, সাম্পানওয়ালা কবি।
তার সদ্যোজাত কবিতা
এখানে বাতাস আসে জোয়ারে নদী ভাসে অফুরান
জীমুতি জগতে এলে ঢেকে ফেলে জল, সূর্যস্লানে কাটে বেলা
নরদেহ নারী খুঁজে, খুঁজে পায়, প্রেম অবহেলা
জলধিশ্বর বিপন্ন চরাচর,কলকল ধুমপান।
সবুজের পত্রমিতা নামক হাতে লেখা লিটল ম্যাগে এই কবিতা ছাপা হয় এবং তা অবশ্যই ঝোলার অপরিহার্য অংশ হিসেবে সেখানের অধিগ্রহন করে।
বাতাসি বেগমের মনটা উদাস, দুপুরের রোদ আলুথালু করে ফেলে তাকে, বেশবাস ঠিক থাকে না, আর যা হিউমিডিটি এদিকে, তাতে সব সামলে কাপড় পড়াই শক্ত। ব্লাউজের 2টা বোতাম খুলে তার হাওয়া খাওয়া, ধাওয়া খাওয়া , লুকোচুড়ি খুনসুটি চলে দিনমান।এমন না যে সেই বোতাম দুটো মিসিং, এটাই ফ্যাশন, হিন্দি ছবির নায়িকারা শুধু ব্লাউজ পড়ে কোমড় নাচালেই সব কাত হয়ে যায় আর সে শাড়ীর নীচে 2টা বোতাম খোলা রাখলেই সব মানুষের সমস্যা। যৌবন দেখিয়ে বেড়ায়-আরও কথা অকথা কুকথা চালাচালি হয় এই গ্রামে, অবশ্য কুচুটামি ছাড়া কোনো বিনোদনও নেই এদের, আর এরা বুঝবে কি, এদের চিন্তা ভাবনাতো সেই নাভীর এক বিঘত নীচেই ঘুরপাক খায়, ফ্যাশনের কিছু বোঝার ক্ষমতা এদের নেই। চুনিদার ওড়না আর কানে মাটির গহনা পড়লেই সবাই ফ্যাশন আইকন হয়ে যায় না, আরও কিছু লাগে, যেমন তার আছে, আসলে সবাই ইর্ষা করে, এমন ভারী পাছা আর এই তল্লাটে কার আছে, এমন মেদহীন চিকন কোমড় আর সতেজ গড়ন, সুসম্পুর্ন একটু ফোলা ঠোঁট আর সামান্য ঝুকে থাকা চোখের পাপড়ি, পরিপূর্ন দৃষ্টিতে তাকালে পথচলতি সাইকেল উলটে যায়।
অবশ্য হাতের চামড়া একটু খসখসে, তা বোঝা যায় না, আর পুরুষের চোখ কখনই এসব দিকে পড়ে না, ওদের চোখ মাঝামাঝি এসে থমকে থাকে, ওখানেই ঘোরাঘুরি করে, পিছলে নীচে নামে এর পর উপরে উঠে, এই দৃষ্টিচলাচলের পথে, আবরনভেদী দৃষ্টিতে আভরন চোখে পড়ে না তেমন করে।
হাতের চামড়ায় সমস্যা হয় পেশাগত কারনে ,সারাদিক খরপানি নাড়তে হয়, আর এমন পানি ঘাটাঘাটি করলে কি আর স্কিন ঠিক থাকে, এতো হিন্দি ছবি না এক বিঘত পানিতে ঝাপাত ঝাপাত কাপড় আছড়ে সখীগন নিয়ে নাচতে গাইতে লাগলো আর হিরো মাফলার গলায় জুটে গেলো সাথে। বাস্তব অনেক কঠিন, তাই এই উঠতি যৌবনেও কেউ মনের তত্ত্বতালাশ করলো না,
সাম্পান ভিড়লো কোথায় মফিজ আকন্দ বুঝতে পারে না, সারারাত মাতালের মতো এলোমেলো চলতে চলতে কোথায় এসে থামলো সাম্পান, সময়টা প্রতু্যষকাল, চমৎকার ঝকঝকে রোদ উঠেছে, আর সামনে টানা দড়িতে ওড়না ঝুলে আছে,
হাওয়ায় উড়ছে ওড়না
বলছে ওটা আমার ওর না।
কবিতাটা সাথে সাথেই পয়দা হয়, অবশ্য তার ভেতরে দুরহ সব শব্দ ঘাই মারছে, ওড়নার বদলে আঙরাখা দিলে কেমন হয়, পরে মাখা মাখা দেওয়া যাবে কিন্তু এটাতো ফলার না যে দই সহযোগে মাখামাখি চটকাচটকি হবে প্রচুর পরিমানে কদলি সহযোগে দই নিয়ে চটকাচটকি- অবশ্য মগ রাজাদের হুঙ্কার শুনলে না কি পোয়াতি মায়ের দুধ জমে দই হয়ে যেতো, সেটা অন্য কথা, আপাতত এই সুন্দর সকালে দখলদার বাহীনির কথা ভাবনে না সে, শুধু কবিতার কথা ভাববে, ভাববে এই আঙরাখার কথা, কাকে আড়াল করে এই চাদর, যুগল চাঁদে গ্রহন আনে
আহা আহা আজকের এই ঝড়ের শেষে তোমার অভিসারের কবিতা আসছে চমৎকার।
বাতাসি বেগম আচমকা থমকে যায়, গত রাতে শোঁ শোঁ বাতস আর বাজে বুক কেপেছে ভয়ে কিন্তু আস্ত সাম্পান চোখের সামনে- এ কোন অচিন দেশের রাজপুত্র নোংর ফেললো এই তটে, সয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়ায় আঁচলে হাত চলে যায়, এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার কিছুনেই, ভালো খেলে ভালো পড়লে শরীরে পুিিষ্টর অভাব না হলে এমন সুঠাম দেহ সবারই হতো, তা এমন গিলে খাওয়ার কিছু তো নেই।
আর পরিশ্রমি শরীর, নিয়মিত কাজের চাপে পেলবতা নষ্ট না হলেও বেশ চমৎকার উজ্জ্বল শ্যামা বর্নে আলাদা চটক আছে, যেই দেখে চোখ ফেরাতে পারে না। এ জন্যই না ঘাটে এমন বদনাম আর কুচুটি।
কি করতো ছবির নায়িকা এই পরিস্থিতিতে ভেবে পাচ্ছে না বাতাসী বেগম, আর হাওয়ায় নেই এমন জোড়ের যে আঁচল উড়িয়ে নেবে, আর সেও যাহ যাহ দুষ্টু হাওয়া বলে গেয়ে উঠবে গান, এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না মোটেও।
এ জায়গার নাম কি? প্রশ্নটা প্রথম বার শুনেও বুঝতে পারে নাই, এমন আত্মমগ্ন ছিলো কল্পনায় বাতাসী বেগম, একটু উঁচু স্বরে প্রশ্নটা আবার আসতে কিসমতপূর বলে একটা রহস্য হাসি ফুঁটিয়ে তুললো ঠোঁটের কোণে।
( জনগন চলবে????)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



