একটা সময় ছিল যখন প্রাচীন গ্রীস এবং রোমের কোনো বাড়িতে যদি কোনো পুরুষ অতিথি আসত তাহলে তাদের সামনে যেয়ে নারীদের কথা বলা কিংবা তাদের সঙ্গে ওঠা বসা একপ্রকার নিষিদ্ধই ছিলো। এর কারন হল তারা আশঙ্কা করতেন যে নারীদের উপস্থিতি না আবার পুরুষদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
এককালে ডেনমার্কে যদি কোনো নারী অবাধ্য হয়ে কাউকে গালাগালি করতেন বা কোনোভাবে রাগ প্রকাশ করতেন তাহলে তার খুবই করুণ অবস্থা হত। তাকে বদমেজাজির ভায়োলিন নামক একটি যন্ত্রের সাহায্যে শাস্তি দেওয়া হতো। কাঠের তৈরি এ জিনিসটি দেখতে ছিলো অনেকটা ভায়োলিনের মতো। এখানে সেই নারীর দইহাত আর মুখ আটকে দেয়া হতো। তারপর তাকে পুরো নগরী ঘুরিয়ে বেড়ানো হতো। প্রকাশ্যে রাগ দেখানোয় রাস্তার জনগণ তাকে তখন দুয়ো দিতে থাকতো।
ইংরেজ নারীদের আরো খারাপ অবস্থা করা হত। তারা প্রকাশ্যে বদমেজাজ দেখালে একধরনের ধাতব মুখোশ পরানো হত যেটার মুখের দিকে কাটার মতো অংশ এবং একটি ঘণ্টা লাগানো থাকত। ঘণ্টার শব্দ শুনে আশেপাশের লোকজন জড়ো হত আর সেই নারীকে নিয়ে সবাই মজা করত।
সতীদাহ প্রথা হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে বা আত্মহুতি দেবার ঐতিহাসিক প্রথা ।এটা এরকম ছিল,
হিন্দুদের মধ্যে যদি কারো স্বামী মারা যেত তাহলে সেই মৃত স্বামীর সাথে তার স্ত্রীকেও জীবিত থাকা সত্বেও পুরে মেরে ফেলা হত ।
যা রাজা রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বন্ধ হয়।গুপ্ত সাম্রাজ্যের (খ্রিষ্টাব্দ ৪০০) পূর্ব হতেই এই প্রথার প্রচলন সম্পর্কে ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়। গ্রিক দিগ্বিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডারের সাথে ভারতে এসেছিলেন ক্যাসান্ড্রিয়ার ঐতিহাসিক এরিস্টোবুলুস। তিনি টাক্সিলা (তক্ষশীলা) শহরে সতীদাহ প্রথার ঘটনা তার লেখনিতে সংরক্ষণ করেছিলেন। গ্রিক জেনারেল ইউমেনেস এর এক ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যুতে তার দুই স্ত্রীই স্বত:প্রণোদিত হয়ে সহমরণে যায়; এ ঘটনা ঘটে খৃষ্ট পূর্বাব্দ ৩১৬ সালে। যদিও ঘটনার সত্বতা নিশ্চিত নয়।
প্রাচীন এথেন্সে যদি কোনো বাবা জানতে পারতেন যে তার মেয়ে অবিবাহিতা অবস্থায় অন্য কোনো পুরুষের শয্যাসঙ্গী হয়েছে তাহলে তিনি তাকে দাসী হিসেবে বিক্রি করে দিতেন।স্ত্রীর সতীত্বের ব্যাপারে সামোয়ার অধিবাসীরা নিজেরা যেমন নিশ্চিত হতে চাইতেন তেমনি তারা আর সবাইকেও সেই ব্যাপারে জানাতে চাইতেন। সেখানকার কোনো বিয়ের সময় গোত্রপতি সবার সামনেই আঙুল দিয়ে নববধূর হাইমেন ছিড়ে দেখাতেন এটা প্রমাণ করতে যে মেয়েটি পবিত্র । প্রাচীন রোমে দেবী ভেস্টার কোনো পূজারিণী যদি ৩০ বছর বয়সের আগে কুমারীত্ব হারাতেন তাহলে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হত।
জোয়ান অফ আর্কের মৃত্যুদন্ড
পনেরো দিন ধরে ষাট জন বিচারক খুচিয়ে খুচিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তরুনীটিকে, এবং কোন আইনজ্ঞ বা অন্য কারো সহায়তা ছাড়াই একাই সেইসব প্রশ্নবাণ মোকাবেলা করে যাচ্ছিল জ্যানেট নামের অষ্টাদশী তরুণিটি, জোয়ান অফ আর্ক নামে সারা বিশ্ব যাকে জানে। অভিযোগ? সে ডাইনি, ব্যভিচারিণী এবং পুরুষের পোশাক পরে ।ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের সেই শতাব্দি প্রাচীণ যুদ্ধ আর বিরোধের ইতিহাসে দুর্বল ফরাসী রাজা সপ্তম চার্লসের ভগ্ন দরবারে যেন দেবদূতের মতই উদয় হয় এক গ্রাম্য অশিক্ষিতা মেয়ে, দাবী করে রাজার সেনাদলের দায়িত্বভার তার হাতে তুলে দেবার জন্য। আর এরপর তার অবিশ্বাস্য নেতৃত্ব আর রণকৌশলে একে একে পরাজিত হতে থাকে ইংরেজ বাহিনী, ফ্রান্সের সিংহাসনে শক্তভাবে আসীন হন রাজা সপ্তম চার্লস।এরপর ইংরেজ সমর্থিত বার্গান্ডিয়ান ফরাসীরা সুযোগ পেয়ে জোয়ানকে বন্দি করে এবং ইংরেজদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ইংরেজদের দখলকৃত ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে তার বিচার শুরু হয়। বিচারে জোয়ানকে ডাইনি সাব্যস্ত করা হয় এবং ১৪৩১ সালের ৩০ মে প্রকাশ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সামনে তাকে পুড়িয়ে মারা হয়। সেই বিচারে জোয়ানের জবানবন্দী উঠে এসেছে সহজ সরল ধর্মভীরু একজন মেয়ের নির্ভীক স্বীকারোক্তি। এই স্বীকারোক্তির শেষ বক্তব্য ছিল, ঈশ্বরের ইচ্ছা হলো ইংরেজরা ফ্রান্স ছেড়ে চলে যাক ।জোয়ানের মৃত্যুর পর খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি, ইংরেজরা ফ্রান্স থেকে পালাতে বাধ্য হয়। ২৫ বছর পর ১৪৫৫ সালে পোপ ক্যালিস্টাস জোয়ান অফ আর্কের বিচারের নথিপত্র তলব করেন এবং পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। খুব সহজেই উঠে আসে কিভাবে বিচারের নামে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই বিচারের প্রধাণ পান্ডা বোভের বিশপের কঙ্কাল কবর থেকে উঠিয়ে এনে নর্দমায় ফেলে দেয়া হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০১