রাশেদুল হাসান
সৃজন ও মননশীলতার মুর্তপ্রতিক মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী । অসংখ্য গুনে গুনান্বিত ইকবাল চৌধুরী একাধারে কবি, গীতিকার, নাট্যকার, কথা সাহিত্যিক, সম্পাদক, পান্ডুলিপিকার, গ্রন্থনাকারী ও টিভি উপস্থাপক। দ্বীর্ঘ কাল থেকে শিল্প সাহিত্যের অঙ্গনে তার পদচারনা প্রজাপতির ন্যায়।
লেখ লেখি শুরু করেন সত্তরের দশকের শেষের দিকে। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার প্রথম কবিতা ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ নামক ছড়া প্রকাশিত হয় স্কুল ম্যাগাজিনে। আশির দশকের প্রথম দিকই মূলত এ নান্দনিক জগতে কবির পথ চলা শুরু। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার এবং তার পরের বছরই অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিনের তালিকাভূক্ত গীতিকার হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের এ গ্রেডের গীতিকার।
বিভিন্ন লিটল ম্যাগ সম্পাদনা ছাড়াও জড়িত ছিলেন শিল্প সাহিত্যের নানা সংহঠনের সাথে। আশির দশকে ‘সচিত্র নোঙর’, নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে ‘ সোনালি দিন’ ছাড়াও ‘আটই ফাল্গুন’, ‘এদেশ তোমার আমার’ সোনার হরিণ সম্পদনা করতেন। একজন সফল সংগঠক হিসেবে তিনি অসংখ্য দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় কবিতা সংসদ চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট, জাতীসংঘের ইউনেস্কো ক্লাব এর কালচারাল সেক্রেটারী, কবিতা নিকেতনের সভাপতি, অনুপ্রাস চট্টগাম শাখার সহ সভাপতি ছিলেন কবি চট্টগ্রাম থাকাকালীন। দ্বীর্ঘ বিশ বছর চট্টগ্রামে অবস্থান করার পর কবি নিজ জেলা ফেনীতে পিরে আসেন। এখানেও তার সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চলতে থাকে সমান গতিতে। দায়িত্ব পালন করছেন ফেনী পয়েট সোসাইটির সহ সভাপতি ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ফেনীর আহবায়ক হিসেবে।
কবি ইকবাল চৌধুরী জীবনের শুরুতে কবিতার দিকে ঝুকে পড়লেও প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন একজন সফল গীতিকার হিসেবে। তার লেখা প্রায় ১২’শ গান বিভিন্ন শিল্পির কণ্ঠে পরিবেশিত হয়েছে। রচনা করেছেন প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক গান।
‘স্মৃতির এপিতাপে রোদ্দুর’ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় সত্তরের দশকে। বইটি একটি যৌথ প্রকাশন। তৎকালিন সোনার হরিণ সম্পাদক জাফরুল্লা খানসহ এ বইটির প্রকাশনা উৎসব হয় ফেনীতে। ‘স্মৃতির ক্যানভাসে’, ‘গীতিকাব্য’ প্রকাশিত হয়। ‘রক্তাক্ত শাট’ ও ‘পূর্বখালির চর’ নাটক দু’টিও জনপ্রিয়তা লাভ করে।
শিল্প সাহিত্যে জীবনোৎসর্গ মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন অসংখ্য পূরস্কার। ১৯৯৬ সালে জয়বাংলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি নাট্যকার পদক, জিয়া মেলা উদযাপন পরিষদ শ্রেষ্ঠ গীতিকার পদক, ওস্তাদ মোহন লাল দাস সংগীত নিকেতন শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, সাংবাদিক ও গীতিকার পদক পান একই বছর। এর আগে ১৯৭৭ সালে শিল্পকলা পরিষদ ফেনী মহকুমা সম্মাননা ও ২০১০ সালে নজরুল একাডেমী ফুলগাজী সম্মাননা পদক পান এ গুনি ব্যক্তি।
সফল এ কবি, নাট্যকার ও গীতিকার মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাবা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী ও মাতা দেলোয়রা বেগমের একমাত্র পূত্র সন্তান ইকবাল চৌধুরী। এক ভাই তিন বোনের মধ্যে ইকবাল চৌধুরীই শিল্প সাহিত্যের দিকে ঝুকে পড়েন। সন্তানের সাহিত্য প্রীতির বিরুদ্ধে কখনো দাড়াননি তারা। পরবর্তিতে স্ত্রী কবিতা ইকবালের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় তরতর করে এগিয়ে চলছেন এ কৃর্তিমান পুরুষ।
শিল্প সাহিত্যের নান্দনিক ভূবনে শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন এমন স্বার্থপর পুরুষ তিনি নন। সৃজনশীল মানুষ তৈরীর জন্য গড়ে তুলেছেন সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৯৭ সালে ‘সাউন্ড টাচ্’ নামক ব্যান্ড দল গঠন করেন।
সদালাপি ইকবাল চৌধুরী নিজেকে যেভাবে সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নযনে বিলিয়ে দিয়েছেন ঠিক তেমনি যাতে করে এ অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য ভবিষ্যতেও যেন জীবনোৎসর্গ করকে মানুষ এগিয়ে আসে তার জন্য আমৃৃত্যু সাধনা করেই যাবেন।
প্রতাশিত ২১ এপ্রিল ২০১১ দৈনিক ফেনীর সময়।