আজকে সকালে কারো মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠি নাই। তবে দাত মাজার সময় বরাবরের মতই নিজের মুখ দেখসি। কিন্তু বুঝতে পারতাসিনা আজকের দিনটা অন্য দিনের মত নিরঝঞ্জাট হইল না কেন?
বিশাল ভেজালে পড়সি আজ। বাপের হাতে ধরা খাইসি উইথ সিগারেট। ডিটেলস বলি। শনিবার, ভার্সিটি বন্ধ। অন্য শনিবারগুলার মতই আজও ১১ টায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তার সাথে আম্মুর হাল্কা বকা মিশায়া খাইলাম। এর পর চা খেয়ে গেলাম বাইরে। সাথে ৫টা বেন্সন ( একটা আধখাওয়া)।
নদীর পারে আমাদের পিনিক সেন্টার। অইখানে সাধারনত সিনিয়র কেঊ আসে না। কারন পোলাপান পানি, ধুয়া এসব খায়। ( নদীর পার মানে কর্ণফুলী নদি। আমি থাকি অফিসারস কোয়ার্টারে । অনেক সুন্দর এলাকা এটা) যাই হোক, আব্বুর অফিস তেমন দূরে না। আমি তো ধরায়া বসছি। শেষের দিকে। সাথে এক সিনিয়র ভাই আসে। হঠাৎ ভায়ে ইশারা করল। আমি ঠিক বুঝি নাই। যখন বুঝলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেসে। আব্বু । আমার হাতে সিগারেট দেখে তার চোখ কপালে। কপালের উপরে মানুষের অন্য কোন অঙ্গ থাকলে চোখ অইখানেও উঠত। কপালে ঊঠার কারন, তাদের চোখে আমি মারাক্তক ভাল ছেলে। পড়ার সময় পড়ি, নিয়মিত ভার্সিটি যাই, রাজনীতি করি না, গার্লফ্রেণ্ডের তো প্রশ্নই উঠে না। সোনার টুকরা, হীরা মানিক ছেলে। সেই আমার হাতে সিগারেট !!
আমাকে দেখার পর আব্বুর প্রথম বকাটা হচ্ছে “ কানে ধর” !
কি?
কানে ধর বলসি,তুই কানে ধর।
(মান সম্মান নিয়া টানাটানি। সাথে সিনিয়র ভাই। আর ধমকা ধমকি শুনে ইতিমধ্যে পাশের জানালায় কিছু ছুন্দর আপু উকি দিতাসে। ) আব্বা বুঝলো না ২০ বছরের একটা দামড়া পোলারে কেম্নে শাসন করতে হয়!! হাফপ্যান্ট পড়ি বইলা কি আমি এখনো ছোট ! বাসায় গিয়ে যা বলার বলতো, কিছু মনে করতাম না।
আব্বু সোজা হাটা ধরল। পিছে আমি। বাসায় গিয়ে বকার পার্ট বাদ দিলাম। আম্মু ও ভালই দিসে। ভাগ্যিস আমি শরীর সাস্থে মাশাআল্লাহ। তাই হাতে ব্যাথা পাওয়ার ভয়ে মারে নাই।
বকাঝকার পর শাস্তি নির্ধারণের পালা। এইরকম অদ্ভূত শাস্তির কথা আমি কখনো শুনি নাই, দেখি নাই, আমি কল্পনাই করতে পারি না। আমার খাওয়া বন্ধ করে দিল তারা। আমাকে যদি বলত পুরা কর্ণফুলী নদী ৫০০ বার পার হ, অথবা খাতায় ১ লাখ বার লেখ “ আমি আর সিগারেট খাব না”, আমি এতটা কষ্ট পাইতাম না। এ যে পেটের উপর অত্যাচার। এতবড় নিষ্ঠুরতা কিভাবে তারা করতে পারলো???
পকেটে বিশেষ টাকা পয়সা নাই। যেইখানে আমি বেন্সন্টাই এখনো বাপের টাকায় খাই, সেখানে হোটেলে গিয়ে খাবার তো প্রশ্নই আসে না। কি আর করা। খালি পেটে আসি। দেখি কোন ফ্রেন্ডের বাসায় খাইতে দেয় কি না!!!
দোয়া করবেন, বাসার পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
( লাস্ট আপডেটঃ আমি কিছুক্ষন আগে তিনটা টোস্ট বিস্কুট চরি করতে সক্ষম হইসি। সাথে পানিও আসে। হেহ হে হে হেহ। )