somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক টুকরো ভালবাসা

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিলেটের মাটিতে ‘পা’ রাখার সাথে সাথে মনটা চনমনিয়ে উঠলো! অবশেষে পুণ্যভূমিতে পৌঁছলাম। পাঠ্য পুস্তকে সিলেট সম্পর্কে কত কথা পড়েছি! চা বাগানের দেশ, হযরত শাহ জালাল-শাহ পরানের দেশ, সুরমা নদীর দেশ।
একটা নতুন শহর দেখা আমার কাছে একটা নতুন দ্বীপ আবিষ্কারের মত!! সবকিছুই অবাক দৃষ্টিতে দেখি। দোকানের সাইন বোর্ড, রাজপথ, অন্ধগলি, বাড়ির নকশা, ঝুল বারান্দা, টিনের বাড়ি, পানের দোকান, ঝলমলে মার্কেট, ঘর্মাক্ত রিক্সাওয়ালা, কালো সানগ্লাস পরা যুবক, ছুটন্ত মানুষ, ফ্যাশনদুরস্ত তরুণী!!
দেখি আর মনে মনে আমার চেনা গণ্ডির সাথে ‘মিল অমিল’ খুঁজি!! সবচেয়ে ভাল লাগে এক এক রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করা এবং হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাওয়া! তারপর লোকজনকে জিজ্ঞেস করে করে আবার আস্তানায় ফিরে আসা। প্রথম প্রথম চলে এই উত্তেজনা। ধীরে ধীরে রাস্তা-ঘাট পরিচিত হতে থাকে। মুখগুলো আপন হতে থাকে! হারিয়ে যাওয়ার উত্তেজনা আর উপভোগ করা যায় না। এক সময় মনে হয়- কত যুগ ধরে যেন চেনা এই শহর!!
প্রতিদিন মাজারের আঙ্গিনা দিয়ে অফিসে যাই। যেতে যেতে ‘মাজার জিয়ারতে’ আসা মানুষজন দেখি!! কত বিচিত্র মানুষ যে আসে!
কেহ আসে শুধু মাজার দেখতে! কেহ আসে মানত নিয়ে! কেহ কেহ ভক্তিতে গদগদ হয়ে দেয়ালে কপাল ঠেকিয়ে বিড়বিড় করে।
আসে শিক্ষা সফরকারী! মাজারের আশপাশ ঘুরে-ফিরে দেখে! জালালী কবুতরের পাশে দাঁড়িয়ে পটাপট ছবি তুলে! তারপর বেরিয়ে পড়ে জাফলং বা মাধবকুণ্ডের উদ্দেশ্যে।
আসে ভক্তবৃন্দ! দূর-দূরান্ত †থকে বাস ভাড়া করে চলে আসে। বাসের ছাদে লাগানো মাইকে বাজতে থাকে ভক্তিমূলক গান। মাজারের সামনে রাস্তার দু’পাশে জমজমাট হোটেল। গভীর রাত পর্যন্ত চলে খাওয়া-দাওয়া।
সূর্য উঠার আগেই এলাকাটা জেগে উঠে। শুরু হয় লোকজনের আনা-গোনা। হোটেল বয়দের চিৎকার, চেঁচামেচি। ভিক্ষুকের কাকুতি!!
প্রতিদিন এখান দিয়ে যাই আর জীবনের স্পন্দন টের পাই!
কে যেন বলেছিল- ‘এক একজন মানুষ এক একটা পৃথিবী।’
সত্যিই তাই! মানুষের এই এক জীবনে কত ঘটনা ঘটে। মুখ দেখে যদি তা বোঝা যেত তবে এক একটা মুখ হতো এক একটা মহাকাব্য।
এত মহাকাব্যের ভীড়ে- জীবনের উষ্ণতা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক! তবে মাঝে মাঝে হাঁটার সময় ভিক্ষুকের দল পথরোধ করে! একজনকে দিলে আর দশজন ছুটে আসে! কত রকম ভিক্ষুক যে আছে এখানে!!
প্রতিদিনের মতো আজও সকালবেলা এখান দিয়ে যাচ্ছি। অফিসে যাওয়ার প্রচণ্ড ব্যস্ততা। দ্রুত হাঁটছি! হঠাৎ এক খোড়া ভিক্ষুক সামনে এসে দাঁড়াল। খুব কষ্টে ধাক্কা সামলালাম!!
কাতর কন্ঠে ভিক্ষুকটি বলল, একটা টেকা দেন স্যার,
ভ্রু কুচকে বললাম, মাফ করেন। ওকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলে এলাম!!
দুপুর বেলা! লাঞ্চ আওয়ারে রুমে ফিরছি। মাজার প্রাঙ্গনে এসে সেই ভিক্ষুকটিকে চোখে পড়ল। ময়লা কাপড় পড়া এক মহিলা পরম যত্ন করে ‘ভাত-দলা’ করে ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। এক লোকমা শেষ হলে আরেক লোকমা তুলে দিচ্ছে।
বুকটা ধক করে উঠলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখলাম! ভিক্ষুকটিও আমাকে দেখতে পেল। এগিয়ে গিয়ে মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম,
কি হয় আপনার?
স্বামী।
আপনিও কি ভিক্ষা করেন?
মহিলা বিরক্তমুখে বলল, না! বাড়িতে কাম করি।
আর কিছু জানতে ইচ্ছা করলো না! হাঁটতে শুরু করলাম! মাথায় সূক্ষ্ম একধরনের যন্ত্রণা হচ্ছে।
জীবনে আমি অনেক রোমান্টিক দৃশ্য দেখেছি, ভালোবাসার দৃশ্য দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়, পার্কে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে কিংবা ধানমণ্ডির লেকে- প্রেমিক-প্রেমিকারা ঘনিষ্টভাবে বসে আছে! হয়তো একজন আরেকজনকে খাইয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু সেদিন যে দৃশ্য দেখেছিলাম- তা ছিল- একজন স্ত্রী যে তার পঙ্গু ভিখারী স্বামীকে পরম মমতায় ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। সভ্য সমাজ থেকে যার ভালোবাসা পাওয়ার বিন্দু মাত্র ক্ষমতা নাই!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×