somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্তার কারখানাঃ আজকাল জুমার নামাজের খতীবেরা

০৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আলেম ওলামাদের দোয়া আমাদের মতো সাধারন মানুষদের যতটুকু প্রয়োজন, ইদানিং মসজিদের ইমাম খতিবদের আলোচনা শুনলে আমার মনে হয়, আমাদের মত সাধারন মুসলিমদের দোয়া তাদের, তার চে' আরও বেশি প্রয়োজন।
.
খুঁজে খুঁজে মুহাক্কেক আলেমদের পেছনে নামাজ পড়া আমার ছোটবেলার অভ্যাস। একটা সময় পর্যন্ত তাদের চোখ বুজে অনুসরন করতাম। তারপর আমাকে "শয়তান ধরলো" , এখন তাদের অনেক কার্যক্রম বুঝি না। শয়তান মনের মধ্যে খালি প্রশ্ন তৈরি করে দেয় তাদের কথাবার্তা, কাজকর্ম সম্পর্কে।
.
আজ যে মসজিদে জুমা পড়লাম, তা কওমি ঘরানার। হুজুর খুতবার পূর্ববর্তী ওয়াজের ৯৫% সময় বাংলাদেশের আহলে হাদিস সম্প্রদায়কে গালি দিলেন। তার মতে মদিনায় গিয়ে আহলে হাদিস ফিরকার আলেমরা "দাঁড়ি চাঁছা ইউরোপীয়" শিক্ষকদের কাছে গিয়ে কোরআন হাদিস শেখে। আহলে হাদিস ফিরকার আলেমদের প্রধান একজনের নাম ধরে বললেন, ওনার কোরআন তিলাওয়াতই শুদ্ধ হয় না। আহলে হাদিসরা যে নামাজে দাঁড়িয়ে বুকের উপর হাত বাঁধে, এটা নারীদের নামাজের নিয়ম। যে সমস্ত পুরুষ নামাজে দাঁড়িয়ে এভাবে হাত বাঁধে, তারা আসলে জন্মের পর ঠিকঠাক বাবার সংস্পর্শ পায় নাই। মায়ের কাছ থেকে নামাজ শিখেছে বলেই এভাবে মহিলাদের মতো হাত বাঁধে। ঘোড়ার লেজ ঝাঁকি দেয়ার মতো করে নামাজে রফে ইয়াদায়িন (আল্লাহু আকবর বলার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবার হাত তোলা) করে। আহলে হাদিস ফিরকা মূলত সিহাহ সিত্তাহকে অনুসরন করে বলে সিহাহ সিত্তাহ ব্যতিত অন্যান্য হাদিসের কিতাব (যার একটার নামও তিনি ঠিকভাবে বলতে পর্যন্ত পারলেন না) এর প্রশংসা করতে গিয়ে, আমার বিবেচনায় তিনি সিহাহ সিত্তাহকে অপমানও করে বসলেন, তার কথার টোনে।
.
এদিকে আমার পাশে যে লোকটা নামাজ পড়তে বসেছিল, সে, আর আমি দুজনেই আমাদের গ্রিন মডেল টাউনের তরফ থেকে বানানো মসজিদে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ি। কিন্তু জুমা পড়ি না। কারন জুমা পড়ান আমিন মোহাম্মদ লিমিটেডের এক কর্মচারী, যে সারসিনার পীরের মুরিদ, আলিয়া মাদ্রাসায় পড়েছেনও অতীত জীবনে, কিন্তু প্রাক্টিসিং আলেম না। আমিনে চাকরীর সুবাদে জোর করে জুমা পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। তার নামাজ পড়ানোর উদ্ভট কায়দাকানুন আছে। নামাজের শুরুর আগে যে একামত দেয়া হয়, সে সময় উনি মুসুল্লিদের দাঁড়াতে দেন না। হাদিসে নাকি আছে (সূত্র দেন না উনি কখনো, খালি বলেন হাদিসে আছে), একামতে 'হাইয়া আলাস সলাহ' উচ্চারন করার আগে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। এছাড়াও বাজারি ওয়ায়েজদের মতো কথায় কথায় "ঠিক কি না বলেন?" - এই প্রশ্ন করেন। জবাবে সবাইকে চিল্লায়ে বেশক বলতে হয়। জোরে জোরে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়, নইলে উনি অভিযোগ করেন মুসুল্লিদের ইমানি জোশ আর জজবা নিয়ে। প্রতি জুমায় মুসুল্লিদের বিবিধ বিষয়ে হাত তুলিয়ে প্রতিজ্ঞা করান, "হে ভাইয়েরা আপনারা হাত তুলেন, প্রতিজ্ঞা করেন আজকে বাড়িতে গিয়ে অমুক কাজটা শুরু করবেন ..."। আমি যে পরিবেশে দ্বীন শিখেছি, তার সঙ্গে সারসিনার পীরসাহেবের এই মুরিদের দ্বীন - ইসলাম মেলে না। ফলে তার পেছনে জুমা পড়ি না আমি। আমার মতো আমাদের মহল্লার অনেকেই তার পেছনে জুমা না পড়ে একটু দূরের মসজিদে গিয়ে জুমা পড়েন। আজকের জুমায় আমার পাশে বসা লোকটিও একই কারনে সম্ভবত পড়েন না এলাকার মসজিদে জুমা।
.
ওনার বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, কিন্তু খুবই পাকা মুসুল্লি। হাত বাঁধেন বুকের ওপর, রফে ইয়াদায়িন করেন বোধয়। আমার এসব নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু যেই সারসিনার পীরের মুরিদ আমিনের কর্মচারীর পেছনে নামাজ না পড়ার ইচ্ছা নিয়ে তিনি এক কওমি আলেমের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন, সেই কওমি আলেম তো আজ তাকে রীতিমত অপদস্থ করে ছাড়লো!
.
খেয়াল করেছেন কি না জানি না, এই ঈদে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা যারা রাস্তাঘাটে ফুর্তি আনন্দ করে বেড়াচ্ছিল, তাদের প্রায় সবার হাতে ছিল খেলনা বন্দুক। আমাদের মুগদা, বাসাবো, খিলগাঁও এলাকা ছেয়ে গেছে এই খেলনা বন্দুক দিয়ে। রবারের গুলি বেরোয়। রাস্তার দুপাশে তারা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গোলাগুলি করে। আমরা রিকশা নিয়ে আল্লাখোদার নাম জপতে জপতে পার হই, রবারের গুলি গায়ে না লাগে যাতে।
.
এই বাচ্চাগুলি বড় হলে প্রথম সুযোগে অস্ত্র হাতে তুলে নেবে। ভায়লেন্সের চর্চা করবে।
.
বাংলাদেশের আলেম সমাজের এক বড় অংশের এই বাচ্চাগুলির, অথবা তাদের মসজিদগামী পারিবারিক মুরুব্বিদের চরিত্র সংশোধনমূলক বক্তব্য রাখার সক্ষমতা নেই। তাদের রাহবার হবার সক্ষমতা নাই। আছে কেবল নামাজে হাত কই বাঁধবে তা নিয়ে লড়াই ঝগড়া করার মুরোদ।
.
তাই বললাম, আমরা আলেমদের কাছে দোয়ার যতটুকু মোহতাজ, বাংলাদেশের আলেম সমাজ ইদানিং তার চে' বেশি মোহতাজ আমাদের কাছে। দোয়ার জন্যে। পয়সাকড়ির জন্যে তো বটেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:২৭
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×