somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারুকি মুরাকামির অনুবাদ গল্প - এপ্রিল মাসের এক আলো ঝলমলে সকালে ১০০% নিখুঁত এক মেয়ের সঙ্গে দেখা হওয়া বিষয়ক গল্প

২৫ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এপ্রিল মাসের এক সুন্দর সকালে, হারাজুকু নামে টোকিও শহরের খুব নান্দনিক এক মহল্লার শীর্ণ পার্শ্বসড়কে আমি একদম একশো ভাগ নিখুঁত একটি মেয়ের দেখা পাই।

সত্যি বলতে, সে অতোটা সুন্দরী ছিল না। আর দশজন মানুষের ভিড়ে খুব আলাদা করে চোখে পড়বে, এমনও নয় সে।

পোশাকআশাকেও তেমন উল্লেখযোগ্য কোন বিশেষত্ব ছিল না। চুলের আলুথালু অবস্থা দেখে তাই মনে হচ্ছিল যে ঘুম থেকে উঠে কোন রকম কেশবিন্যাস ছাড়াই সে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। কিশোরী তো নয়ই, তাকে "তরুণী" ও বলা চলে না। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ত্রিশের কাছাকাছি বয়স তার। তবুও, প্রায় পঞ্চাশ গজ দূর থেকে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি - এই মেয়েটা আমার জন্য একদম একশোভাগ নিখুঁত। তাকে দেখা মাত্র আমার বুকের মধ্যে অপরিচিত ঢাকের বাড়ি টের পেলাম, মুহূর্তের মধ্যে আমার ঠোঁট - জিভ সব শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হল।

সবারই নিজের বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের পছন্দ করবার ব্যাপারে কিছু মাপকাঠি ব্যবহার করে। কারো হয়তো টানা টানা, পটলচেরা চোখের মেয়ে পছন্দ, কারো হয়তো লম্বা লম্বা আঙ্গুল, বা পায়ের সরু গোড়ালি দেখেও পছন্দ হয়ে যেতে পারে কোন মেয়েকে। আমার নিজেরও এমনকিছু ব্যক্তিগত মাপকাঠি আছে। হয়তো কোনদিন রেস্টুরেন্টে আমার উল্টোপাশের টেবিলে বসা কোন মেয়ের নাকের আকার আকৃতি দেখে আমার তাকে পছন্দ হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু এই 'শতকরা একশোভাগ নিখুঁত মেয়ে' - র খোঁজ পাওয়ার ব্যাপারটা ভিন্ন। আগে থেকে ঠিক করা কোন মাপকাঠির ভিত্তিতে আপনি বলতে পারবেন না যে - ঠিক আছে, ঐ মেয়েটা আমার জন্যে একদম একশোভাগ নিখুঁত। খাড়া নাকের মেয়েদের প্রতি আমার দুর্বলতার কথা বলছিলাম। এদিকে যে মেয়েটার কথা বললাম একটু আগে, তার নাক যে ঠিক কেমন ছিল, বা তার আদৌ নাক ছিল কিনা - এখন আর আমার মনে নেই তা। এদিকে কেবল একটা মাত্র ব্যাপারই নিশ্চিতভাবে মনে আছে, সে এমন আহামরি সুন্দর কোন মেয়ে ছিল না। কি অদ্ভুত, তাই না?

"গতকাল রাস্তায় আমি একশোভাগ নিখুঁত এক মেয়ের দেখা পেয়েছি।" বললাম একজনকে, আমি।
"অ্যাহ?" শুনে বলল সে। "ডানা কাটা পরীর মতো দেখতে?"
"ঠিক তা না।"
"তাহলে ঠিক তোমার হিসেব মতন, একদম খাপেখাপ ময়নার বাপ, তাই তো?"
"জানি না। ওর কোন বৈশিষ্ট্যই আমার পুরোপুরি মনে নেই এখন। ওর চোখ দেখতে কেমন ছিল, বা ওর বুবস আদৌ খুব বড় ছিল কিনা।"
"আয় হায়!"
"হ্যাঁ, অদ্ভুত। তাই না?"
"যাই হোক," যার সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে কথা বলছিলাম, তার কণ্ঠে আলাপ সামনে টেনে নেয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহের সুর ততক্ষণে স্পষ্ট, "কি করলা মামা তারপর? কথা বলার চেষ্টা করেছো? বা পিছন পিছন ফলো করে দেখেছো কই থাকে সে?"
"নাহ। জাস্ট রাস্তার উল্টা পাশ থেকে হেঁটে এসে একে অপরকে পার করে গেলাম, এইতো..."

সে হেঁটে আসছিল পূব হতে পশ্চিম দিকে, আর আমি পশ্চিম থেকে পূবে। এপ্রিল মাসের সকালটা দারুন সুন্দর ছিল সেদিন।

আহা, কথা বলা উচিৎ ছিল তার সঙ্গে। আধাঘণ্টা কথা বলাটাই যথেষ্ট হতঃ ওর ব্যাপারে কিছু কথাটথা জিজ্ঞেস করতাম, আমার নিজের কিছু তথ্যও দিতাম ওকে। ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসের ফলশ্রুতিতে ১৯৮১ সালের এপ্রিল মাসের এই সুন্দর সকালে রাস্তার উল্টো পাশ থেকে হেঁটে এসে আমাকে ওর পার করে চলে যাওয়ার ব্যাপারটা যে জটিল অঙ্কের সম্মুখীন করে দিলো, তা নিয়েও ওর সঙ্গে আলাপ করতাম। দুনিয়ার গোপন সব তথ্যাবলিতে ভরপুর দারুন নিগুঢ় এক আলাপ হতো ওর সঙ্গে আমার। দুনিয়ায় যখন পরিপূর্ণ শান্তি বিরাজ করছিল, তখন এক প্রাগৈতিহাসিক ঘড়ি তৈয়ার করা হয়েছিল। এই সিক্রেট জানেন আপনারা? জানেন না তো? মনের গভীর গভীর সব খানাখন্দে লুকোনো এই ধরনের গোপন সব বিষয় নিয়ে আলাপ করতাম আমরা।

কথাবার্তা শেষ করে হয়তো কোথাও দুপুরের খাবার খেতাম আমরা একসঙ্গে। তারপর একটা উডি অ্যালেনের মুভি দেখতে যেতাম। মুভি শেষ করে কোন এক হোটেল বারে বসে একটু মদ্যপানও হয়ে যেতো। কপাল ভালো থাকলে সেই মদ্যপানের প্রতিক্রিয়া আমাদের বিছানা পর্যন্তও টেনে নিয়ে যেতে পারতো।

নানারকম সম্ভাবনা আমার হৃদয়ের দ্বারে টোকা দিয়ে যায়।
এখন আর পঞ্চাশ নয়, আমাদের মধ্যে দূরত্ব স্রেফ পনেরো গজ।
ওকে কীভাবে অ্যাপ্রোচ করবো? কি বলে আলাপ শুরু করা যায়?

"শুভ সকাল, মিস! কিছু মনে করবেন, যদি আপনার সঙ্গে আমি, ধরুন মিনিট ত্রিশেক সময় আলাপ করতে চাই?"

ধুর বাল। এইভাবে আলাপ শুরু করলে আমাকে একদম জীবনবীমা কোম্পানির সেলসম্যান ঠাউরে বসতো।

"ক্ষমা করবেন, এই এলাকায় সারারাত খোলা থাকে এমন কোন লণ্ড্রী আছে, আপনার জানা মতে?"

ধুত্তুরি! এটা আরও হাস্যকর শোনাত। আমার হাতে তো লণ্ড্রী করবার জন্য কোন কাপড়ই ছিল না। এরকম একটা লাইন শুনে আমাকে কেউ কেন সিরিয়াসলি নেবে?

মনে হয় সহজ সরল সত্য কথাটা বললেই যথেষ্ট হতঃ "শুভসকাল। জানেন, আপনি আমার জন্য শতভাগ নিখুঁত এক নারী।"

উমমম, সে একথাও বিশ্বাস করতো বলে মনে হয় না। আর যদি করতোও, কোন নিশ্চয়তা ছিল না যে এর সূত্র ধরে সে আমার সঙ্গে আলাপে আগ্রহী হবে। "দুঃখিত," হয়তো বলতো সে - "হতে পারে আমি আপনার জন্য একদম নিখুঁত, কিন্তু আপনি আমার জন্য শতভাগ নিখুঁত ছেলে নন।" হ্যাঁ, সে বলতে পারতো এ কথা। আর এরকম একটা অবস্থায় পড়লে আমি মনের কষ্টে ভেঙ্গেচুরে গুড়োগুড়ো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতাম রাস্তায়। এই ধাক্কা আর সামাল দিয়ে ওঠা লাগতো না আমার। বত্রিশ চলছে এখন আমার বয়স, বয়স বাড়তে থাকা বিষয়টা এরকমই।

আমরা একটা ফুলের দোকান পার করে যাই। উষ্ণ আবছা এক বাতাসের ঝাপটা এসে আমার চোখে মুখে লাগে। গরমে রাস্তার পীচ গলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গোলাপ ফুলের ঘ্রাণ এসে ধাক্কা দেয় আমার নাসিকা রন্ধ্রে। ওনাকে বলবার মতো কোন কথা আমার আর গুছিয়ে ওঠা হয় না। একটা সাদা সোয়েটার পরা সে, তার ডান হাতে একটি মুড়মুড়ে কাগজে নির্মিত স্ট্যাম্প লাগানো খাম। হয়তো সে চিঠি লিখেছে কাউকে। তার ঘুম ঘুম চোখ দেখে মনে হয়, হয়তো পুরো রাত জেগে চিঠিটা লিখেছে সে। এই খামের ভেতর হয়তো তার জীবনের সমস্ত গোপন থেকে গোপনতর সিক্রেটসমূহ লুকিয়ে আছে।

কয়েক পা আগিয়ে যাই মেয়েটিকে অতিক্রম করে, তারপর পিছে ফিরে তাকাইঃ সে হারিয়ে গেছে জনারণ্যে।

তারপর, ঐযে, প্রবাদে বলে না যে - চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে, ঠিক তেমন করেই আমার মাথায় যথাযথভাবে ওকে যা বলা প্রয়োজন ছিল, সে কথাগুলো খেলে গেলো। লম্বা একটা বক্তৃতা হয়ে যেতো সেটা, ঠিকঠাক মতো সব গুছিয়ে বলতে পারতাম কিনা তাতেও আমার সন্দেহ আছে। আমার মাথায় বাস্তববাদী বুদ্ধিশুদ্ধি খুব একটা খেলে না কখনো।

যা হোক। আমার সে বক্তব্য শুরু হতো "একদেশে কোন একসময়ে ছিল এক ..." দিয়ে, আর শেষ হতো "কি শোকভারাতুর কাহিনী, তাই না?" -র মাধ্যমে।

তো, একদেশে কোন একসময়ে ছিল এক কিশোর এবং কিশোরী। ছেলেটার বয়স হবে আঠারো, মেয়েটার ষোল। ছেলেটা অমন দারুন সুদর্শন কেউ ছিল না, মেয়েটাও ছিল না চোখ ধাঁধানো রূপসী। দুনিয়ার আর দশটা সিঙ্গেল ছেলে মেয়ের মতো তারা ছিল একাকী বালক, এবং বালিকা। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে তাদের তফাৎ ছিল এ জায়গায় যে, তারা দুজনেই একদম মন থেকে বিশ্বাস করতো, পৃথিবীর কোথাও না কোথায় তাদের জন্য তাদের শতভাগ নিখুঁত জীবনসঙ্গী অপেক্ষা করে বসে আছে। হ্যাঁ, তারা বিশ্বাস করতো অলৌকিকত্বে। এবং সেই অলৌকিক ঘটনা তাদের জীবনে অবশেষে ঘটে গেলো।

একদিন তারা দুজন এক সড়কের মোড়ে এসে মুখোমুখি হল একে অপরের।

"কি আশ্চর্য কাণ্ড," ছেলেটা বলল। "আমি সারাজীবন ধরে তোমার খোঁজ করছি। বললে হয়তো বিশ্বাস করবে না, কিন্তু তুমি আমার জন্যে শতভাগ পারফেক্ট মেয়ে।"
"এবং তুমি," মেয়েটি প্রত্যুত্তরে বলল, "তুমিও আমার জন্যে শতভাগ নিখুঁত এক ছেলে। আমি মনে মনে যেমনটা কল্পনা করতাম সবসময়, ঠিক তেমনি। সমস্ত খুঁটিনাটিসহ মিলে গেছে সবকিছু। কি স্বপ্নের মতো এক ব্যাপার!"

তারপর তারা এক পার্কের বেঞ্চে গিয়ে হাত ধরাধরি করে বসলো। বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজ নিজ জীবনের গল্প বলল একে অপরকে। ততক্ষণে তারা একাকীত্বের অভিশাপের ঘেরাটোপে বন্দী নয়। তারা খুঁজে পেয়েছিল একে অপরকে, দেখা পেয়েছিল নিজ নিজ স্বপ্নের মানুষের। কি অদ্ভুত সুন্দর এ অনুভূতি! এ যে অলৌকিক ঘটনা, ঈশ্বরের ইঙ্গিতে তারার সঙ্গে তারার যোগ সংযোগ ঘটে যাওয়ার মতো ব্যাপার।

নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে করতে তাদের মনের মধ্যে ছোট্ট একটুকরো সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করলো। সম্পূর্ণ নিখুঁত মনের মানুষের দেখা কি এতো সহজে, কোন জটিলতা ছাড়াই মেলে? এও কি সম্ভব?

আর এভাবেই, কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে তাল কেটে যাওয়ার পর, ছেলেটা একটু বিরতি নিয়ে মেয়েটাকে বলে - "এসো, একটা পরীক্ষা করি। যদি আমরা আসলেই একে অপরের শতভাগ নিখুঁত মনের মানুষ হয়ে থাকি, তবে আমরা এই মুহূর্তে আলাদা হয়ে যাবার পরেও ভবিষ্যতে অবশ্যই অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে আবার মিলিত হবো। হবই হবো। আর এটা যদি ঘটে, শুধুমাত্র তাহলেই আমরা নিশ্চিত হতে পারবো যে আমরা একে অপরের শতভাগ নিখুঁত জীবন সঙ্গী ছিলাম। আর কোন সন্দেহ রইবে না এতে। তারপর আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো একে অপরের সঙ্গে। তোমার কি মত?"

"একদম," মেয়েটা বলল। "আমার মতও একদম তাই।"
তারপর তারা দুজন আলাদা হয়ে গেলো। একজন হেঁটে চলে গেলো পূবে, অন্যজন পশ্চিমে।

যে পরীক্ষায় তাদের সম্পর্কটাকে লিপ্ত করবার ব্যাপারে তারা একমত হল - সেটা একেবারে অপ্রয়োজনীয় এক পরীক্ষা ছিল। অপ্রয়োজনীয় ছিল, কারন তারা আসলেই একে অপরের জন্য একদম নিখুঁত জীবনসঙ্গী ছিল, এবং তাদের এভাবে হুট করে রাস্তায় দেখা হয়ে যাওয়ার ঘটনাটাও ছিল ঈশ্বরের আশীর্বাদস্বরূপ, অলৌকিক এক ব্যাপার। কিন্তু এটা বুঝবার মত যথেষ্ট বয়স তাদের তখনও হয় নি। তারপর ভাগ্যের নির্মম এবং হিমশীতল শৈত্যের প্রবাহ তাদের পৃথিবীর দু'প্রান্তে ছুঁড়ে দিলো কোন দয়ামায়া না দেখিয়ে।

তারপর, এক শীতে ছেলে এবং মেয়ে দুজনেই আক্রান্ত হল ভয়াবহ ঠাণ্ডা জ্বরে। সপ্তাহখানেক জমে মানুষে টানাটানির পর, আস্তে আস্তে দু'জনে সুস্থ হয়ে উঠলো পুনরায়। কিন্তু তারা ভুলে গেলো তাদের অতীত জীবনের সমস্ত স্মৃতি। যখন তারা দু'জন চোখ মেলল, তাদের দুজনের স্মৃতিপটই ডি এইচ লরেন্সের পিগি ব্যাংকের মতোই একদম খালি।

তারা দুজনই ছিল অবশ্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ তরুণ - তরুণী। শক্ত প্রচেষ্টার পর তারা সামাজিক জীবের তকমা ফেরত পেতে যেসমস্ত আবেগ অনুভূতির প্রয়োজন হয়, তা পুনরায় রপ্ত করে নিলো। ঈশ্বরের কৃপায় তারা পুনরায় সক্ষম হল অন্যান্য সুনাগরিকের ন্যায় এক সাবওয়ে থেকে আরেক সাবওয়েতে চলে ফিরে বেড়াতে, বা পোস্ট অফিসে স্পেশাল ডেলিভারির চিঠি পৌঁছে দিতে। এমনকি তাদের জীবনে আবার প্রেমও এলো, সে সব সঙ্গীরা ছিল তাদের ৭৫ শতাংশ, এমনকি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত নিখুঁত পার্টনার।

চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে একদিন দেখা গেলো ছেলেটির বয়স বত্রিশ, আর মেয়েটির ত্রিশ।

একদিন, এপ্রিল মাসের এক আলোঝরা সুন্দর সকালে, এককাপ কফি হাতে দিনটির শুভসূচনা করবার উদ্দেশ্যে ছেলেটি হেঁটে চলছিল পশ্চিম থেকে পূব দিকে, আর মেয়েটি এক স্পেশাল ডেলিভারির চিঠি পোস্ট অফিসে ফেলবার জন্য হেঁটে চলছিল পূব হতে পশ্চিমে। হাঁটতে হাঁটতে তারা দুজন এসে মিলিত হল টোকিওর হারাজুকু মহল্লার সংকীর্ণ সড়কে। তাদের ফেলে আসা জীবনের সবচে আলোকোজ্জ্বল এক দিনের প্রায় মুছে যাওয়া স্মৃতি তাদের ধূসর স্মৃতিপটে আবছাভাবে উঁকি দিয়ে গেলো। দুজনেই নিজ নিজ বুকের মাঝে এক চাপানউতোর অনুভব করলো। তারা এটা টেরও পেলো যে -
মেয়েটা তার জন্যে শতভাগ নিখুঁত জীবনসঙ্গী।
ছেলেটা তার জন্যে শতভাগ নিখুঁত জীবনসঙ্গী।

কিন্তু অতীতের স্মৃতি ছিল অনেক দূরের, এবং অস্পষ্ট। তাদের চিন্তায় আর সেই চৌদ্দ বছর আগের স্বচ্ছতাও ছিল না। কাজেই, বিনা বাক্যব্যায়ে তারা একে অপরকে অতিক্রম করে মিশে গেলো যে যার উল্টোপাশের জনারণ্যে। হারিয়ে গেলো চিরতরে।
কি শোকভারাতুর কাহিনী, তাই না?

হ্যাঁ, এটাই। ঠিক এ কথাগুলোই বলা প্রয়োজন ছিল আমার, সেই মেয়েটিকে।

(হারুকি মুরাকামির 'দা এলিফেন্ট ভ্যানিশেস' গল্প সংকলন থেকে জে রুবিনের ইংরেজি অনুবাদ থেকে আমার করা বাংলা অনুবাদ

মুরাকামির ১০টি গল্প ও গল্পের খোলনলচে সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধসহ আমার অনুবাদগ্রন্থ - মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প )


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের প্রতি একটি সতর্ক বার্তা

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০০

অতীতে গরুর মাংসে হাড় বেশি হওয়ার জের ধরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে দেখেছি,
.
ও ভাই মুজে মারো মুজে মারো নেহি মাজাক হ রাহে
.
ঢাল-সড়কি,টেঁটা-বল্লম, গুলতি, লাঠিসোটা, ইট পাটকেল নিয়ে তারা দলে দলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা কেন শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করলো?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১১



ব্লগে কে কে বলেন, আমেরিকা শেখকে হত্যা করেছে? খুব বেশী ব্লগার ইহা বলেন না; তারা শেখের দুর্নীতি, আওয়ামী লীগের দোষ টোষ নিয়ে বলেন যে, কিছু বিপথগামী সৈনিক শেখকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় বিএসএফের বর্বরতা: পঞ্চগড় সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২১

আরেকটি নিরীহ প্রাণের বলিদান

আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আনোয়ার হোসেন নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৭

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

এতো সোজা!
চাইলেই কেউ কোনো দেশ দখল করে নিতে পারে না- তা সে যতই শক্তিধর দেশ হোক। বড়ো, শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেই যদি ছোট এবং দুর্বল দেশকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসো বসো গল্প শুনি

লিখেছেন শায়মা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১২


ছোট থেকেই আমি বকবক করতে পারি। তখনও আমি গল্পের বই পড়তে শিখিনি, তখনও আমি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে পারতাম। আর আমার সে সব গল্প শুনে বাড়ির সকলে হাসতে হাসতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×