কয়েকদিন আগে গুরুতর অসুস্থ ছোট ভাইকে সিলেট নিয়ে যাচ্ছি এম্ব্যুলেন্সে করে, আমার জীবনে এটা দ্বিতীয় বার এম্ব্যুলেন্সে উঠা। এর আগে উঠেছিলাম প্রায় ১২ বছর আগে মামীর জন্য, যিনি আমার আরেক মা, এপ্যোলো হসপিটালে মামীর অপারেশনের পরে একবার অবস্থা চরম মাত্রায় খারাপ হয়ে গিয়েছিল তখন সে এম্ব্যুলেন্সে আমি ও ছিলাম। কতটা আতঙ্কের হতে পারে সময়টা তা যাদের অভিজ্ঞতা আছে বুঝতে পারেন। যাই হোক এর পর মামী আল্লাহর রহমতে সহি সালামতে এখনো সুস্থ আছেন।
সকাল থেকেই আমার ভেতরে উৎকণ্ঠা যেভাবেই হোক আমি এম্ব্যুলেন্সে যাবনা, মামা আর আমার খালাত ভাইকে দিয়ে পাঠিয়ে দেব আর আমি বাসে করে যাব। এম্ব্যুলেন্সে আমার বিরাট ভয়। মনে মনে এই পরিকল্পনাই করতেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তা হয়নি, আমি সেই এম্ব্যুলেন্সেই যাচ্ছি, অগোছালো ভাবে যাত্রা। বাসা থেকে পানি ও নিইনি, গাড়ি ছাড়ার একটু পরে মামা বলল পানি নেয়া দরকার, তাই এক জায়গায় দোকান দেখে থামাতে বললাম, এক বোতল পানি নিয়ে পাঁচশ টাকা ভাংতি দিল দোকানদার, আবার জিজ্ঞেস ও করল রোগীর কি অবস্থা, যাই হোক পানি নিয়ে এম্ব্যুলেন্সে উঠতে যাব দেখি এক খোঁড়া ভিক্ষুক দাঁড়িয়ে আছে পাশে, আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, অনেক অসুস্থ কি? বললাম হ্যা, ভাবলাম ভিক্ষা চাইবে, কিন্তু না সে আমকে অবাক করে দিয়ে বলল, দোয়া করি যেন সুস্থ হয়ে যায় বলে সে ক্রাচ দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে গেল।
ভাল লাগল এই আন্তরিক নিঃস্বার্থ মমত্ববোধ।
রাস্তার অন্যান্য যানবাহন যে যেভাবে পারে সাইড দিল। আমরা তখন নবীগঞ্জের রাস্তায় এদিক সেদিক গাড়ি, একটা কলেজের ছাত্র সামনে দাঁড়িয়ে গেল কিছু গাড়ি থামিয়ে কিছু পাস করে আমাদের রাস্তা করে দিল, হাতের ইশারায় যেতে বলল, তারপর আর পেছন ফিরে তাকালো না।
ভাল লাগল মানব সেবার এই মানসিকতা।
এই পথ জুড়ে কত মায়া মানবিকতা আর ভালবাসা এতচ এ পথেই প্রাণ যায় বেঘোরে, আরও সচেতনতা দরকার আমাদের, জীবন অনেক মূল্যবান।
আমাদের গাড়ি মোটামুটি গতিতে চলছে, ড্রাইভার কিছুটা সচেতন, তবে ফোন আসলেই কিছুটা সচেতনতার অভাব দেখা দিচ্ছে সেটা প্রকট না হলেও এমন টা করা উচিত না, একটু পর পর তার কল আসছে সবই হাসপাতাল রোগী সম্পর্কিত। কল আসতেই রিসিভ করেনা, রাস্তা একটু ফাঁকা দেখে তখন রিসিভ করে, যাই হোক দুর্ঘটনা বেশি সময় নিয়ে আসেনা, কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র, বেশি জরুরী হলে একটা হেডফোন ব্যবহার করলেই হয়, কিছুটা হলেও রক্ষা হবে, একহাতে তো আর ড্রাইভিং করা লাগবেনা, কয় টাকাই বা লাগে একটা হেডফোন কিনতে। নয়তো দেখা যাবে সেও কোন একদিন এম্ব্যুলেন্সের শায়িত যাত্রি।
সামনে দিয়ে একটা বাইক যাচ্ছে, চালক পড়ন্ত বয়সী এক মুরুব্বী। লুঙ্গি পরে বাইক চালাচ্ছেন, ভাল কথা, উনি ঘাড় বাকা করে চালাচ্ছেন কারন ফোনে কথা বলছেন। পিচ রাস্তা ছেড়ে ঘাসের মোলায়েম রাস্তায় নেমেছেন দু একবার ছাগলের সংসার ধ্বংস করতে করতে করেন নি ছাগলগুলো ম্যাহম্যাহ করতে করতে দৌড়। কতটা জরুরী এসব কল রিসিভ করা। সময় কম হিসেব করে আমরা জীবনের আগামী সময় নষ্ট করে দিচ্ছি তা টেরই পাইনা।
যে পথ গিয়েছে জীবিকার সন্ধানে, যে পথ গিয়েছে মায়ের ঠিকানায়, যে পথ গিয়েছে বন্ধুর আড্ডায়, যে পথ গিয়েছে সন্তানের হাসি মাখা মুখে, সে পথ হোক আনন্দের সে পথ হোক নিরাপদের।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪