somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবুবুল আজাদ
কেমন জানি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী,ভালবাসি বই পড়তে,তার চেয়েও বেশি ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে,আর কবিতা সে তো টানে আমায় অদৃশ্য সূতোয়।ঘুরেছি পৃথিবীর বহু দেশ, তবুও মন ভরেনি, আবার ও বের হব কোন একদিন পৃথিবীর পথে প্রান্তরে, আর হব আমার লেখা লেখির ফেরিওয়ালা।

বাবা একটা সাইকেল কিনে দিবেন হ্যা দেব আরও বড় হও, বড় হবার কি দরকার একটা ছোট সাইকেল কিনে দিলেই তো হয়

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাবা একটা সাইকেল কিনে দিবেন হ্যা দেব আরও বড় হও, বড় হবার কি দরকার একটা ছোট সাইকেল কিনে দিলেই তো হয়।
এই হয় আর কোন দিন হয়নি। বাবা সাইকেল কিনে দেবার প্রতিশ্রুতি রাখেন নি। ১৯৯০ সাল, তখন আমাদের বাসায় একটা ফনিক্স সাইকেল ছিল তখন আমার উচ্চতা এর চাকার থেকেও কম ছিল, কিন্তু স্বপ্ন ছিল ওই নরম সিটের উপর, আমার সেখানে ওঠা হয়নি, সব স্বপ্ন পূরণের জন্য হয়না, কিছু অধরা থেকেই যায়।
ছোট বেলায় আর সবার মতই আমার একজন গৃহশিক্ষক ছিলেন, উনি বেশ দূর থেকে যাতায়ত করতেন, আমরা থাকি যশোর ক্যান্টনমেন্ট এ। কয়েকমাস আমাকে পড়ানোর পর স্যার জানালেন যে উনি আসতে পারবেন না আর,
আমার বাবা বললেন কেন? স্যার বলল যে উনার বড় ভাইয়ের সাইকেল নিয়ে উনি আসতেন আমাকে পড়াতে, তার ভাই একটা কাজ পেয়েছে যেটা কিনা বাড়ি থেকে অনেক দূরে, সে সাইকেল নিয়ে যাবে, এ জন্য সাইকেল ছাড়া তার পক্ষে এতদুরে আসা সম্ভব না।
আমার বাবা শুনলেন বলে দিলেন কাল যেন একটু কষ্ট করে হলেও আসে, বাবা এর মধ্যেই অফিসের একজন কে দিয়ে একটা নতুন সাইকেল কিনে আনালেন, পরদিন বিকালে স্যার আসলেন, যথারীতি আমার পড়া শেষ করলেন, এরপর যাবার সময় বাবা কে জিজ্ঞেস করলেন কি জন্য আসতে বলেছেন, বাবা হাতে একটা সাইকেলের লম্বা তালা আর চাবি ধরিয়ে দিয়ে বললেন নিন সাইকেল বারান্দায় রাখা আছে নিয়ে যান, এটা আপনার জন্য কেনা হয়েছে।
স্যারের চোখ মুখ দেখে মনে হল এখন ই কেঁদে ফেলবে। এমন খুশি মনে হয় উনি জীবনেও কোনদিন হন নি। নিরবে চোখের পানি মুছলেন।
আমার বাবা এমন ই এক মানুষ ছিলেন, দিনরাত মানুষের খুশি কিনতেন। টাকা পয়সা তার কাছে কখনোই বড় ছিলনা মানবিকতা থেকে।
পাড়ার মোড়ের সাইকেল মেরামতের দোকান দেখতে আমার খুব ভাল লাগত, আমি মগ্ন হয়ে দেখতাম একটা স্ট্যান্ডের উপর চাকা রেখে কেমনে ঘোরায়, গ্রিজ লাগায় কি চমৎকার চাকা ঘোরে, আমি মাঝে মাঝে টাকা জমিয়ে সাইকেলের পুরনো বিয়ারিং কিনতাম, স্পোক কিনতাম ছোট বেলায় অনেকেই এমন কিনত যাদের ছোটবেলা গ্রামে অথবা মফঃস্বলে কেটেছে। এ এক অন্যরকম আনন্দ আমরা লাঠিতে বিয়ারিং লাগিয়ে পাড়াময় ঘুরতাম, নানা বাড়ি গেলে তো কথাই নেই।
ক্লাস টু তে উঠার পরে আমরা হবিগঞ্জ চলে আসি, বাবার কাছে বায়না আমার একটা সাইকেল লাগবে, বললেন ক্লাস থ্রিতে উঠলে কিনে দেবেন, আমি টু পার করে থ্রিতে, বাবা ব্যবসায়ের নানা কাজে ব্যাস্ত, আমার সাইকেল তো আর আসেনা। এরপরে বললেন ফোরে উঠলেই কিনে দিবেন, যাই হোক আবারো নতুন স্বপ্নের জালবোনা।

আমার কাজিন শরীফ আর তার লাল সাইকেল আহারে কত জালাইছি তারে, সে আমার বাসায় আসত আর আমি তার সাইকেল নিয়ে হাওয়া।
আমার এই স্বপ্ন গুলো অন্যের প্যাডেলেই শহরের রাস্তার অলি গলি ঘুরেছে। কখনো কলাপাতা কখনো কারো দেয়ালের উপর দিয়ে ঝুলে পরা বাগান বিলাস ছিঁড়ে ছিঁড়ে পথ ঘুরেছি, ফোরে উঠার পরে বাবার অসুস্থতা বেড়েই চলেছে, ঢাকায় নেয়া হল পিজি হাসপাতালে, সেখান থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরলেন, আমার বায়নার কথা বলতে ইচ্ছে করে না, বাবার মলিন মুখ দেখে, অসুস্থতা মানুষ টা কে একদম ঝিমিয়ে দিয়েছে, যে মানুষটার ভয়ে সবাই কাঁপত আজ মানুষ টা কেমন যেন হয়ে গেছেন, ততদিনে আমি সাইকেল চালানো শিখে গেছি, কিন্তু বলার মত আর কোন সাহস পাইনা।
কেঁদে বালিশ ভেজানো রাতগুলো আমার ইচ্ছেগুলো শুকিয়ে দিচ্ছে, শৈশবের স্বপ্ন গুলো বড্ড অভিমানী হয়। পিজি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার দুই মাসের মাথায় আমার বায়না সাথে নিয়ে বাবা চলে গেলেন চিরতরে এমন জায়গায় যেখান থেকে কোন সাইকেল কিনে দেয়া সম্ভব না।
আমার আর সাইকেল কেনা হয়নি।

পাশের জায়গা টাতে একচালা টিনের ঘর, কিছু গার্মেন্টস কর্মী আর দিনমজুরদের বসবাস, আমি বাসায় ফিরছি এমন সময় একটা ছোট বাচ্চা ছেঁড়াফাঁড়া কাপড়ে একটা ভাঙ্গা সাইকেল চালাবার চেষ্টা করছে, কোনমতে এক পা দিয়ে এদিকে উঠলে ওদিকে আবার ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলছে, আমাকে দেখে বলল এট্টা ঠেলা দিবেন, বললাম তা না হয় দেব কিন্তু তুমি এই সাইকেল কই পেলে, বলে আব্বায় কিন্না দিছে, আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, আমার শৈশবের স্বপ্ন জীর্ণ দশায় একদম জীবন্ত চোখের সামনে। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, ওরে বসিয়ে দিলাম ঠেলা, সে ওই ওই চলছে বলে কি যে খুশি।

এখন চাইলেই একটা সাইকেল কেনা যায় কিন্তু সে স্বপ্নটা যে আর নেই, স্বপ্নের আলনা ভেঙ্গে গিয়েছে, মেরামতের কোন ইচ্ছে জাগে না।
এই ছোট্ট ছেলেটার মত হৈহৈ করে সাইকেল চালাতে পারিনি কখনো, পারিনি কখনো আমার স্যারের মত সাইকেল পেয়ে চোখের পানি মুছতে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×