somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম ইস্পাহানি কলেজে অনিয়মের রাজত্ব

২৯ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চট্টগ্রাম ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজ একটি সমন্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ এ প্রতিষ্ঠানটিতে একই সাথে স্কুল ও কলেজ রয়েছে। ইস্পাহানি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের উচ্চতর গণিত না থাকায় ঐ শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজে ভর্তি হতে পারে না। নবম শ্রেণীতে উচ্চতর গণিত নিতে বিভিন্ন বাধা সৃষ্টি করা হয়। এ কলেজে শিক্ষক সংকট রয়েছে। কলেজের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষক নেই। প্রায় প্রতি বিষয়ে মাত্র একজন করে শিক্ষক। মাত্র একজন করে শিক্ষক হওয়ায় তারা আধিপত্য বিস্তার করে রাখেন। কোনো বিষয়ের জন্য নেই পৃথক ডিপার্টমেন্ট। অন্যান্য কলেজে যেখানে উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান একসাথে পড়ানো হয়, এ কলেজে ১ম বর্ষে উদ্ভিদবিজ্ঞান ও ২য় বর্ষে প্রাণিবিজ্ঞান পড়ানো হয়। এই দুটি বিষয়ের জন্য নেই পৃথক শিক্ষক ও পৃথক ল্যাব। ব্যবহারিক ল্যাবে নেই প্রয়োজনীয় উপকরণ। ফলে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। ব্যবহারিক এর জন্য নেই প্রদর্শক। এ কলেজে পরীক্ষার রুটিন দেয়া হয় পরীক্ষার এক দিন আগে। বোর্ড পরীক্ষায় যেখানে ৭৫ এ পরীক্ষা হয়, এখানে ১০০ তে পরীক্ষা হয়। বোর্ড পরীক্ষায় যেখানে পাস নম্বর ২৫, এখানে পাস নম্বর ৪০। ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য পাস করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। অন্যান্য কলেজে যখন পুরোদমে ২য় বর্ষের ক্লাস চলে, এ কলেজের শিক্ষার্থীরা সে সময় ১ম বর্ষ চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়। অর্থাৎ ১ম বর্ষের সেশন দীর্ঘায়িত করা হয়। ইস্পাহানি কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান পরীক্ষাগার নেই, জীববিজ্ঞান পরীক্ষাগার নামে শুধু একটাই পরীক্ষাগার আছে। প্রথম বর্ষে পরীক্ষাগারে নেওয়া হয় না, শুধু দ্বিতীয় বর্ষে নেওয়া হয়। কারণ কলেজ পর্যায়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের পরীক্ষণ করার জন্য সেখানে কোনো উপকরণ নেই।

এ কলেজের গণিত শিক্ষক মুজিবুল্লাহ তার নিজের লেখা জ্যামিতি ও ক্যালকুলাস বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে যা বাজারে অপ্রচলিত। তার বইয়ে তার পরিচয় কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। কিন্তু সহকারী অধ্যাপক দূরের কথা, এ কলেজে গণিত বিভাগ কেন, কোনো বিষয়েরই বিভাগ নেই। এছাড়া তিনি তার ব্যবসায়িক পার্টনারের লেখা অনুমোদনহীন বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতি এবং বলবিদ্যা ও বিচ্ছিন্ন গণিত বই কিনতে বাধ্য করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এ বইসমূহ ইস্পাহানি কলেজ ছাড়া অন্য কলেজে পড়ানো হয় না। তার এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনারের লেখা বই ছাড়া অন্য বই আনলে তিনি ছিড়ে ফেলেন এবং গার্ডিয়ান কল করেন। শিক্ষার্থীরা ২য় বর্ষে উঠার পর তিনি ১ম বর্ষের ব্যবহারিক শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা টেস্ট পাসের পর তিনি ২য় বর্ষের ব্যবহারিক শুরু করেন। একজন ছাত্রের বহু কষ্টে লেখা ব্যবহারিক খাতা ছিড়ে ফেলতে তিনি দ্বিধা করেন না। তিনি কলেজের পরীক্ষায় নম্বর মাইনাস করার এক অদ্ভূত, যন্ত্রণাদায়ক প্রথা চালু করেছিলেন। তিনি ব্যবহারিক খাতা স্বাক্ষর করতে গড়িমসি করেন, অথচ বলেন, সময়মত স্বাক্ষর না করালে তিনি পরে সমগ্র খাতায় মাত্র একটি স্বাক্ষর দিবেন। এ কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মাধ্যমিকে উচ্চতর গণিত ছিল না, অথচ তিনি অনেক অঙ্ক (সেট, ফাংশন, ভেক্টর) না করিয়ে তোমরা এগুলো মাধ্যমিকে উচ্চতর গণিতে করে এসেছ বলে নিজের দুর্বলতা ঢাকতে চান। তিনি প্রাইভেট পড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের ফেল করান। মুজিব শিক্ষার্থীদেরকে গণিত বাদ দিতে উৎসাহিত করে, অর্থাৎ না নিতে নিরুৎসাহিত করে। আবশ্যিক নিলে ঐচ্ছিক করতে বলে। মুজিব ২০১০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারিক খাতা জমা নিয়েছিল ২০০৯ সালের টেস্ট পরীক্ষার পর, ফেরত দিয়েছে এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষার এক দিন আগে। এ কলেজে তার সহকর্মী একজন শিক্ষক তার সম্পর্কে বলেন, “মুজিবুল্লাহ ছাত্রদের ফেল করাতে পছন্দ করে।” তিনি ২০০৯ সালের টেস্ট পরীক্ষার কয়েক দিন পূর্বে কলেজের ২য় বর্ষের দুইজন শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে কলেজ ছাড়তে বাধ্য করেছেন। তিনি কলেজের অভ্যন্তরীণ ও বোর্ডের পরীক্ষায় পরীক্ষার হলে অসহযোগিতা করেন, রূঢ় ব্যবহার করেন। তিনি কলেজের অভ্যন্তরীণ ও বোর্ডের ব্যবহারিক পরীক্ষায় হয়রানি করেন। তিনি তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে শিক্ষার্থীদের গার্ডিয়ান কল করে দুর্ব্যবহার করেন ও অপদস্থ করেন। তিনি গার্ডিয়ান কল করে তাদেরকে নিজের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা দেন যেন তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের তার কাছে পড়তে পাঠান। তিনি শিক্ষার্থীদের অপমান করে ক্লাসে সময়ক্ষেপণ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করেন। উল্লেখ্য, তিনি শিক্ষার্থীদের হয়রানি করলেও শুধু ছাত্রীদের পড়ান। মুজিবের কাছে যারা ভর্তি হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রচুর গণিতে ফেল করেছিল।

এ কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ওমর হায়াত খান প্রাইভেট পড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের ফেল করান। ২০০৮ সালের ১ম বর্ষের ১ম সাময়িক পরীক্ষায় এক ছাত্রীর খাতা গায়েব করে ফেলেন। তিনি অবতরণিকা নামে একটি নোট কিনতে বাধ্য করেন এবং এখান থেকে প্রশ্ন করেন, যা উচ্চ মাধ্যমিক সিলেবাস তো দূরের কথা, বোর্ড অনুমোদিত পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের কোনো লেখকের কোনো লেখকের বইতে নেই। তার বিরুদ্ধে ফলাফল জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ আছে। তিনি কয়েক বছর পূর্বে ক্লাস টেনের টেস্টের প্রশ্ন ফাঁস করেছিলেন যা সে সময়ে চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি কলেজের অভ্যন্তরীণ ও বোর্ডের ব্যবহারিক পরীক্ষায় হয়রানি করেন। এইচএসসি ২০০৯ এ তিনি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় প্রচন্ড হয়রানি করেন এবং শিক্ষার্থীদের থেকে জোরপূর্বক টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সরাসরি তার কাছে ভর্তি হতে বলেন। তিনি প্রাইভেট পড়ানোর জন্য নিজেই শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে হাজির হন এবং মোটা অঙ্কের (৫০০০-৮০০০) টাকা দাবি করেন। কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে তিনি পড়ালেও আরো টাকার লোভে তিনি ঐ শিক্ষার্থীর বাসায় গিয়ে পড়ানোর জন্য ঐ শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে দেন। তিনি কিছু শিক্ষার্থীদের দ্বারা ব্যক্তিগত কাজ করান। দেখা যায়, যেসব শিক্ষার্থী তার ব্যক্তিগত কাজ করে দেয়, তারা কঠিন প্রশ্নেও বরাবরই ভাল নম্বর পাচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের থেকে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকেন এবং শিক্ষার্থীদের টাকায় বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজ করান। তিনি কলেজের ব্যবহারিক ল্যাবে তার প্রাইভেট ছাত্রদের পড়ান। তিনি অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করে ক্লাসে সময়ক্ষেপণ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। ২০১০ সালের এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষার আগের দিন হায়াত শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক প্র্যাকটিস করতে দেয়নি। উল্লেখ্য, তিনি শিক্ষার্থীদের হয়রানি করে প্রাইভেট পড়ালেও ছাত্রীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে তার বিশেষ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।

শিক্ষার্থীরা মূলত এ দুজন শিক্ষকের কাছে জিম্মি।

ইস্পাহানির প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং বিগত বছরসমূহে যেসব কলেজের শিক্ষার্থীরা ইস্পাহানি কলেজ কেন্দ্রে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছে তাদের থেকে এসব অভিযোগের সত্যতা জানা যাবে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×