শুধু আমি না পাশের বাসার অমুক সমুক তমুক থেকে শুরু করে দুই চার মাইল দূরের বন্ধু যারা যারা ফেইল করতো তাদের নামের তালিকা করে বাসায় নিয়ে যাওয়া পাশ করার চেয়ে কম কষ্টের না ।
.
সেটাও কোন সমস্যা না তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে কোন এক ক্লাশে একবার কেবল মনে হয় আমি ই ফেইল করেছিলাম । দোস্ত আমি শেষ বলে যে বন্ধু আকুতি করে আমার খাতা দেখে দুটো উত্তর কপি করেছিলো সে ও সেবার পাশ করে গেছিলো ।
.
তখন থেকে একটা জিনিস বুঝলাম, ফেইল হলো বঙ্গবন্ধুর সেই জ্বালাময়ী ভাষণের মতো, দাবায়া রাখতে পারবা না ।
.
সুনীল বেঁচে থাকলে বলতেন, কেউ ফেইল করেনি । কেউ ফেইল করেনা । পাশের বাসার জরিনা বেগম বলেছিলো সে নিশ্চিত ফেইল করবে । কথা রাখেনি জরিনা । এখনো তার বুকে কেবল পাশের গন্ধ ।
.
রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসার সময় পোস্টারে লেখা দেখলাম, নাম্বার ওয়ান ফেল্টুস খান । যে কোন কাজে নাম্বার ওয়ান হওয়ার এই এক সুবিধা । পরে ভাল ভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম এটা সাকিব খান লেখা ।
.
থাক সে কথা, সেদিন বুঝলাম দশে মিলে করি ফেইল বেপারটা কতটা চমৎকার ছিলো । একলা ফেইল করার মতো বিড়ম্বনা আর নেই ।
.
সেই প্রথম খেয়াল করলাম, যে রাবেয়া ম্যাডাম দুদিন আগে আমার নাম জানতো না তারপর থেকে কখনো আমার নাম ভুলেনি । আমি আইফেইল টাওয়ারের মতো ল্যান্ডমার্ক হয়ে গেলাম । নিজেকে সেলেব্রেটি মনে হতে লাগলো ।
.
আরো খেয়াল করলাম ক্লাশের ক্রাশও আমার দিকে দেখে মিটিমিটি হাসছে । ও লা লা ও লালা…. আরে বোম্বা আরে বোম্বা ।
.
বরাবরের মতো বাসায় আসলাম । এই প্রথম লজিং স্যার আগেই জেনে গেছে আমি একমাত্র ফেইল করেছি । জানার পরও পাল্টা প্রশ্ন করে যাচ্ছে, অমুক তমুক সমুক ফেইল করেনি? জরিনা পাশ করেছে? দুই চার মাইল দূরের রহিম করিম সেলিম? আমি শুনেই যাচ্ছি । কেউ ফেইল করেনি বলে কোন অজুহাতও নেই । হঠাৎ সব প্রশ্ন থামিয়ে উত্তর দিলাম, না স্যার আমি ই একমাত্র । এই প্রথম স্যার বুকে টেনে বললেন, সাবাঁশ বেটা । মাঝে মাঝে জীবনের দেওয়া বাঁশটা এভাবে হজম করে নিতে হয় । কিন্তু কোন অজুহাত যে দেখালে না সেটাই বড় কথা ।
.
কেউ কিছু করে নাই, করেনি, করেনা তো কি হয়েছে । আমরাই হবো একমাত্র ।