অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম বিজ্ঞান বিষয়ক একটা ব্লগ লিখবো।
বিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের সবারই মোটামুটি একটা ধারণা আছে। একটা কথা না বললেই নয় যে বিজ্ঞান ছাড়া বেচেঁ থাকা অচল। তবে এই বাস্তবতা সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা পরিচিত। বিজ্ঞান যে কোনো বিষয় নয় (যদি ও বিজ্ঞান বিভাগ বলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পরিচালিত হয়)তা আপনি এর নাম বিশ্লেষণের মাধ্যমেই জ্ঞাত। তাই আপনি এই বিষয়ের পন্ডিত (সত্যিকার ভাবে এই বিপুল জ্ঞান ভান্ডারের একছত্র মালিক হওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।) না হলে ও একে জটিল না ভেবে এর কিছু রস আস্বাদন করতে পারেন যাতে আপনি অন্তত এতটুকু জানেন যে কেন ও কি কারণে আপনি পৃ্থিবীতে আছেন।
এবার মূল বিষয়ে হানা দিই।(এখন মূল বিষয়!! তো এতক্ষন কি করছিলেন? আমাদের মাথা খাচ্ছিলেন!
না রে পাঠক বন্ধুরা, আমি তো আপনাদের এই ব্লগটা পড়ার জন্য সাহস যুগাচ্ছিলাম।
তবে সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরণ ঃযারা বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শি তাদের জন্য উপরের মন্তব্যটি নহে।তবে এক্ষেত্রে আমি পারদর্শি শব্দটা এমনিতেই ব্যবহার করিনি!)
আমি আপনাদের(মানে মানুষের; (আরে এতে ভয়ের কিছু নেই আমি ও মানুষ! একটু গম্ভীরতার ভাব কাটানোর জন্য ঠাট্টা করছি।) অস্তিত্ব, পারিপার্শিকতা ও এই অপার মহাবিশ্বে আপনার(ঐ) অবস্থান তুলে ধরছি।
এটা শুনে ঘাবরাবেন না; ম্যা হুঁ না!
তো চলুন শুরু করা যাক।
আমাদের প্রকৃ্তি এক জটিল বিষয়। এর রহস্যের যতই জট খুলি যেন ততোই জট লাগে! তাই এটা বলে দেয়া যায় যে, এর রহস্যের জট খুলা কখনো সম্ভব নয়।( এটা আপনি(লেখক) কিভাবে বললেন? আপনি বিজ্ঞানী নাকি! আরে বিজ্ঞানী যে নই তা তো আমার কাজ দেখেই বুঝছেন।তবে বিজ্ঞানী না হলে কি হবে বিজ্ঞান নিয়ে গুতাগুতি তো করি!)
আমি কোনো কাহিনী বলতে চাচ্ছি না কারণ মূল বিষয় বুঝতে বিজ্ঞানের ইতিহাস জানা নিশপ্রয়োজন।
এখানে বিজ্ঞানের যে শাখার বিস্তৃতি করছি তাকে আমরা বলবো পদার্থ বিজ্ঞান(।এই মহাবিশ্বে আসলে সবই পদার্থ।তাই অপদার্থ বলতে কিছুই নেই!! তবে অপ-পদার্থ বা কুপদার্থ থাকতে পারে(দার্শনিক চিন্তায়)।)
আমরা সবাই জানি আমাদের মহাবিশ্ব শুরু হয়েছে এক বিরাট বিস্ফোরনের মাধ্যমে।এই বিস্ফোরনকে বলা হয় “মহাগর্জন”।
( মহাগর্জন হল একটি তত্ত্বের নাম যাকে ইংরেজিতে বলা হয় “Big bang” যার মধ্য দিয়ে সৃষ্টির পথচলা।)
এই বিরাট বিস্ফোরনের পর পরই কিন্তু কোনো কিছু সৃষ্টি হয়নি।এর পরে এক বিরতি চলে। ( একে বলা হয় “মহাজাগতিক অন্ধকার যুগ”)।
এই বিরতির কারণ কি? কারন হল বিস্ফোরনের পর সব পদার্থ বেশ গরম অবস্থায় ছিল।এই গরম অবস্থাকে পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় “প্লাজমা” অবস্থা বলা হয়( অর্থাৎ পদার্থের চতুর্থ অবস্থা। নক্ষত্রদের অভ্যন্তরে উচ্চতাপমাত্রায় পদার্থ এই অবস্থাই থাকে।আর পদার্থের বাকি তিনটি অবস্থা তো জানেনই) তো এই মহা গরম অবস্থা আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে শুরু করে এবং বিভিন্ন জায়গায় মহাকর্ষ নামক আকর্ষনজনিত বলের কারনে পদার্থ ঘনীভূত হয়ে যখন এর অভ্যন্তরে তাপমাত্রা যতেষ্ট উওপ্ত হয়ে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া আরম্ভ করে তখন তাদের মহাকর্ষজনিত অন্তর্মুখি চাপ ও নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন বহির্মুখি চাপ সমান হয় তখনই নক্ষত্রদের জন্ম দেয়।
(দুটি বস্তু যে বলে একে অপরকে আকর্ষন করে তাই মহাকর্ষ। তবে আপনি পুরুষ/মহিলার দিকে কেন তুলনামূলক বেশি আকর্ষিত হন তার কোনো ব্যাখ্যা মহাকর্ষ তত্ত্বে নেই বলে মহামতি নিউটনের তরফ থেকে দুঃখিত।শোক করবেন না,নিউটন মারা গেছে।(কিসের শোক?(আরে; আকর্ষনের কারন না জানার শোক!))
এই নক্ষত্ররাই হল সবকিছুর প্রাণ। আমাদের সান(রবি)। আমরা জানি এর আলো, তাপ ছাড়া বাচাঁ অসম্ভব। তবে এটা জানতে হবে যে এদের ছাড়া আপনার বাচাঁ তো দূরের কথা আপনার জন্ম হওয়া ও অদৌ সম্ভব না। আপনি একটি জটিল জীবন। তাই আপনার আবির্ভাব হয়েছে অনেক কৌশলে।
এই নক্ষত্ররা প্রতিনিয়ত হাইড্রোজেন পরমাণুকে “ নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার” মাধ্যমে হিলিয়ামে রুপান্তর করে।(এটম বোমা নাম তো শুনেছেন। তার ক্রিয়ারীতি এরকমই।)
তবে এর ক্রিয়ারীতি এতটা সামান্য ব্যাপার নয়।(মানে?) কারণ এখানে ভরের যে তারতাম্য ঘটে তা আইনষ্টাইনের সূএ(e=mc^2, e=শক্তি,m=ভর,c= আলোর গতি) মতে ০.০০৬ ভাগ। অর্থা দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে যে হিলিয়াম পরমাণু হয় তার ০.০০৬ ভাগ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
এর বেশ কম হলেই ঘটবে মহাবিপদ। মানে এর চেয়ে যদি ০.০০১ পরিমান কমে বা বাড়ে তবে জটিল কোনো পদার্থ সৃষ্টিই হতো না!তার মানে আপনি ও জন্ম নিতে পারতেন না।( দূর বোকা লেখক, তখন মানুষই হতো না! আমার জন্ম তো মানব সৃষ্টির অনেক বছর পর।)
মহাজাগতিক অন্ধকার যুগের পর যে সকল নক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছিল তাদের “প্রত্নতাত্ত্বিক নক্ষত্র” বলা হয়। এরা ছিল প্রকান্ড আকারের ভয়ংকর। আমাদের রবির চেয়ে প্রায় ২০০-৩০০ গুণ বেশি ভরের।
তো একটা বিষয় সকলেই বুঝেন।(কি?)ধরুন, এক বাবা যিনি তার ছেলেকে বেশি আদর করেন তার কাছে সম্পদ যত বেশি থাকবে তার ছেলে যদি বকাটে হয় ততো বেশি খরচ করবে(সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নহে।)
বা কোনো জুয়ারি যত বেশি টাকা কাজ করে(বা অন্যভাবে টাকা পাক তা বিবেচ্য নয়।টাকা পাচ্ছে তাই বিবেচ্য) জুগাবে তোতো বেশি সে জুয়া খেলায় উড়াবে।
( এতে ও না বুঝলে “বদমাস কোম্পানি” নামক হিন্দি চলচিত্র দেখে থাকলে বুঝবেন।)
এর পরে ও না বুঝলে; বাপ আমার কিছু করার নাই, ক্ষমা চাই।
ওপরের বিষয় বুঝলে ভাল কিন্তু না বুঝলে ও সমস্যা নেই। যা বলছিলাম যারা বড় নক্ষত্র তারা তাদের ভরের কারণে মহাকর্ষ বলের চাপে নিজের সকল জ্বালানী শেষ করে ফেলবে। আর জ্বালানি শেষ হওয়া মানেই হলো তার জীবনাবসান হওয়া।
তবে এটা মানুষের মৃত্যুর মত এত সাদামাটা বিষয় নয়। একটা নক্ষত্রের মৃত্যু,কত শক্তির উৎস এই নক্ষত্র আর তারি মৃত্যু , এটা চারটি খানি ব্যাপার নয়! এর মাঝে রয়েছে অপার রহস্য।
নক্ষত্রদের জন্ম যেমন হয় বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে ঠিক তেমন মৃত্যু ও হয় বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে।একে বলা হয় “সুপারনোভা”। এ যেন মহাগর্জন এরই প্রতিকৃ্ত।
এর মাধ্যমেই ওই নক্ষত্রগুলির জীবনাবসান হয় ও তাদের দেহ ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে তার আশপাশের এলাকায়। এর থেকে আবার সবচেয়ে ক্ষতিকর রশ্মি “গামা-রশ্মি” এর দুটি বীম ছুটে যায়। অকল্পনীয় সে দৃশ্য যার স্বাদ সম্প্রতি মানুষ পেয়েছিল ১৯৮৭ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারীতে।
এমনি বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে আদি ওই নক্ষত্রগুলি মারা যায় যাদের আমরা এখনো দেখতে পাই। কিন্তু এদের মৃত্যু তে এরা একেবারে নিশ্ছহ্ন হয়ে যায় না অর্থাৎ এদের শরীর পুরো অংশ ছড়িয়ে পড়ে না বরং বাইরের আবরণটাই ছড়িয়ে পড়ে।
এখন আমাদের এগুতে হলে এদের ভেতরের ক্রীয়াকলাপ একটু বুঝতে হবে।
আমদের মহাবিশ্বে সবচেয়ে সহজ প্রাপ্য পদার্থ হল হাইড্রোজেন। মূলত মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় এটারই আধিপত্য ছিল। এটি নক্ষত্রের অভ্যন্তরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়ামে পরিণত হয় এবং ভারি হিলিয়াম নক্ষত্রের কেন্দ্রে জমা হতে থাকে।যতক্ষণ হাইড্রোজেন থাকে এটা নিরন্তর হিলিয়ামে রূপান্তরিত হতে থাকে। আমদের নক্ষত্র রবির এখনো হাইড্রোজেন আছে। এই দশাকে বা সময়কালকে নক্ষত্রের যৌবনকাল বলা হয়( ঠিক মানুষের মত; তবে এর প্রেম হয় না।)
এই হাইড্রোজেন ফুরালে হিলিয়াম বিক্রিয়া করতে শুরু করে। এভাবে একের পর এক পদার্থ সৃষ্টি ও রূপান্তরিত হতে থাকে ও প্রতিবার নব সৃষ্ট পদার্থটি নক্ষত্রের কেন্দ্রে জমা হতে থাকে। তবে এক সময় লোহা জমা হওয়ার পর এটা আর বিক্রিয়া করে না। তখন মহাকর্ষনজনিত চাপে নক্ষত্রটি সংকুচিত হতে থাকে ও এক সময় “সুপারনোভা” হয়।( এখানে জ্ঞাতব্য সব নক্ষত্রের জীবনাবসান সুপারনোভার মত বড় বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে হয় না। যেমন আমাদের রবির ভর কম বিধায় ইহার সুপারনোভার হবে না ।তবে ১.৪ গুণ রবির চেয়ে বেশি ভর হলো চন্দ্রশেকর লিমিট। এর চেয়ে বড় নক্ষত্ররা সুপারনোভার মাধ্যমে নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়। আর ৩গুণ রবির চেয়ে বেশি ভরেরে নক্ষত্ররা কৃ্ষ্ণগহবরে পরিণত হবে)
এই সুপারনোভার ফলে যে নক্ষত্রের ভস্ম ছড়িয়ে পড়ে তাতে আরো জটিলপদার্থ সোনা, রুপা গঠিত হয়। এরা কেবল সুপারনোভার ফলেই গঠিত হয় বিধায় এরা বেশ দুর্লভ ও পৃথিবীতে এদের মূল্য ও বেশি।
এভাবে নক্ষত্ররা ধংস হয়ে যে পরিমাণ ভস্ম ছড়ায় তার মাধ্যমেই নতুন তারা ও গ্রহের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ সৌ্রজগতের উদ্ভব হয়। আমাদের সৌ্রজগত ও এভাবে গঠিত হয়েছে।
আমাদের পৃথিবীই একমাত্র জটিল প্রাণ সংরক্ষণের উপযোগী কারণ এটি আমাদের নক্ষত্র রবি হতে সঠিক দূরত্বে অবস্থিত। এর চেয়ে রবির আরো কাছে গেলে দেখা যাবে উত্তাপ বেশি যেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৪০০ ডিগ্রি আর সামান্য দূরে গেলে দেখা যাবে চরম ঠান্ডা তাপমাত্রা প্রায় -২৭০ ডিগ্রির চেয়ে ও কম।
আমরা যে অক্সিজেন গ্রহন করি তাও একদা নক্ষত্রের কেন্দ্রে গঠিত হয়ে ছিল কালক্রমে তা আমদের জীবন সংগী হয়েছে যাকে ছাড়া বাচাঁ দায়( প্রেমিক/প্রেমিকাকে ছাড়া যারা বাচঁব না বলেন তারা খাটিঁ মিথ্যাবাদি! কারন আসল প্রেম তো জীবন!)
এভাবে আমরা যে পানি পান করি তা অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত যা ওই নক্ষত্র থেকেই এসেছে।
এরকম প্রক্রিয়ায় এক এক সৌ্রজগত গঠনের মাধ্যমে ছায়াপথ গঠিত হয়।
এবার যা বাকি থাকলো তা হলো নক্ষত্রেরা সুপারনোভার পরে কি হয় তা?
এটা ও ভরের ব্যাপার । হিসেব কষে দেখা যায় যেসব নক্ষত্রের ভর আমাদের রবির ভরের ৩ গুণ বেশি তারা যেন বিজ্ঞানী নিউটনের অভিশাপে এমনভাবে সংকুচিত হয় যে তার মধ্য থেকে কিছুই বের হয় না।( আমাদের চোখের কোনো আলো নেই। অন্য বস্তু হতে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আঘাত করলেই আমরা এর অবস্থিতি টের পাই।)
ফলে ওই বস্তুটিকে আমরা দেখতে পাই না। এরই নাম “কৃ্ষ্ণগহবর” বা “ব্ল্যাক হোল’’। তবে এর মহাকর্ষজনিত প্রভাব হতে এর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
এই হলেন আপনি(বা আমি বা আমরা) ও আপনার পারিপার্শিকতা। আশাকরি আপনি স্রষ্টার সৃষ্টির মাঝে নিজের অবস্থান সম্পর্কে এখন যতেষ্ট অবগত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:২২