somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তার দু’চোখ আজও স্বপ্ন দেখে

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
[sb]তার দু’চোখ আজও স্বপ্ন দেখে


ছবি ক্রেডিটঃ pixabay.com

সাবিহা স্কুল শেষে ঘরে না গিয়ে ঘরের পাশের মাঠটাতে খেলতে গেল। অর সাথে রোকনও আছে যে কিনা একই স্কুলের একই ক্লাসে পড়ে। রোকন আর সাবিহা মাঠে বসে খুনসুটি করতে লাগল।

‘আমি বড় হইয়া এত্ত বড় বিল্ডিং বানামু আসমান পর্যন্ত।’ রোকন বলল।
সাবিহা সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বলল, ‘আমি তোর চেয়ে বড় বিল্ডিং বানামু মেঘ পর্যন্ত।’
‘আমি ১০০ তালা বিল্ডিং বানামু।’ রোকন আবারো বলল।
‘আমি ২০০ তালা বিল্ডিং বানামু।’

১০০ তালা ২০০ তালা বিল্ডিং হয় কিনা ওরা জানে না তা আবার আকাশ ছোঁয় নাকি তাও ওরা জানেনা। তবুও ওদের এই প্রতিদিনকার প্রতিযোগিতা কে কত বড় বিল্ডিং বানাবে আর ঐ মেঘের দেশে মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে থাকবে। মাত্র ৭ বছর বয়সে বস্তির একটা স্কুলের ক্লাস ওয়ানে পড়ে যতটুকু কল্পনা করা যায়! ওরা প্রত্যেকদিন এই মাঠে এসে আকাশে নানারকম স্বপ্ন বুনে আর মাঝে মধ্যে মেঘের মধ্যে হাতি, ঘোড়া, পাখি কত কি দেখে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

রোকনের আজ কড়িখেলা প্রতিযোগিতা আছে বন্ধুদের সাথে তাই সে ঘরে চলে গেল ভাত খাওয়ার জন্য। সাবিহা নরম বিছানার মত ঘাসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর সাবিহার বোন ফাবিহা যে কিনা সাবিহার এক বছরের বড় ক্লাস টুতে পড়ে ওর খোঁজে এল। ওদের মা যে বাসায় কাজ করে তার মালিক ওদের নাম রেখেছিলেন। ফাবিহা বনসাই টাইপের কিছু গাছ হয় টমেটো, মরিচ ইত্যাদির তা তুলে নিয়ে এসেছে হাড়িপাতিল খেলবে বলে। এই গাছগুলোকে বনসাই বলে এটা ওরা জানেনা, কিন্তু এই ছোট ছোট টমেটো, মরিচ হাড়িপাতিল খেলায় মেছেমিছি রান্নাতে বেশ উপযোগী তা তারা জানে।

‘এই সাবিহা উঠ, খেলবিনা তুই?’
ফাবিহার ডাকে সাবিহা সাড়া দিল না। সে দিবাস্বাপ্ন দেখছে পৃথিবীর ঐ পাড়ে মেঘের দেশে বাড়ি বানিয়ে মা-বোনকে নিয়ে থাকবে অথবা খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির বাতাসে এখানে মা-বোনকে নিয়ে ঘুমাবে। ফাবিহা আবার জিজ্ঞাসা করল,
‘দ্যাখ, টমেটো মরিচ আনছি। উঠস না তুই?’
‘যা তুই, আমি খেলমু না।’ সাবিহা বিরক্ত হয়ে বলে।
সাবিহাকে না ওঠাতে পেরে অগত্যা ফাবিহা একাই চলে গেল।

ঐদিকে ঝন্টু মিয়া বস্তির মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি মাঠের বড় গাছটার পেছনে দাঁড়িয়ে সাবিহাকে লক্ষ্য করছিল। এই লক্ষ্য সে অনেকদিন ধরেই করছিল সাবিহাকে তার লোভের শিকার বানাবে বলে। আজও সে সেই সুযোগ খুঁজছে। তার সাথে আছে রফিক মোল্লা, শ্যাম দাস, ও কাসেম একই বস্তির বাসিন্দা। নেশার ঘোরে একরাতে ঝন্টু তার অসৎ উদ্দেশ্য উগড়ে দিলে এই হায়েনাদের সংখ্যা হয় চার। আজ ভাল সুযোগ দেখে ঝন্টু এগিয়ে গেল।

‘আরে সাবিহা! তুই এহানে! তোর মা তোরে ভাত খাইতে ডাকে।’
‘কি বল কাকা! মায়ে ডাকে? সাবিহা ঘুম ভেঙে বলল।’
‘হ’ তোর মা আমারে তোরে নিয়া যাইতে বলছে।’
এই বলে ঝন্টু হায়েনা সাবিহাকে কোলে তুলে নিয়ে গেল।

সাবিহাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এই কথা শুনে সাবিহার মা কাজ ফেলে এসে তন্ন তন্ন করে সাবিহাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু মেয়ের কোথাও কোন খোঁজ নেই। সাবিহার মায়ের মনে ভয় হয় তার মেয়ের কিছু হয়ে গেল না তো!

ঐ ঘটনার ৬ বছর কেটে গেছে, সাবিহার এখন ১৩ বছর বয়স। ঐ রাতেই বস্তিবাসী সাবিহাকে একটা নালায় খুঁজে পায়। ঐ পাষণ্ডরা অমানুষিক অত্যাচারের পর ওকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করে এবং মৃত ভেবে নালায় ফেলে দিয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে সাবিহা বেঁচে যায়। ওর আজও মনে আছে না বুঝে হাসপাতালের বেডে কাতরাতে কাতরাতে ও মাকে জিজ্ঞেস করেছিল-
‘আমি কি করছিলাম? ঝন্টু কাকা আর সবাই আমারে ক্যান মারল?’

এই কেনর উত্তর সাবিহা আজও বুঝতে পারেনা। সাবিহা উদ্ধারের পরে লোকেদের কানাঘুষায় থাকতে না পেরে সাবিহার মা অন্য বস্তিতে চলে আসে এবং একটি এনজিওর সহযোগিতায় সাবিহাকে এখানকার একটা স্কুলে ভর্তি করে। সাবিহার অভিযুক্তরা আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। তবুও সে ন্যায়বিচারের আশা দেখে। সাবিহা আকাশের দিকে তাকায় ওখানে এখন অ আর কিছু দেখতে পায় না, মাউন্টেন এভারেস্ট ছাড়া।

‘আরে, সাবিহা না?’

হতচকিত হয়ে সাবিহা সামনে তাকায়। এতদিন পর রোকনকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ও কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে যায়।
‘কেমন আছিস? কতদিন পরে দেখা! দ্যাখ, আসমানে হাতি, ঘোড়া, ফুল, পাখি কত কি দেখা যায়!’
সাবিহা আরেকবার আকাশে দেখে। ও দেখল সত্যি সত্যি মেঘে হাতি, ঘোড়া নানারকম ছবি দেখা যাচ্ছে। ও বুঝতে পারল তার দু’চোখ আজও স্বপ্ন দেখে!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৪০
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×